মাওবাদী বন্ধের দ্বিতীয় দিন, রবিবারই অনেকটা স্বাভাবিক ছন্দে ফিরল তিন জেলার জঙ্গলমহল। তবে যৌথ বাহিনীর কড়া নজরদারি ও লাগাতার টহলের মধ্যেও পোস্টার ছড়িয়ে, রাস্তায় টিফিন কৌটো ফেলে মাইন-আতঙ্ক ছড়ানোর চেষ্টা হল পশ্চিম মেদিনীপুরের গোয়ালতোড়ে।
এরই মধ্যে বর্ধমান, বীরভূম ও বাঁকুড়া থেকে মাওবাদী নাশকতায় জড়িত সন্দেহে তিন জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। বর্ধমানের লাউদোহা থানার নতুনডাঙা গ্রামে বাড়ি থেকে ধরা হয় সমীর ওরফে সমীরণ ওরফে তাপস রুইদাসকে। তাঁকে জেরা করে বীরভূমের খয়রাশোল থানার ন’পাড়া গ্রাম থেকে গ্রেফতার করা হয় উত্তম বাউরিকে। |
মাওবাদীদের ডাকা বন্ধের দ্বিতীয় দিন রবিবারে পুরুলিয়ার জঙ্গলমহলের অনেক এলাকা স্বাভাবিক ছন্দে ফিরল।
বন্ধের প্রভাব কমেছে বাঁকুড়ার জঙ্গমহলেও। পুরুলিয়া বাসস্ট্যান্ডের ছবিটি তুলেছেন সুজিত মাহাতো। |
বীরভূমের পুলিশ সুপার নিশাত পারভেজের দাবি, “২০০৭ সালের নভেম্বরে অন্ডাল-সাঁইথিয়া শাখায় রেললাইনে বিস্ফোরণ, ২০১০-এর জানুয়ারিতে খয়রাশোলে একটি বেসরকারি মোবাইল পরিষেবা সংস্থার ‘বেস ট্রান্সিভার স্টেশন’ বা বিটিএস বিস্ফোরণে উড়িয়ে দেওয়া এবং ওই বছর খয়রাশোলেরই এক সিপিএম কর্মী-সহ তিন যুবককে খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত ছিল সমীরণ ও উত্তম। পুলিশের জেরার মুখে তারা অপরাধ কবুল করেছে।” পুলিশ সুপার বলেন, “২০০৮ সালে রাজনগরে দুই
সিপিএম নেতাকে খুন করা এবং গত বছর ডিসেম্বরে সিপিএমের খয়রাশোল জোনাল সদস্যকে খুনের পিছনে এদের হাত আছে বলে প্রাথমিক ভাবে আমাদের ধারণা। ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।”
এ দিনই বাঁকুড়ার বারিকুল থানার অরলো গ্রাম লাগোয়া জঙ্গল থেকে সুভাষ মান্ডি নামে এক মাওবাদী স্কোয়াড সদস্য গ্রেফতার হয়েছেন। বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার প্রণব কুমার বলেন, “বারিকুলের অরলো, ফুলঝোড়, মহিষামুড়া, বেলপাহাড়ির লালজল, কেঁদিশোল এলাকায় এ দিন দুই জেলার পুলিশের যৌথ তল্লাশি হচ্ছিল। সেই সময় পশ্চিম মেদিনীপুরের বিনপুর থানার কুইলাডাঙা গ্রামের বাসিন্দা সুভাষকে গ্রেফতার করা হয়।” তাঁর দাবি, গত বছর ২৩ অগস্ট বারিকুলের মেলেড়া এলাকায় একসঙ্গে চার জনকে খুনের ঘটনায় ধৃত ব্যক্তি জড়িত। এ ছাড়াও বিনপুর থানা এলাকার কয়েকটি নাশকতার ঘটনাতেও সুভাষ যুক্ত। |
ঝালদায় প্রদীপ মাহাতোর তোলা ছবি। সারেঙ্গায় চলছে টহল। ছবি: উমাকান্ত ধর। |
শীর্ষ মাওবাদী নেতা কিষেণজি-কে ‘হত্যা’র প্রতিবাদে শনি ও রবিবার বন্ধের ডাক দিয়েছিল মাওবাদীরা। এ দিন সকালে একটি টিফিন কৌটো ও মাওবাদী নামাঙ্কিত পোস্টার ঘিরে গোয়ালতোড়ে আতঙ্ক ছড়ায়। সকালে গোয়ালতোড়-হুমগড় রাস্তায় একটি কালর্ভাটের উপর এই কৌটো পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয়রা। আশপাশে পড়েছিল বেশ কয়েকটি পোস্টার। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় বম্ব স্কোয়াড। পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার প্রবীণ ত্রিপাঠি বলেন, “কৌটো থেকে শুধুই বালি পাওয়া গিয়েছে। পোস্টারগুলি উদ্ধার করা হয়েছে। এলাকায় আতঙ্ক ছড়াতেই এ কাজ করা হয়েছে।” এ দিন গোয়ালতোড় সদর এলাকাতেও কয়েকটি মাওবাদী নামাঙ্কিত পোস্টার মেলে। পোস্টারে ‘বন্ধ সফল’ করার ডাক দেওয়ার পাশাপাশি ‘কিষেণজি লাল সেলাম’, ‘তৃণমূলের ভৈরব বাহিনীকে গণ আদালতে শাস্তি দেওয়া’র হুঁশিয়ারি ছিল। এ দিন ঝাড়গ্রাম শহর থেকেও একাধিক মাওবাদী পোস্টার উদ্ধার হয়। বহরমপুর স্টেশন লাগোয়া একটি এলাকা থেকে সকালে মাওবাদী নামাঙ্কিত পোস্টার মেলে।
এ দিন ঝাড়গ্রাম শহর, লালগড় বা বেলপাহাড়ি এবং পুরুলিয়ার বান্দোয়ান, বোরো, বরাবাজারের মতো কিছু এলাকায় বন্ধের ভাল প্রভাব পড়েছে। আবার নয়াগ্রাম, সাঁকরাইল, মেদিনীপুর সদর, শালবনি, গোয়ালতোড় বা বলরামপুর, বাঘমুণ্ডি, খাতড়ার মতো মাওবাদী প্রভাবিত এলাকাগুলিতে জনজীবন ছিল কার্যত স্বাভাবিক। সকাল থেকেই পথে বেরিয়েছেন মানুষজন। হাটেবাজারে বেচা-কেনাও হয়েছে। গোলমালের আশঙ্কায় বেশির ভাগ রুটে বেসরকারি বাস বা ট্রেকার বন্ধ থাকলেও ছুটির দিন হওয়ায় খুব বেশি দুর্ভোগে পড়তে হয়নি মানুষকে।
পুরুলিয়ার কোটশিলার বামনিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালন কমিটির নির্বাচনও হয়। বরাবাজার ও আড়শাতেও অনেক দোকানপাট খোলা ছিল। বোরোর কুমারীতে এ দিন সিপিএমের মানবাজার ২ জোনাল কমিটির সম্মেলন হয়। শনি ও রবিবার ফুলকুসমা ও রাইপুর থেকে গাড়ি পাঠিয়ে হোমগার্ড পদের পরীক্ষার্থীদের বাঁকুড়া পুলিশ লাইনে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করে জেলা পুলিশ। |