প্রাধান্য বজায় রাখতে সিপিএমেও পরিবারতন্ত্র |
রাজ্যে ক্ষমতাচ্যুত হলেও দলে নিজেদের প্রাধান্য ছাড়তে রাজি নয় কেউ। খড়্গপুর শহর জোনাল কমিটির অন্তর্গত লোকাল কমিটির সম্মেলনে সিপিএমের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের মূল কারণ ছিল এটাই! রবিবার শহর জোনাল কমিটির সম্মেলনেও ক্ষমতা ধরে রাখারই প্রবণতাই চোখে পড়ল সবচেয়ে বেশি। গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের যেমন কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হল, তেমনই আবার নেতার স্ত্রীদের স্থান দেওয়া হল জোনাল কমিটিতে। যদিও গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কথা স্বীকার করতে রাজি নন পুনর্নির্বাচিত জোনাল সম্পাদক মনোজ ধর। তিনি বলেন, “এখন নিজেদের মধ্যে বিতর্কের সুযোগ কোথায়। দলবদ্ধ হয়ে সংগঠনকে মজবুত করা প্রধান লক্ষ্য। নির্বিঘ্নেই সম্মেলন শেষ হয়েছে।”
এ বার জোনাল কমিটিতে ৫ জন নতুন সদস্য ঢুকেছেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন নিমপুরা লোকাল কমিটির সম্পাদক ত্রিমাণ ভট্টাচার্য, ইন্দা লোকাল কমিটির সম্পাদক সৌমেন মহাপাত্র, সংখ্যালঘু তথা যুব সংগঠন ডিওয়াইএফআইয়ের শহর সভাপতি কামরুজ্জামান (ইন্দা এলসি), জেলা কমিটির সদস্য কালী নায়েকের স্ত্রী লুসি নায়েক ও প্রেমবাজার লোকাল কমিটির সম্পাদক হরেকৃষ্ণ দেবনাথের স্ত্রী রঞ্জনা দেবনাথ। লুসিদেবী খড়্গপুর শহর মহিলা সমিতির সভাপতি ও রঞ্জনাদেবী সম্পাদক।
অন্য দিকে, জোনাল কমিটি থেকে বাদ পড়েছেন জেলা কমিটির সদস্য অসিত সরকার ও কালী নায়েক। এ ছাড়াও বাদ পড়েছেন বীরেন সেন, লীলা বিশ্বাস (জেলা মহিলা সমিতির সভাপতি), তুষার মল্লিক, উত্তম ঘোষ ও অরুণ দাস। এতদিন ১৯ জনের কমিটি ছিল। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বার পরিধি কমিয়ে ১৭ জনের কমিটি করতে হবে। তাই বলে প্রবীণ দুই জেলা কমিটির সদস্য বাদ কেন?
সিপিএম নেতৃত্বের ব্যাখ্যা, “ওই দুই নেতা জেলা কমিটিতে থেকেও জোনাল স্তরের কাজকর্ম দেখতে পারবেন। পরামর্শ দিতে পারবেন। পরিবর্তে নতুনদের সুযোগ দিলে তাঁরা আরও সক্রিয় ভাবে কাজ করতে পারবেন।” যদিও এর পিছনে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বই কাজ করছে বলে সিপিএমের অন্দরের খবর। জেলা সম্পাদক দীপক সরকারের অনুগামী হলেন অসিত সরকার। আর সূর্যকান্ত মিশ্রের গোষ্ঠীতে রয়েছেন কালী নায়েক। এক পক্ষকে বাদ দেওয়ায় প্রবল বিতর্কের ঝড় ওঠায় অন্য গোষ্ঠীরও এক জনকে বাদ দিতে হয়েছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে।
দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্যে ক্ষমতায় না থাকলেও গোষ্ঠী রাজনীতি কিন্তু বন্ধ হয়নি। যে কারণে ইন্দা লোকাল কমিটির সম্মেলনে চেয়ার ছোড়াছুড়ির ঘটনা ঘটেছিল ৪ বারের লোকাল কমিটির সম্পাদক গৌতম দত্তকে সরানোর প্রতিবাদে। যদিও শেষ পর্যন্ত তাঁকে সরতেও হয়েছিল। পরিবর্তে সম্মেলনে ইস্তফা দেওয়া সৌমেন মহাপাত্রকে এক রকম জোর করেই সম্পাদক করা হয়। আবার উল্টো দিকে প্রেমবাজার লোকাল কমিটিতে পঞ্চম বারও সম্পাদক হয়ে থেকে গেলেন হরেকৃষ্ণ দেবনাথ ও মধ্য লোকাল কমিটির (রেল) সম্পাদক সর্বেশ্বর রাও। এমনকী সংখ্যালঘু, যুব ও মহিলা প্রতিনিধিদের কমিটিতে রাখার উপর জোর দেওয়া হলেও তা নিরপেক্ষ ভাবে করা হয়নি বলে অভিযোগ। কামরুজ্জামানকে কমিটিতে রেখে এক ঢিলে দুই পাখি মারা হয়েছে বলে অভিযোগ। যাঁকে সংখ্যালঘু বলে যেমন দেখানো হচ্ছে তেমনি যুবও দেখানো হচ্ছে। আবার মহিলাদের ঢোকাতে গিয়ে দুই নেতার স্ত্রীকে নিয়ে আসা হয়েছে। কেন অন্যদের সুযোগ দেওয়া হল নাসেই প্রশ্নও উঠেছে। দলীয় নেতাদের কথায়, “গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ও ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রাখার প্রবণতার জন্যই রাজ্যের ক্ষমতা থেকে সরতে হয়েছে সিপিএমকে। নিজেদের স্বার্থ বুঝতে গিয়ে জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে পারেননি নেতারা। এখনও সেই ধারাই বজায় অটুট রয়েছে।” |