|
|
|
|
|
|
|
বিষয়: প্রতিবন্ধ পেরিয়ে |
টুথব্রাশটা হাতে নাও। সকালের চায়ের কাপে মারি বিস্কুট ডোবাও। মিনিবাস স্ট্যান্ড অবধি হাঁটো। অফিসের লিফ্ট চলছে না? কোনও সমস্যা নেই, লাফাতে লাফাতে সিঁড়ি ভেঙে তিন তলায় উঠে পড়ো। ল্যাপটপ চালু করো। দুপুরে লাঞ্চ ব্রেকে শহরের ব্যস্ত ফুটপাথে কয়েক পা হেঁটে নাও। বন্ধুর নতুন বাইকের পিছনে চড়ে বসো, এক চক্কর ঘুরে নাও। বাবার শার্টের ছিঁড়ে যাওয়া বোতাম সেলাই করে দাও। আপেল কাটো। শেষ স্টপে টুক করে নেমে পড়ো চলন্ত ট্রাম থেকে।
এগুলো আমাদের জীবনের সব সোজা সোজা কাজ। আমরা প্রতি দিন করি, কোনও চিন্তা ছাড়াই। এগুলো করার সময় কাজ বলে ভাবিই না। খুব সহজ, না?
সবার জন্য নয়, বন্ধু, সবার জন্য নয়।
নানা প্রতিবন্ধকে অতিক্রম করে যাঁরা জীবনের লড়াইয়ে চ্যাম্পিয়ন হতে পেরেছেন, তাঁদের কাছে এই কাজগুলো মোটেও সহজ নয়।
আজ তাঁদেরই কিছু গল্প বলব তোমাদের। আমি জানি, এই গল্পগুলো তোমাদের আকাশ ছোঁয়ার অনুপ্রেরণা দেবে। তোমরাও এই গল্পের নায়কদের মতো জিততে চাইবে। |
হেলেন কেলার |
|
সম্পূর্ণ বধির এবং দৃষ্টিশক্তিহীন, এমন মানুষদের মধ্যে প্রথম বি এ পাশ করেন
হেলেন কেলার। তাঁর শারীরিক প্রতিবন্ধকতাগুলি জন্মগত নয়। তাঁর যখন ১৯ মাস বয়স,
তখন এক অসুখে তিনি দৃষ্টি এবং শ্রবণশক্তি হারান। শৈশবে হেলেন তাঁর বাড়ির রাঁধুনির
ছয় বছর বয়সী মেয়ে মার্থা ওয়াশিংটনকে ইশারায় তাঁর কথা বোঝাতে পারতেন।
হেলেন কেলারের বয়স যখন মাত্র সাত বছর, তখনই পরিবারের অন্য সদস্যদের
সঙ্গে ‘কথা বলা’-র জন্য তিনি ৬০টিরও বেশি সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ তৈরি করে নিয়েছিলেন। |
|
|
জানো কি |
•
সুধা চন্দ্রনের জন্ম ১৯৬৪ সালে। তিনি মুম্বইয়ের মিঠিভাই কলেজ থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক হন এবং মুম্বই বিশ্ববিদ্যালয়ে এম এ পড়েন। ১৯৮১ সালে মুম্বই থেকে দাক্ষিণাত্যে যাওয়ার সময় তাঁর একটি দুর্ঘটনা ঘটে। চিকিৎসকরা তাঁর ডান পা কেটে বাদ দিতে বাধ্য হন। সুধা চন্দ্রন অবশ্য এই বাধার কাছে পরাজয় স্বীকার করেননি। তিনি কৃত্রিম ‘জয়পুর ফুট’ নিয়েই ভারতের অন্যতম খ্যাতিমান নৃত্যশিল্পী হয়ে ওঠেন।
• প্যারালিম্পিকস-এ ভারতের হয়ে প্রথম সোনা জেতেন দেবেন্দ্র ঝাঝারিয়া। রাজস্থানের এই জ্যাভেলিন থ্রোয়ার-এর একটি হাত নেই। আথেন্স-এ ২০০৪ সালের সামার প্যারালিম্পিকস-এ তিনি স্বর্ণপদক পান। নতুন বিশ্বরেকর্ডও গড়েন। তাঁর ছোড়া বর্শাটি ৬২.১৫ মিটার দূরত্ব অতিক্রম করেছিল। আগের রেকর্ড ছিল ৫৯.৭৭ মিটার।
