ইস্টবেঙ্গল-২ (সৌমিক, লেন)
পুলিশ এসি-১ (ইমানুয়েল)
|
কলকাতা লিগের ম্যাচ জিততে আই লিগের ‘ওষুধ’ প্রয়োগ করতেই হচ্ছে ট্রেভর জেমস মর্গ্যানকে।
রিজার্ভ বেঞ্চের উপর নির্ভর করে ডুবতে ডুবতেও শেষ পর্যন্ত ইস্টবেঙ্গল ভেসে উঠল, জয় পেল সেই টোলগে, রবিন, মেহতাবরা নামার পরই। দুটি গোলের একটিও ‘তারকা’-রা করেননি। কিন্তু রবিবাসরীয় দুপুরে গ্যালারির বন্ধ হয়ে যাওয়া হৃৎপিণ্ডে রক্ত সঞ্চালন করলেন ওঁরাই। বিপক্ষের উপর ‘দৌরাত্ম্য’ শুরু করে। যা দেখে পুলিশ কোচ শিশির ঘোষ মজা করে বললেন, “জেতার জন্য মর্গ্যানকে নয় ডায়াল করে আবার সেই এক ডায়াল করতেই হল।” মজার মধ্যে কটাক্ষটা বুঝতে অবশ্য অসুবিধা হল না।
আই লিগের ধুন্ধুমার যুদ্ধের বাজারে আই এফ এ-র লিগ এমনিতেই এ বার জৌলুস হারিয়েছে। বড় দলের কোচেরা খুব স্বাভাবিক নিয়মেই, ঘরের লিগকে ফুটবলার তৈরির রসায়নাগার হিসাবে ব্যবহার করছেন। নানা ভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছেন লাল-হলুদের ব্রিটিশ কোচও। সে জন্যই পুলিশ এ সি-র বিরুদ্ধে তিনি নামিয়ে দিয়েছিলেন এমন এগারো জনকে যাদের মধ্যে একজন ছাড়া বাকিদের অনেকেরই আই লিগের রিজার্ভ বেঞ্চেও সবসময় জায়গা হয় না। |
লেন, বুধিরাম, সুনীলকুমার, সুবোধ কুমার, চরণ রাই নিয়মিত মাঠে আসা দর্শকরাও এদের রাস্তায় দেখলে চিনতে পারবেন না। মর্গ্যান এঁদের দিয়েই পুলিশের বাধা টপকাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ৫৯ মিনিট পর্যন্ত পরীক্ষার ফল দাঁড়াল একশোয় বড় জোর কুড়ি-তিরিশ। গোলের সুযোগ নষ্ট, অসংখ্য মিস পাস, বিপক্ষের পায়ে বল জমা দেওয়ার বিশ্রী রোগপাস মার্কও এনে দিতে পারল না রিজার্ভ একাদশকে! গ্যালারিতে চিৎকার, গালাগালির ফোয়ারা ছুটতে শুরু করতেই পেশাদার মর্গ্যানেরও পণ ভঙ্গ। অগত্যা ‘মধুসূদন’দেরই শরনাপন্ন হলেন তিনি। ৪-৪-২ থেকে টোলগে-রবিনকে নামিয়ে ৪-৩-৩ করে দেওয়ার পরই গোলের দেখা মিলল। তিন মিনিটের ব্যবধানে ২-০ এগিয়ে গেলেন মর্গ্যান। বিরতির মিনিট দশের পর জামা বদলালেও ছেঁড়া প্যান্টটা বদলাননি মর্গ্যান। ফলে নড়বড়ে রক্ষণের সুযোগে ২-১ হয়ে গেল। প্রায় দু’মাস পর চোট সারিয়ে মাঠে নেমেছিলেন ইস্টবেঙ্গল মাঝমাঠের হৃৎপিন্ড মেহতাব হোসেন। তেত্রিশ মিনিট খেললেন। তেজটা আগের মতো থাকলেও পুরো ফিট নন। মর্গ্যান নিজেও বলে দিলেন, “এখনও আই লিগে খেলার জন্য ফিট নয়। আরও সময় লাগবে। ওকে আস্তে আস্তে খেলিয়ে তৈরি করতে হবে।”
পুলিশ কোচ শিশির ঘোষের বহু দুর্দান্ত গোলের স্মৃতি জড়িয়ে আছে ইস্টবেঙ্গল মাঠে। শিশিরের কোচিংয়ে এখন যাঁরা খেলছেন তারা কেউই তাঁর হাঁটুরও যোগ্য নয়। সেটা না হয় দক্ষতার অভাব। কিন্তু জঙ্গলমহলে পুলিশ যে অনমনীয় মনোভাব নিয়ে লড়ে যাচ্ছে তার সিকিভাগও মাধব-বরুণ-রাহুল-পার্থপ্রতিমদের মধ্যে থাকলে ইস্টবেঙ্গলকে তারা এ দিন সমস্যায় ফেলতেই পারত।
মর্গ্যান তাঁর রিজার্ভ বেঞ্চ তৈরির জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন। ইস্টবেঙ্গল কর্তারাও নানাভাবে চেষ্টা করছেন ক্লাবকে আধুনিক করতে। যুবভারতীর মতো নিজেদের মাঠেও অস্থায়ী বিপণন কেন্দ্র তৈরি করে নিয়মিত সমর্থকদের মধ্যে বিক্রি করছেন লাল-হলুদ টি শার্ট, টুপি, স্কার্ফসহ অনেক সামগ্রী। বিদেশে যেমন হয়। এ দিন দেখা গেল গ্যালারির বেশির ভাগ দর্শকের মতো অ্যালান গাওয়ের বান্ধবী ও সঙ্গে আসা বন্ধুর দুই ছেলে-মেয়েকেও স্কার্ফ বা টুপি পরে ঘুরতে। টোলগের বান্ধবীর হাতেও দেখা গেল লাল-হলুদ উত্তরীয়। তবে ক্লাব কর্তাদের ইচ্ছায় সামান্য হলেও চোনা ফেলছে মাঠের ভিতরের মান্ধাতার আমলের রিজার্ভ বেঞ্চ ব্যবস্থা। যেখানে বসে বা দাঁড়িয়ে সহকারী রেফারির ঘাড়ের উপর নিঃশ্বাস ফেলছেন মর্গ্যান থেকে তাঁর দলের ম্যানেজারও। ওইখানে ফ্ল্যাগ হাতে সঠিক সিদ্ধান্ত দেওয়া রেফারি কেন, শিবেরও অসাধ্য!
ইস্টবেঙ্গল : জয়ন্ত, সৈকত, সুনীলকুমার, গুরবিন্দার, সৌমিক, হরমনজিৎ, রবিন্দর, সুবোধকুমার (মেহতাব), চরণ (রবিন), লেন ও বুধিরাম (টোলগে)। |