|
|
|
|
দেড় বছর মর্গে পড়ে ১৪ জন ‘মাওবাদী’র দেহ |
বরুণ দে • মেদিনীপুর |
মৃত্যুর পরেও রয়ে গিয়েছে ‘মাওবাদী’ তকমা। তাই গত দেড় বছর ধরে মর্গে পড়ে রয়েছে ১৪টি ‘অশনাক্ত’ দেহ। পুলিশের দাবি অনুযায়ী, তার মধ্যে একটি জনগণের কমিটির প্রাক্তন সম্পাদক সিদো সরেনের।
নিয়ম অনুযায়ী, অজ্ঞাতপরিচয় দেহ তিন দিনের মধ্যে শনাক্ত না হলে দাহ কিংবা কবর দেওয়া হয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে পুলিশ-প্রশাসনের ‘স্পষ্ট’ নির্দেশের ‘অভাবে’ ‘মাওবাদী’দের দেহ সৎকার করেননি মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
হাসপাতালের সুপার রামনারায়ণ মাইতি বলেন, “দেড় বছর ধরে দেহগুলি পড়ে থাকায় সমস্যা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে কী করণীয় জানতে চেয়ে জেলাশাসক-পুলিশ সুপারের কাছে চিঠি পঠিয়েছিলাম আমরা। জবাবে ওঁদের পাঠানো চিঠির বয়ানে ধোঁয়াশা ছিল। তাই আমরা আরও স্পষ্ট লিখিত নির্দেশ চেয়েছি।”
কেন হল এই পরিস্থিতি? পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার প্রবীণ ত্রিপাঠীর বক্তব্য, “খোঁজ নিয়ে বলতে হবে।” জবাব এড়িয়ে জেলাশাসক সুরেন্দ্র গুপ্তের আশ্বাস, “দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।” তবে জেলা পুলিশের এক কর্তার ব্যাখ্যা, “আসলে এগুলো সবই মাওবাদীদের মৃতদেহ। পরিবারের তরফে কেউ শনাক্ত করতে এলে জিজ্ঞাসাবাদ করে কিছু সূত্র পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু কেউ আসেনি। আর আমাদের জেলায় এ রকম পরিস্থিতি আগে হয়নি। এ ধরনের দেহ সৎকার করা হবে কি না, সে ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকেও পরিষ্কার নির্দেশ ছিল না। সে জন্যই ধোঁয়াশা রয়ে গিয়েছে।”
২০১০ সালের ১৬ জুন শালবনি থানার রঞ্জার জঙ্গলে মাওবাদীদের সঙ্গে যৌথ বাহিনীর গুলির লড়াইয়ে প্রাণ হারান তিন মহিলা-সহ ৮ জন। পুলিশের দাবি ছিল, নিহতদের মধ্যে রয়েছেন মাওবাদী স্কোয়াডের ডেপুটি কমান্ডার অর্জুন, রাঘব, মালতী, মঙ্গল ও গঙ্গা। বাকিরাও স্কোয়াড সদস্য। এর মাসখানেক পরে, ২৬ জুলাই গোয়ালতোড় থানার মেটালার জঙ্গলে যৌথ বাহিনীর সঙ্গে গুলির লড়াইয়ে প্রাণ হারান এক মহিলা-সহ ৬ জন। পুলিশের দাবি, নিহতদের অন্যতম সিদো সরেন। কিন্তু সিদোর মৃত্যুর কথা জেনেও তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে দেহ শনাক্ত করা হয়নি। মৃতদেহ নিতেও অস্বীকার করেন পরিজনেরা।
এর পর থেকেই ১৪ জনের দেহ মেদিনীপুর মেডিক্যালের মর্গে। হাসপাতাল সূত্রে খবর, অজ্ঞাতপরিচয় মৃতদেহ এলে অন্ততপক্ষে তিন দিন তা মর্গে রাখা হয়। এই সময়সীমা পেরিয়ে গেলেই দেহ দাহ করা কিংবা কবর দেওয়া হয়। মেদিনীপুর হাসপাতালের মর্গ থেকে মাসে দু’বার শনাক্ত না হওয়া মৃতদেহ নিয়ে গিয়ে শ্মশানে পোড়ানো হয়। এ জন্য ঠিকাদারও রয়েছেন।
মর্গে এখন সব মিলিয়ে ১২টি ‘আইস চেম্বার’ রয়েছে। তার মধ্যে ৭টি ‘চেম্বার’-এ ওই ১৪টি দেহ রয়েছে। প্রায় দেড় বছর ধরে দেহগুলি পড়ে থাকায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও সমস্যায়। ‘চেম্বার’-এর অভাবে মাঝেমধ্যেই অজ্ঞাতপরিচয় দেহ লাশ-কাটা ঘরের মেঝেতে ফেলে রাখতে হচ্ছে। মর্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক তথা হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার ভক্তিপদ দাস মহাপাত্র বলেন, “বিষয়টি কর্তৃপক্ষের কাছে বহু বার বলেছি। সমস্যার সমাধান হয়নি।” |
|
|
|
|
|