পড়ে আছে যন্ত্রপাতি, লোকাভাবে কৃত্রিম অঙ্গ মেলেই না নীলরতনে |
• কৃষ্ণনগর থেকে প্রায়ই নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আসেন জয়দেব হালদার। কিন্তু টানা তিন মাস কেটে গেলেও একটা কৃত্রিম পা পাননি বছর পঞ্চাশের ওই প্রৌঢ়।
• টালা এলাকার বাসিন্দা শম্পা দাস তাঁর ১০ বছরের ছেলের একটি কৃত্রিম হাতের জন্য এক মাস ধরে ঘুরছেন নীলরতন সরকার হাসপাতালে। কিন্তু সুরাহা হয়নি।
শুধু জয়দেববাবু বা শম্পাদেবী নন, একই ভাবে হয়রান হতে হচ্ছে নীলরতনের রিজিওনাল আর্টিফিসিয়াল লিম্ব ফিটিং সেন্টারে আসা প্রতিবন্ধী এবং তাঁদের আত্মীয়দের। ১৯৭৪ সালে রাজ্য সরকারের তৈরি এই কেন্দ্রটি কার্যত অকেজো হয়ে রয়েছে। অথচ এ ব্যাপারে কোনও তথ্যই নেই রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব, স্বাস্থ্য (শিক্ষা) অধিকর্তা বা সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের সুপারের কাছে।
স্বাস্থ্যসচিব সঞ্জয় মিত্র বলেন, “আমার কোনও ধারণাই নেই। এই বিষয়ে স্বাস্থ্য (শিক্ষা) অধিকর্তা যা বলার বলবেন।”
কিন্তু বিষয়টি সম্পর্কে কিছু জানেনই না স্বাস্থ্য (শিক্ষা) অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে তিনি খোঁজ নেবেন বলে জানিয়েছেন।
আর নীলরতন সরকার হাসপাতালের সুপার স্বপন সাঁতরা কী বলছেন?
সুপার বলেন, “আমি মাত্র কয়েক মাস আগে এই হাসপাতালের দায়িত্ব নিয়েছি। এখনও পর্যন্ত রিজিওনাল আর্টিফিসিয়াল লিম্ব ফিটিং সেন্টারের কোনও কাগজপত্র দেখেই উঠতে পারিনি। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব খোঁজখবর নেব।”
|
দামের আকাশপাতাল |
কৃত্রিম অঙ্গ |
সরকারি দর |
বাজারের দর |
বিলো নি বেল্ট |
২৬৪৯ |
১২০০০ |
ফোর আর্ম গার্ড |
২৩০ |
১০০০০ |
থাই গার্ড |
৬৪০ |
২০০০ |
লেগ গার্ড |
৩৮০ |
২৫০০ |
|
রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, প্রতিবন্ধীদের অল্প দামে কৃত্রিম অঙ্গ প্রতিস্থাপনের জন্য নীলরতনের স্ত্রীরোগ বিভাগের বেসমেন্টে এই কেন্দ্রটি খোলা হয়েছিল। কৃত্রিম অঙ্গ এবং জুতো ছাড়াও আর্ম গার্ড, ফোরআর্ম গার্ড, এলএস ব্রেস, বেল্টের মতো চারটি সহায়ক জিনিস তৈরি করার ব্যবস্থা আছে সেখানে। নিয়ম অনুযায়ী ওই বিভাগে কমপক্ষে দু’জন মেডিক্যাল অফিসার-সহ ২৫ জন কর্মী থাকার কথা। কিন্তু রয়েছেন মাত্র এক জন মেডিক্যাল অফিসার আর ছ’জন কর্মী। হাসপাতাল সূত্রের খবর, লোকবল এবং পরিকাঠামোর অভাবেই কার্যত অকেজো হয়ে রয়েছে ওই প্রতিবন্ধী সহায়ক কেন্দ্র। কৃত্রিম অঙ্গ তৈরির কর্মশালা এবং যন্ত্রপাতি পড়েই আছে।
ওই কেন্দ্রে কৃত্রিম অঙ্গ দেওয়া না-গেলেও চারটি সহায়ক জিনিস দেওয়া হয়। কিন্তু স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, ওই সহায়ক জিনিসগুলিও নিয়মিত ভাবে দেওয়া হয় না। তাই গরিবদের বেসরকারি সংস্থা থেকে বেশি দামে কৃত্রিম অঙ্গ কিনতে হচ্ছে। হাসপাতালের এক কর্মী জানান, সরকারি প্রতিষ্ঠানে ২৫০ টাকায় ‘এলএস ব্রেস’ পাওয়া যায়। কিন্তু বাজার থেকে কিনতে গেলে দাম পড়ে ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা। ‘বিলো এলবো বেল্ট’ সরকারি প্রতিষ্ঠানে হাজার দুয়েক টাকায় পাওয়া গেলেও বাজারে তা কিনতে গেলে সাত থেকে আট হাজার টাকা লাগে।
ওই কেন্দ্রের একমাত্র মেডিক্যাল অফিসার জয়ন্ত ভট্টাচার্য বলেন, “এখানে মূলত সমাজের অর্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে পড়া মানুষেরাই আসেন। তাঁদের সকলকে সাহায্য করতে পারলে ভাল লাগত। কিন্তু...।”
সরকারি হাসপাতালে এই কেন্দ্রটির এমন বেহাল দশা কেন?
ওই কেন্দ্রের এক কর্মীর অভিযোগ, জন্মলগ্ন থেকেই এই কেন্দ্রের দিকে নজর দেয়নি সরকার। ফলে দিনের পর দিন এর অবস্থা খারাপ থেকে আরও খারাপ হয়েছে। ফলে এ রাজ্য থেকেই অনেককেই আধুনিক চিকিৎসার জন্য জয়পুরে পাড়ি দিতে হয়। অস্থি-বিশেষজ্ঞ মলয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘রাজ্য সরকার নীলরতনের লিম্ব সেন্টারটিকেই সংস্কার করে একটি আধুনিক লিম্ব সেন্টারে রূপান্তরিত করতে পারে। তা হলে বহু প্রতিবন্ধীর দুর্ভোগ অনেকটাই কমবে।”
আর নীলরতনের কর্মীদের আশঙ্কা, সরকার বিশেষ ব্যবস্থা না-নিলে কেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে যাবে অচিরেই। |