কলকাতায় প্রতিবন্ধীদের পাশে দাঁড়ানোর দুই কেন্দ্র নিজেরাই প্রতিবন্ধী
অভিযোগের পাহাড়ে ডিরেক্টর
সার্জনের অভাব, বরাহনগরে তাই অস্ত্রোপচারে ভরসা ভাড়ার ডাক্তার

অক্ষম পা দু’টো বাঁচাতে এক জোড়া শক্ত সমর্থ জুতোর জন্য দু’বছর ধরে ঘুরছেন আমডাঙার সরিফুল মল্লিক। এখনও মেলেনি।
• হাঁটতে, বসতে পারে না বছর তিনেকের সালাম। হরিণঘাটার বাসিন্দা শাবানা বিবি ওই ছেলের চিকিৎসার জন্য বার কয়েক গিয়েছেন। সরঞ্জাম নেই বলে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে তাঁকেও।
সরিফুল, শাবানাদের মতো আরও অনেকেই অস্থিরোগের চিকিৎসা ও কৃত্রিম অঙ্গ প্রতিস্থাপনের জন্য ছুটছেন বরাহনগরের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ অর্থোপেডিক্যালি হ্যান্ডিক্যাপড বা এনআইওএইচ-এ। সেখানে গিয়ে একটাই জবাব মিলছে, “এখন নয়। পরে আসুন।”
শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, সারা পূর্ব ভারতেরই গর্বের প্রতিষ্ঠান বলে চিহ্নিত কেন্দ্রীয় সরকারের এই হাসপাতাল। পঙ্গু ও দৈহিক প্রতিবন্ধীদের প্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচারের সঙ্গে সঙ্গে বিনামূল্যে বা কম দামে নানান সামগ্রী দেওয়াই এই প্রতিষ্ঠানের মূল কাজ। এর জন্য সাহায্যও দেয় কেন্দ্র। কিন্তু এখানকার পরিষেবা নিয়ে হাজারো অভিযোগ রোগীদের। সামাজিক ন্যায় মন্ত্রকের অধীনে আছে প্রতিষ্ঠানটি। তাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের ব্যাপারে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মুুকুল ওয়াসনিক বলেন, “অভিযোগ পেয়েছি। শীঘ্রই এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ওয়াসনিক সম্প্রতি এই হাসপাতাল পরিদর্শনে এসেছিলেন। হাসপাতালের অচলাবস্থা নিয়ে তাঁর কাছে অভিযোগ জানান প্যারামেডিক্যাল কোর্সের এক দল পড়ুয়া। তাঁরা বলেন, “প্রতিবন্ধীদের জুতো, পা, হাত-সহ নানা কৃত্রিম অঙ্গ বানানোই এই প্রতিষ্ঠানের মূল কাজ। কিন্তু যন্ত্রপাতির অভাবে দীর্ঘদিন ধরে সেগুলি বানানোর কাজ বন্ধ হয়ে আছে। ভাঁড়ারে নেই ওই সব সামগ্রী বানানোর সরঞ্জামও।” পড়ুয়ারা জানান, তিনি বিষয়টি দেখবেন বলে তাঁদেরও আশ্বাস দিয়েছেন ওয়াসনিক।
মন্ত্রীর সফরের দিনে হাজির ছিলেন আমডাঙার সরিফুলও। আচমকা কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর পা জড়িয়ে ধরেছিলেন তিনি। পরে সরিফুল বলেন, “মন্ত্রীকে তো সব বলেছি। জানি না, উনি আমার কথা বুঝেছেন কি না!”
বনহুগলিতে বিশাল জায়গা জুড়ে ওই হাসপাতাল। ঝাঁ-চকচকে দু’টো বড় বড় অপারেশন থিয়েটারও আছে। হাসপাতালেরই এক ডাক্তারের কথায়, ‘‘ওটি-তে উন্নত মানের যন্ত্রপাতিও আছে। কিন্তু ব্যবহার হচ্ছে না। সর্বক্ষণের জন্য কোনও অর্থোপেডিক সার্জন নেই।”
তা হলে অস্ত্রোপচার হয় কী ভাবে?
ওই চিকিৎসকের জবাব, “ভাড়া করা ডাক্তার দিয়ে অস্ত্রোপচার করানো হয়।” হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষও এ তথ্য মেনে নিয়েছেন। হাসপাতালের এক চিকিৎসক জানান, গত কয়েক বছরে জনা চারেক অর্থোপেডিক সার্জন বদল করা হয়েছে।
হাসপাতাল ছেড়ে আসা এক সার্জন গৌতম বসুর বক্তব্য, “ডাক্তারদের দিয়ে ম্যানেজারের কাজ করান ওই ইনস্টিটিউটের ডিরেক্টর রত্নেশ কুমার। চার বছর ধরে কাজ করার সময় দেখেছি, অস্থিবিশেষজ্ঞ সার্জন হয়েও তিনি কখনও অপারেশন থিয়েটারে ঢোকেননি!”
এটা অবশ্য স্বীকার করেননি এনআইওএইচ-এর জনসংযোগ আধিকারিক হিমাংশু শ্রীবাস্তব। তিনি বলেন, “ডিরেক্টর নিজেও অপারেশন করেন।” সেই সঙ্গেই তিনি জানান, ভাড়া করা ডাক্তার এখানে আসেন। ডিরেক্টর-ডাক্তার অস্ত্রোপচার করলে চিকিৎসক ভাড়া করতে হয় কেন? রহস্য ফাঁস করেছেন ওই হাসপাতালে কর্মরত এক ডাক্তারই। তিনি বলেন, “ভাড়া করা সার্জনই অপারেশন করেন। কিন্তু সব রোগীকেই ভর্তি করা হয় ডিরেক্টর রত্নেশ কুমারের অধীনে। তিনি ওটি-তে কাঁচি ধরে ছবি তোলেন। পরে ওই ছবি দিল্লিতে পাঠিয়ে প্রমাণ করেন, তিনি কতটা কাজের!”
এক সময় ওই হাসপাতালের রেডিওলজি বিভাগে কাজ করেছেন চিকিৎসক শান্তনু সেন। বললেন, “এক্স-রে মেশিন আছে। তবু বিপিএল তালিকাভুক্ত রোগীদেরও বাইরে থেকে এক্স-রে করিয়ে আনতে বলা হয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এক্স-রে করার জন্য টাকা নেওয়া হয়, অথচ রেডিওলজিস্টের রিপোর্ট দেওয়া হয় না।”
বছর দশেক আগে কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী থাকাকালীন প্রতিষ্ঠানটিকে বাঁচাতে উদ্যোগী হয়েছিলেন রাজ্যের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ডিরেক্টরের ‘দুর্নীতি’র ব্যাপারে অবহিত বর্তমান কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়ও। অচলাবস্থা কাটাতে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দু’জনেই তৎকালীন সামাজিক ন্যায় বিভাগের মন্ত্রী সত্যনারায়ণ জাটিয়াকে চিঠি লিখেছিলেন। কিন্তু কিছুই হয়নি।
কী বলছেন এনআইওএইচ-র ডিরেক্টর রত্নেশ কুমার?
তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে কোনও কথাই বলতে চাননি রত্নেশ কুমার। এমনকী তাঁর মোবাইলে ফোন করা হলেও সব শোনার পরে তিনি বলেন, “আমি রত্নেশ কুমার নই।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.