নেতাই-কাণ্ডের অন্যতম অভিযুক্ত চণ্ডী করণ বহাল রইলেন সিপিএমের বেলাটিকরি লোকাল কমিটির সম্পাদক পদে। নেতাই-কাণ্ডের অভিযুক্ত আরও এক সিপিএম নেতা শেখ খলিলউদ্দিনকেও ফের ওই লোকাল কমিটির সদস্য করা হয়েছে। রাজ্য কমিটির বৈঠকে যেখানে দলের ভাবমূর্তি ‘পরিচ্ছন্ন’ করার প্রয়োজনীয়তার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন সিপিএমের শীর্ষ নেতৃত্ব, সেখানে এই দু’জনের দলীয় পদে পুনর্বহাল হওয়া--উস্কে দিয়েছে নতুন বিতর্ক।
রবিবার মাওবাদী-বন্ধ সত্ত্বেও লালগড়ের নেপুরা অঞ্চলের নিশ্চিন্তিপুর গ্রামের একটি ভবনে বেলাটিকরি লোকাল কমিটির সম্মেলন হয়। চণ্ডীবাবু এবং খলিলউদ্দিন অনুপস্থিত থাকলেও সম্মেলনে হাজির ছিলেন দেড়শো জন দলীয়-প্রতিনিধি। সর্বসম্মতিক্রমে অনুপস্থিত চণ্ডীবাবুকে পুনরায় সম্পাদক হিসাবে নির্বাচিত করা হয়। সিপিএমের বেলাটিকরি লোকাল কমিটির সদস্য সংখ্যা আগে ছিল ১৫ জন। গত বছর এক জন সদস্য মাওবাদী হানায় খুন হন। এ বার ১৩ জনের যে নতুন কমিটি হয়েছে, তাতে চণ্ডীবাবু ও খলিলুদ্দিন-সহ ১০ জন পুরনো সদস্য রয়েছেন। নতুন সদস্য মাত্র ৩ জন। |
লোকাল স্তরে সম্মেলন শুরু হওয়ার আগে কলকাতায় রাজ্য কমিটির বৈঠকে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু লোকাল ও জোনাল কমিটির ক্ষেত্রে সদস্যদের ‘সততা, গ্রহণযোগ্যতা’র মতো বিষয়গুলিকে ‘মানদণ্ড’ করার কথা বলেছিলেন। নতুন কমিটি গড়ার সময় নতুন এবং অপেক্ষাকৃত তরুণদের জায়গা দেওয়ার ‘সূত্র’ও কার্যত বেঁধে দিয়েছিলেন। তা হলে চণ্ডীবাবুরা নতুন কমিটিতে থাকলেন কী করে? নতুন লোকাল কমিটিতে এত জন পুরনো সদস্যই বা কেন? সিপিএমের জেলা সম্পাদক দীপক সরকারকে ফোন করা হলে তাঁর জবাব, ‘‘ব্যস্ত আছি।’’ তবে সিপিএমের জেলা কমিটির এক সদস্যের ব্যাখ্যা, “চণ্ডীবাবু ও খলিলুদ্দিনকে এখনও দোষী সাব্যস্ত করেনি আদালত। আগামী মাসে মেদিনীপুরের বিশেষ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারকের আদালতে মামলাটির বিচার-প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার কথা। ফলে, তাঁদের কমিটিতে রাখতে কোনও বাধা নেই। ওই দু’জনই এলাকার জনপ্রিয় নেতা।” ওই নেতার আর এক দাবি, “জঙ্গলমহলে এই মুহূর্তে আমাদের দলের অভিজ্ঞ নেতৃত্বের অভাব রয়েছে। তাই পুরনো সদস্যদের বেশি সংখ্যায় নতুন কমিটিতে রাখতে হয়েছে।” তবে চণ্ডীবাবুর অনুপস্থিতিতে লোকাল কমিটির অন্য কোনও সদস্যকে ‘আহ্বায়ক’ হিসেবে দায়িত্ব দেওয়ার ব্যাপারে শীঘ্রই দলীয় স্তরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান ওই নেতা।
চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি লালগড়ের নেতাই গ্রামে সিপিএমের দলীয় সশস্ত্র শিবির থেকে গ্রামবাসীদের উপরে নির্বিচারে গুলি করা হয় বলে অভিযোগ। গুলিবিদ্ধ হয়ে ৪ মহিলা-সহ ৯ জন গ্রামবাসীর মৃত্যু হয়। ওই ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত বেলাটিকরি লোকাল কমিটির সম্পাদক চণ্ডীবাবু, লোকাল-সদস্য খলিলুদ্দিন গত দশ মাস ধরে পলাতক। ইতিমধ্যে নেতাই মামলায় চণ্ডীবাবু ও খলিলুদ্দিন-সহ ২০ জনের বিরুদ্ধে ঝাড়গ্রাম আদালতে চার্জশিট জমা দিয়েছে সিবিআই। এর মধ্যে ১২ জন সিপিএম নেতা-কর্মী জেলবন্দি রয়েছেন। আদালতের নির্দেশে চণ্ডীবাবু ও খলিলুদ্দিন-সহ পলাতক ৮ সিপিএম নেতা-কর্মীর স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। স্বভাবতই, বেলাটিকরি লোকাল কমিটির সম্মেলন ঘিরে রাজনৈতিক মহলে জল্পনা ছিল। যুব তৃণমূলের লালগড় ব্লক সভাপতি তথা নেতাই গ্রামেরই বাসিন্দা তন্ময় রায়ের ‘কটাক্ষ’, “খুন-সন্ত্রাস করে সিপিএম এখন এতটাই জনবিচ্ছিন্ন, যে ওরা দলে নতুন লোকও পাচ্ছে না। তাই ‘গণহত্যা’য় অভিযুক্তদের নিয়েই ওদের কমিটি গড়তে হচ্ছে।” |