• লুডউইগ ভ্যান বিঠোফেন পৃথিবীর সর্বকালের সেরা সুরস্রষ্টাদের অন্যতম। তাঁর বয়স ত্রিশ বছর হওয়ার আগেই শ্রবণশক্তি ক্রমে হ্রাস পেতে থাকে। শেষ পর্যন্ত তিনি সম্পূর্ণ বধির হয়ে যান। তাঁর অসামান্য সুরসৃষ্টি কিন্তু থেমে থাকেনি। শ্রবণশক্তিরহিত অবস্থাতেও তিনি সুর করেছেন, অর্কেস্ট্রা পরিচালনা করেছেন, নিজে দর্শকদের সামনে বাজিয়েছেন।
• টমাস আলভা এডিসন শুনতে পেতেন না। তিনি চিরকালই বলেছেন, এর জন্য দায়ী এক ট্রেন কন্ডাক্টর। গল্পটা কিন্তু এডিসনের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বদলে গিয়েছে। তিনি প্রথমে বলতেন, ট্রেনে যাওয়ার সময় তাঁর রাসায়নিক ল্যাবরেটরিতে আগুন লেগে যায়। মিশিগানের স্মিথস ক্রিক-এ তাঁকে ধাক্কা দিয়ে ট্রেন থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়। সেই ধাক্কাতেই তাঁর কান খারাপ হয়ে গিয়েছে। পরে এডিসন বলতেন, এক দিন তিনি চলন্ত ট্রেনে ওঠার চেষ্টা করছিলেন। কন্ডাক্টর তাঁকে সাহায্য করেন, টেনে তোলেন তবে কান ধরে টেনে!
• উইলমা রুডল্ফ-এর জন্ম হয় নির্দিষ্ট সময়ের আগেই। জন্মের সময় ওজন ছিল সাড়ে চার পাউন্ড, মানে মাত্র দুই কিলোগ্রাম। খুব ছোটবেলায় তিনি পোলিয়োয় আক্রান্ত হন। সেরে ওঠেন, কিন্তু তাঁর বাঁ পা এবং পায়ের পাতা বেঁকে যায়। তার জন্য তাঁকে পায়ে ব্রেস পরে থাকতে হত। বারো বছর বয়স হওয়ার আগেই তাঁর স্কারলেট ফিভার, হুপিং কাশি, চিকেন পক্স আর হাম হয়। ১৯৬০ সালের রোম অলিম্পিক্সে রেকর্ড গড়েন উইলমা। তিনিই আমেরিকার প্রথম মহিলা খেলোয়াড়, যিনি এক অলিম্পিক গেমস-এ ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ড ইভেন্টে তিনটি সোনা জেতেন।
• ফ্রিডা কাহ্লো মেক্সিকোর এক খ্যাতনামা শিল্পী। ১৯২৫ সালে তাঁর এক মারাত্মক গাড়ি-দুর্ঘটনা ঘটে। তিনি সাময়িক ভাবে চলৎশক্তিহীন হয়ে পড়েন। ডাক্তারি পড়াও ছেড়ে দিতে হয়। সারা দিন সময় কাটানোই কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। তখন তিনি ছবি আঁকতে আরম্ভ করেন। তিনি নিজের ছবিই বেশি আঁকতেন। কেন, তার উত্তরে তিনি বলেছিলেন, ‘বেশির ভাগ সময়ই আমি একা থাকতাম। আর, নিজেকে যতটা চিনি, আর কোনও বিষয়কে তো তত চিনি না!’
