জাতক শুশ্রূষায় জেলা পাচ্ছে নতুন ইউনিট |
নিজস্ব সংবাদদাতা • করিমপুর |
জেলার ১৫টি হাসপাতালে অসুস্থ নবজাতকদের জন্য চালু হচ্ছে ‘সিক নিউবর্ন স্টেবিলাইজেশন ইউনিট’। সংক্ষেপে এসএনএসইউ। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের তরফে জানানো হয়েছে, জানুয়ারি মাসের মধ্যেই পাঁচটি ইউনিট চালু হয়ে যাবে। বাকি দশটি হাসপাতালে চালু হবে মার্চ মাসের মধ্যেই। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অমিত হালদার বলেন, ‘‘অসুস্থ সদ্যোজাতদের জন্য তৈরি করা হচ্ছে এই বিশেষ ইউনিট। এর ফলে শিশুমৃত্যুর ঘটনা কমবে বলে আশা করছি। রেফারের মাত্রাও অনেক কমে যাবে। এসএনএসইউ-এর জন্য টাকাও আমরা পেয়ে গিয়েছি। কাজও শুরু হয়ে গিয়েছে পুরোদমে। জেলার গ্রামীণ হাসপাতাল ও বেশ কয়েকটি ব্লক হাসপাতালেও এই ইউনিট চালু হবে। এই ইউনিট চালু হলে জেলা হাসপাতালে রেফারের চাপও অনেক কমবে।’’
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলার বেশ কিছু হাসপাতালে প্রসূতিদের ভর্তি ও প্রসবের হার রীতিমত অবাক করার মত বেশি। কিন্তু অসুস্থ সদ্যোজাতের চিকিৎসার উপযুক্ত পরিকাঠামো সেই হাসপাতালগুলোতে নেই। ফলে জন্মের পরেই কোন শিশু অসুস্থ হয়ে পড়লে জেলা হাসপাতালে রেফার করা ছাড়া কোনও উপায় থাকে না। এ দিকে ব্লক বা গ্রামীণ হাসপাতালগুলো থেকে জেলা হাসপাতাল বেশ অনেকটাই দূরে। অনেক সময়ে রেফার করার পরে সেখানে পৌঁছতে সময় লেগে যায়। দ্রুত চিকিৎসা না পেয়ে অনেক সময়েই ওই নবজাতকদের অবস্থা আশঙ্কাজনক হয়ে পড়ে। অনেক ক্ষেত্রে মৃত্যুও হয়। এ বার জেলায় ওই ১৫টি হাসপাতালে এসএনএসইউ চালু হলে আর সমস্যা থাকবে না।
করিমপুর গ্রামীণ হাসপাতালের সুপার বিধুভূষণ মাহাতো বলেন, ‘‘এসএনএসইউ-এর জন্য আমরা ইতিমধ্যে প্রায় পাঁচ লক্ষ টাকা পেয়ে গিয়েছি। দ্রুত কাজও শুরু হয়ে যাবে। জন্মের পর থেকে প্রথম সাত দিনের মধ্যে ও সর্বোচ্চ ২৮ দিনের মধ্যে কোনও শিশু অসুস্থ হয়ে পড়লে এই ইউনিটে তাদের চিকিৎসা হবে।’’
বগুলা গ্রামীণ হাসপাতালের সুপার তুষার বিশ্বাস বলেন, ‘‘নদিয়ার যে কয়েকটি হাসপাতালে সবথেকে বেশি প্রসব হয়, বগুলা হাসপাতাল তাদের মধ্যে অন্যতম। কিন্তু অসুস্থ সদ্যোজাতের চিকিৎসার জন্য আলাদা কোনও ব্যবস্থা এখানে ছিল না। এসএনএসইউ চালু হলে সকলেই উপকৃত হবেন। জেলা স্বাস্থ্য দফতর থেকে লোক জন এসে সব দেখে গিয়েছেন। আশা করা যায় খুব শীঘ্র এখানে কাজ শুরু হয়ে যাবে।’’
বেথুয়াডহরী গ্রামীণ হাসপাতালের সুপার জীবেশচন্দ্র বাইন জানান, ‘‘প্রথম পর্বেই আমাদের হাসপাতালে এই ইউনিট চালু হবে। আমাদের এখানে কাজও শুরু হয়েছে। এসএনএসইউতে চারটি বিশেষ ধরণের শয্য থাকবে। থাকবে ওয়ার্মার এবং অক্সিজেন জেনারেটর। জন্মের পর বাচ্চারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে লো বার্থ ওয়েট ও শ্বাসকষ্টের সমস্যায় ভোগে। এত দিন এই ধরণের সমস্যা হলে নবজাতকদের আমরা রেফার করে দিতাম। এই ইউনিট চালু হলে আমরা এখানেই শিশুদের চিকিৎসা করতে পারব। পরিস্থিতি খুব জটিল হলেও অন্তত প্রাথমিক চিকিৎসাটুকু দিয়ে তারপরে সেই শিশুকে রেফার করতে পারব। এতে ঝুঁকি যেমন কমবে তেমনি শিশু মৃত্যুর মত ঘটনাও এড়ানো যাবে।’’ তেহট্টের অতিরিক্ত মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সঞ্জয় মণ্ডল বলেন, ‘‘তেহট্ট মহকুমা হাসপাতালে এসএনএসইউ-এর জন্য আলাদা ভবন ইতিমধ্যে তৈরি হয়ে গিয়েছে। অল্প কিছু কাজ বাকি। এই ইউনিটের জন্য নবজাতক সহায়িকাদেরও প্রশিক্ষণ চলছে। চিকিসকদেরও বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।’’ জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অমিত হালদারের কথায়, ‘‘এত দিন শুধু জেলা হাসপাতালে ‘সিক নিওনেটাল কেয়ার ইউনিট’ বা এসএনসিইউ থাকলেও অন্য কোথাও ছিল না। আমরা এ বার তেহট্ট ও রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালে এসএনসিইউ চালুর জন্য স্বাস্থ্যভবনে প্রস্তাব পাঠিয়েছি। অনুমোদন মিললে জেলার সামগ্রিক স্বাস্থ্য পরিষেবা অনেকটাই পাল্টে যাবে।’’ |