সরকারি আনুকূল্য ও স্পনসরের অভাবে ধুঁকছে সেপাক টাকরো-র মতো স্বল্প পরিচিত খেলা। ক্রিকেট, ফুটবল, হকি, টেনিস বা ব্যাডমিন্টনের মতো জনপ্রিয় খেলার সঙ্গে পাল্লা দিতে না পেরে ক্রমশ পিছিয়ে পড়ছে সেপাক টাকরো।
কয়েক দশক আগেই ভারতের কেন্দ্রীয় ক্রীড়া মন্ত্রক এই খেলাটিকে স্বীকৃতি দিয়েছে। কিন্তু বড় খেলাগুলির জনপ্রিয়তার সঙ্গে পাল্লা দিতে না পেরে অস্তিত্বের সঙ্কটে ভুগছে এই খেলা। কেন্দ্রীয় ক্রীড়া মন্ত্রকের ঔদাসীন্য, প্রচারের অভাব, স্পনসর না থাকা, ন্যূনতম পরিকাঠামোর অনুপস্থিতিতে কোনও মতে টিকে রয়েছে খেলাটি। পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রেও একই চিত্র। পরিকাঠামো তো দূরের কথা, প্রশিক্ষণের জন্য যে মাঠের প্রয়োজন তার জন্যও হন্যে হয়ে ঘুরছেন সংগঠন কর্তারা। মাঠ চেয়ে ক্রীড়ামন্ত্রী মদন মিত্রের দ্বারস্থ হয়েছিলেন তাঁরা। রাজ্যের পক্ষ থেকে খুব শীঘ্রই সমস্ত ধরনের সাহায্যের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় ক্রীড়া মন্ত্রকও সম্প্রতি ভারতীয় সেপাক টাকরো অ্যাসোসিয়েশনকে একই আশ্বাস দিয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গ সেপাক টাকরো অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সচিব তথা প্রাক্তন সেপাক টাকরো খেলোয়াড় অপু ঠাকুরের বক্তব্য, আন্তর্জাতিক খেলা হওয়া সত্ত্বেও ক্রীড়া মন্ত্রক সেপাক টাকরোর বিষয়ে উদাসীন। অথচ, গত বছর চিনে এশিয়াড গেমসেও আশাতীত ভাবে ভাল ফল করেছিল ভারতীয় টিম। কিন্তু সেই সাফল্য অনেকটাই ব্যক্তিগত উদ্যোগে। জাতীয় সেপাক টাকরো ফেডারেশনের সহ-সভাপতি দিল্লির যোগেন্দ্র সিংহ দাহিয়া নিজে সরকারের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে খেলোয়াড়দের জন্য একাধিক প্রশিক্ষণ শিবিরের আয়োজন করেন। তাতেই সাফল্য এসেছে।”
রাজ্যের ক্ষেত্রে সমস্যা কী রকম? পশ্চিমবঙ্গের খেলোয়াড়দের প্রশিক্ষণ করার মাঠ নেই। সংগঠনের জন্য একটা ঘরের ব্যবস্থাও করতে পারেনি রাজ্য। রাজ্যের কর্মকর্তাদের বক্তব্য, নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়াম সংস্কার করার আগে তাও একটা ঘর ছিল। কিন্তু সংস্কারের পরে সেটি আর ফেরত পাওয়া যায়নি। পরে ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্রে একটি অস্থায়ী ঘর দেওয়া হয়। অপু ঠাকুরের কথায়, “সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে মাঠ না পাওয়া। আমাদের পিচের রাস্তায় প্রশিক্ষণ করতে হয়। স্বাভাবিক ভাবেই পিচের রাস্তায় খেলোয়াড়কে ঝুঁকি নিয়ে খেলতে বারণ করা হয়। তার ফলে যতটা প্রশিক্ষণ পাওয়ার দরকার, ততটা পাচ্ছে না আমাদের খেলোয়াড়েরা।” ১৯৮৪ সালে দিল্লিতে এশিয়াডের আগে ভারতে সেপাক টাকরোর সংগঠন তৈরি হয়। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গাঁধীর উদ্যোগে এই খেলাটি দিল্লি এশিয়াডে ‘ডেমনেস্ট্রেশন গেম’ হিসাবে অন্তর্ভুক্ত হয়। তার পরে কেটে গিয়েছে প্রায় ২৭ বছর। ক্রিকেট-ফুটবল-টেনিসের যুগে এখন দেশের ক্রীড়া মানচিত্রে কল্কে পাওয়ার জন্য লড়াই করে যাচ্ছে সেপাক টাকরো। |