• জন ফোর্বস ন্যাশ জুনিয়র এক বিস্ময়কর গণিত প্রতিভা। গেম থিয়োরি, ডিফারেনশিয়াল জিয়মেট্রি, পার্শিয়াল ডিফারেনশিয়াল ইকোয়েশনে তাঁর কাজ এই বিষয়গুলিতে মাইলফলক হয়ে আছে। তিনি গেম থিয়োরিতে তাঁর অবদানের জন্য ১৯৯৪ সালে অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার পান। তাঁর সহবিজেতা ছিলেন রিনার্ড সেল্টেন আর জন হারসানি। ন্যাশ-এর জীবনের গল্পের ওপর ভিত্তি করে সিলভিয়া নাসার ‘আ বিউটিফুল মাইন্ড’ নামে একটি উপন্যাস লেখেন, এবং পরে সেই উপন্যাসটি থেকে হলিউডে একই নামের সিনেমা তৈরি হয়। ন্যাশ প্যারানয়েড স্কিৎসোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত। তাঁর জীবনের একটা বড় অংশ কেটেছে মানসিক রোগের হাসপাতালে।
• ভগবৎ চন্দ্রশেখরের জন্ম মহীশূরে। খুব ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেটের প্রতি তাঁর অদম্য আকর্ষণ। কিন্তু, পোলিয়োয় আক্রান্ত হয়ে তাঁর ডান হাতের কব্জি সরু এবং দুর্বল হয়ে যায়। এতটাই যে তিনি ফিল্ডিং করার সময় বাঁ হাতে বল ছুড়তেন। তা সত্ত্বেও ক্রিকেটের ইতিহাস তাঁর সর্বকালের অন্যতম সেরা লেগ স্পিনার হিসেবে মনে রাখবে। ভারতের হয়ে ৫৮টি টেস্ট ম্যাচে তিনি মোট ২৪২টি উইকেট নিয়েছিলেন।
• রে চার্লস রবিনসন গোটা দুনিয়ায় রে চার্লস নামে পরিচিত। ১৯৫০-এর দশকে আমেরিকায় যে সোল মিউজিক-এর চল হয়, তিনি তার অন্যতম পথিকৃৎ। পাঁচ বছর বয়সে তাঁর দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হতে থাকে। দু’বছরের মধ্যে তিনি সম্পূর্ণ দৃষ্টিহীন হয়ে যান। |
|
বলো তো |
১ ব্রিটেনের চতুর্থ সম্পন্নতম ব্যক্তি, ভার্জিন গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা। ডিসলেক্সিয়ায় আক্রান্ত। কে তিনি?
২ মায়াস্থেনিয়া গ্রাভিস একটি বিরল স্নায়বিক রোগ। এই রোগ মাংসপেশির শক্তি কমিয়ে দেয়, ক্লান্ত করে ফেলে। এই রোগে
আক্রান্ত হলে সম্পূর্ণ পঙ্গু হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। বলিউডের এক সুপারস্টার এই রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। কে তিনি?
৩ স্টিভল্যান্ড হার্ডাওয়ে মরিস এক খ্যাতনামা গায়ক। তিনি দৃষ্টিহীন। তাঁকে আমরা কী নামে চিনি?
৪ মাইক্রোসফ্ট-এর কোন সহ-প্রতিষ্ঠাতা ১৯৮২ সালে হজকিনস লিম্ফোমা রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন?
৫ ১৯৯০ সালে প্রথম কোনও বধির ক্রীড়াবিদ অল ইংল্যান্ড চ্যাম্পিয়নশিপ-এর যোগ্যতা অর্জন করেন। তিনি কে? |
|
উত্তর |
১) রিচার্ড ব্র্যানসন ২) অমিতাভ বচ্চন ৩) স্টিভি ওয়ান্ডার
৪) পল গার্ডনার ৫) রাজীব বাগ্গা |
|
|
|
|
|
|