বাড়তি নম্বর সুপার, জেলা কর্তাদের |
ঝুঁকির কাজে উৎসাহ দিতে পদোন্নতির পুরস্কার স্বাস্থ্যে |
পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায় • কলকাতা |
পদোন্নতির ক্ষেত্রে এ বার বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালের সুপার এবং জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তাদের অগ্রাধিকার দেবে রাজ্য সরকার।
কেন?
কারণ, তাঁদের কাজে ঝুঁকি অনেক। তাই পদের চিকিৎসক-প্রশাসকদের জন্য পদোন্নতির পুরস্কার চালু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, কাজে ঝুঁকি থাকায় স্বাস্থ্য দফতরের কোনও অফিসার সচরাচর সরকারি হাসপাতালের সুপার এবং জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তার পদে যোগ দিতে চান না। যাঁরা ওই পদে রয়েছেন, তাঁরাও বদলি চেয়ে বা চাকরি ছাড়তে চেয়ে চিঠি দিয়ে চলেছেন স্বাস্থ্য দফতরে। ফলে ওই পদে যোগ্য লোকই পাওয়া যাচ্ছে না। ওই সব দায়িত্ব পালনে উৎসাহ দিতে চাইছে স্বাস্থ্য দফতর।
এক স্বাস্থ্যকর্তা জানাচ্ছেন, গাফিলতির অভিযোগে সরকারি হাসপাতালের সুপার ও জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তাদের মারধরের ঘটনা বেড়েই চলেছে। মাঝেমধ্যেই ওই অফিসারদের ঘেরাওয়ের মুখে পড়তে হচ্ছে। তাঁরা জেরবার হাসপাতালের পরিকাঠামো নিয়েও। প্রশাসনিক ঝামেলা সামলানোর সঙ্গে সঙ্গে রোগী ভর্তির জন্য সব সময় সর্বস্তর থেকে আসা চাপে তাঁরা নাস্তানাবুদ। এই কারণে একের পর এক সুপার ও মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তা পদ ছাড়তে চেয়ে চিঠি দিচ্ছেন স্বাস্থ্য দফতরে। সেই সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসতে পুরস্কার চালু করছে স্বাস্থ্য দফতর।
পদোন্নতির ক্ষেত্রে কী ধরনের সুবিধা পাবেন ওই সব অফিসার? স্বাস্থ্য দফতরের নতুন খসড়া পদোন্নতি বিধিতে সুপার ও মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তার দায়িত্ব পালন করা চিকিৎসকদের জন্য অতিরিক্ত নম্বরের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যাঁরা চাকরিজীবনে ওই দু’টির মধ্যে কোনও একটি পদে দায়িত্ব পালন করেছেন, তাঁদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে
অতিরিক্ত নম্বর দেওয়া হবে। যদি কোনও চিকিৎসক সুপার ও মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তা দু’রকম পদেই কাজ করে থাকেন, তা হলে তিনি পাবেন দ্বিগুণ নম্বর। স্বাস্থ্যসচিব সঞ্জয়
মিত্র বলেন, “সাক্ষাৎকারের সময় চিকিৎসকের নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা, গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনের ক্ষমতা,
প্রশাসন চালানোর ক্ষমতাসব কিছু আলাদা গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে।”
সরকারি হাসপাতালের সুপারের দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক বা জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তার দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসকেরা মনে করেন, অনেক আগেই রাজ্য সরকারের এই ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল। দক্ষিণবঙ্গের এক জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তার কথায়, “যন্ত্র খারাপ হওয়া থেকে শুরু করে ডাক্তার না-থাকার সমস্যা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের নির্দেশ বা আবদার, জনরোষ নিত্যদিন সবই সামলাতে হয় আমাদের। কিন্তু তার জন্য কোনও অতিরিক্ত সুযোগ-সুবিধা পাই না আমরা।” আর কয়েক জন হাসপাতাল-সুপার বলেন, “হাসপাতালে সুপার হলেন বলির পাঁঠা। তা হলে তিনি বাড়তি সুবিধা আশা করবেন না কেন?”
ব্লক মেডিক্যাল অফিসার এবং হাসপাতালের ডেপুটি সুপাদেরও এই সুবিধা কেন দেওয়া হবে না, সেই প্রশ্ন উঠেছে। স্বাস্থ্য দফতরের অফিসারদের অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, সুপার বা জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তাদের মধ্যে কারা দক্ষ আর কারা নন, সেই বিচার কে করবে? স্বাস্থ্যকর্তারা বলছেন, পদোন্নতির নতুন নিয়ম কার্যকর হওয়ার পরেই এর কার্যকারিতা বোঝা যাবে। পরবর্তী পর্যায়ে ব্লক মেডিক্যাল অফিসার ও ডেপুটি সুপারদের পদোন্নতির সময় অতিরিক্ত নম্বরের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে। |