|
|
|
|
তৃণমূল কর্মী খুনে জামিন সিপিএম নেতা প্রশান্তের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • ঝাড়গ্রাম |
তৃণমূল কর্মী খুনে অভিযুক্ত ঝাড়গ্রামের সিপিএম নেতা প্রশান্ত দাসকে জামিনে মুক্তি দিল আদালত। বৃহস্পতিবার মেদিনীপুর জেলা-দায়রা আদালতে প্রশান্তবাবুর জামিন মঞ্জুর হয়। শুক্রবার মেদিনীপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার থেকে ছাড়া পেয়ে ঝাড়গ্রামের বাড়িতে ফিরেছেন তিনি। তৃণমূল কর্মী খুন, বেআইনি অস্ত্র মজুত ও ভাঙচুর-লুঠের তিনটি মামলায় প্রশান্তবাবুকে অভিযুক্ত করেছিল পুলিশ। বেআইনি অস্ত্র মজুত ও ভাঙচুর-লুঠের দু’টি মামলায় আগেই ঝাড়গ্রাম আদালত থেকে জামিন পেয়েছিলেন প্রশান্তবাবু।
দলের সম্মেলন-পর্ব চলাকালীন দলের আগুইবনি লোকাল কমিটির সম্পাদক এবং ঝাড়গ্রাম (গ্রামীণ) জোনাল কমিটির সদস্য প্রশান্তবাবুর জামিনে মুক্তিতে উচ্ছ্বসিত সিপিএম নেতৃত্ব। জোনাল সম্পাদক রবি সরকারের দাবি, “প্রশান্তবাবুকে যে মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসানো হয়েছিল তা প্রমাণ হয়ে গেল। সম্মেলনের আগে আদালতের এই নির্দেশে আমাদের কর্মী-সমর্থকেরা উজ্জীবিত হবেন।” প্রশান্তবাবুর নিজের বক্তব্য, “মাওবাদীদের খুন-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার কারণেই তৃণমূলের লোকেরা আমার বিরুদ্ধে তাঁদের কর্মী খুনের মিথ্যা অভিযোগ এনেছিল। সাধারণ মানুষের অনেক দুঃখ, দুর্দশা, অভাব-অভিযোগ রয়েছে। আগের মতোই মানুষের পাশে থাকব।” ডিসেম্বরে আগুইবনি লোকাল কমিটি-র সম্মেলন হবে বলেও জানিয়েছেন প্রশান্তবাবু।
প্রশান্তবাবুর এই জামিনে মুক্তির ঘটনায় বিড়ম্বনায় তৃণমূল নেতৃত্ব। এক দফা চন্দ্রিতে যাঁর সভা ভেস্তে দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগ উঠেছিল প্রশান্তবাবুর বিরুদ্ধে, সেই তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীর বক্তব্য, “প্রশান্তবাবুর জামিন বাতিলের জন্য আমরা উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হব। প্রশান্তবাবু আরও অনেক ঘটনায় অভিযুক্ত। তদন্ত করে পুলিশের যথাযথ পদক্ষেপ করা উচিত।”
গত ২৫ সেপ্টেম্বর বিকেলে ঝাড়গ্রাম শহরের রঘুনাথপুর এলাকায় দলের ঝাড়গ্রাম (গ্রামীণ) জোনাল অফিসের সামনে থেকেই প্রশান্তবাবুকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। চলতি বছরের ৭ মার্চ ঝাড়গ্রামেরই পাটাশিমুলে খুন হন তৃণমূল কর্মী কেশবচন্দ্র মাহাতো। প্রশান্তবাবু ওই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত ছিলেন। তৃণমূলের দাবি, ওই দিন প্রশান্তবাবুর নেতৃত্বে সিপিএমের সশস্ত্র বাহিনীর লোকেরা পাটাশিমুলে হামলা চালিয়েছিল। প্রশান্তবাবু ছাড়াও ওই মামলায় সিপিএমের আরও ৪ নেতা-কর্মী-সহ মোট ৫০ জন অভিযুক্ত হয়েছিলেন। ঘটনার পর-পরই গ্রেফতার হন দুই অভিযুক্ত। কিন্তু ধৃত ওই দু’জনের বিরুদ্ধেও পুলিশ সময়ে চার্জশিট দিতে না পারায় তাঁরা গত জুনে জামিন পান। ৬ মাস ধরে ‘ফেরার’ ছিলেন প্রশান্তবাবু। যদিও বিধানসভা ভোটের আগে পর্যন্ত তাঁকে প্রকাশ্যেই দেখা যেত। তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর অবশ্য খুব কমই দেখা যেত। কেশব মাহাতো খুনের দিন ও সময়ে প্রশান্তবাবু যে পাটাশিমুল থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে অন্যত্র ছিলেন, সেই তথ্যপ্রমাণে ‘সন্তুষ্ট’ হয়েই গত বৃহস্পতিবার জেলা-দায়রা বিচারক তাঁর জামিন মঞ্জুর করেন।
প্রশান্তবাবুর বাড়ি ঝাড়গ্রামের চন্দ্রি অঞ্চলের আউসপাল গ্রামে। ঝাড়গ্রাম শহরেও তাঁর বাড়ি রয়েছে। এক সময় চন্দ্রি, আগুইবনি, নেদাবহড়া ও পাটাশিমুল অঞ্চলে সিপিএমের পক্ষে ‘শেষ কথা’ ছিলেন প্রশান্তবাবুই। এমনকী জনগণের কমিটির আন্দোলন পর্বেও বহু দিন নিজের এলাকায় কমিটির কার্যকলাপ ছড়াতে দেননি। আউসপালে নিজের বাড়িতে এবং এলাকায় একাধিক ‘সশস্ত্র শিবির’ চালানোরও অভিযোগ ছিল তাঁর বিরুদ্ধে। বিধানসভা ভোটের আগে কয়েক বার তাঁর বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েও অবশ্য অস্ত্রের হদিস পায়নি যৌথ বাহিনী। গত বছর জুনে আবার ঝাড়গ্রামের সোনামুখী গ্রামে এই যৌথ বাহিনীকে সঙ্গে নিয়েই প্রশান্তবাবুর নেতৃত্বে মহিলাদের নিগ্রহের অভিযোগ উঠেছিল। |
|
|
|
|
|