সমন্বয়ে ঘাটতি, থমকে রাস্তার কাজ |
রাস্তা তৈরির জন্য কেন্দ্রীয় সরকার অর্থ বরাদ্দ করেছে। বছর দু’য়েক আগেই সেই অর্থ পৌঁছে গিয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসনের কাছে। কিন্তু এখনও রাস্তার কাজ শুরুই করা যায়নি। রাস্তা নির্মাণের জন্য এক বার জোরকদমে ময়দানে নেমেও ছিল প্রশাসন। উচ্ছেদ করা হয়েছিল বেআইনি দখলও। তার পরই সব চুপচাপ! খড়্গপুর শহরের বারবেটিয়া থেকে পুরীগেট পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণের ক্ষেত্রে এমনই ঘটেছে।
কেন? প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বাইরের বাধা অতিক্রমের পর রাস্তা নির্মাণ করতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে, আসল বাধা সরকারের বিভিন্ন দফতরের মধ্যেই। সেই জট না কাটানো পর্যন্ত রাস্তার কাজ শুরু করা কঠিন। সমস্যা বাতিস্তম্ভ এবং জলের পাইপলাইন নিয়ে। একটি বিদ্যুৎ দফতরের ও অন্যটি জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরের আওতাধীন। বাতিস্তম্ভ ও জলের পাইপ না সরিয়ে কাজ করা সম্ভব নয়। এই সমস্যার কথা জানার পরই বিভিন্ন দফতরের মধ্যে যোগাযোগ শুরু হয়। দেখা যায় বাতিস্তম্ভ সরাতেই খরচ হবে ১ কোটি ৬৭ লক্ষ টাকা। আর পাইপলাইন সরাতে খরচ তার থেকেও বেশি, ৩ কোটি ২৪ লক্ষ টাকা! কে দেবে এই টাকা? খড়্গপুরের মহকুমাশাসক সুদত্ত চৌধুরী বলেন, “আমরা পূর্ত দফতরকে দিয়ে খরচের একটা হিসেব তৈরি করে তা রাজ্যে পাঠিয়েছি। শীঘ্রই সমস্যা মিটে যাবে বলেও আমাদের আশা। তার পরই রাস্তা নির্মাণের কাজ শুরু হয়ে যাবে।”
৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক থেকে খড়্গপুর শহরের কৌশল্যা হয়ে পুরীগেট পর্যন্ত ১০.৪৫ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণের জন্য অর্থ বরাদ্দ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। এই রাস্তার জন্য ২৩.৩৫ কোটি টাকা দিয়েছে কেন্দ্র। ওই পথেই রয়েছে খড়্গপুর পুরসভা, মহকুমা হাসপাতাল ও আইআইটি। ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক থেকে যাতে দ্রুত আইআইটি, হাসপাতাল বা পুরসভায় পৌঁছনো যায় সে জন্যই এই রাস্তা নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল বলে প্রশাসন জানিয়েছে। খড়্গপুর ঢোকার অনেকগুলি রাস্তা রয়েছে। একটি ঝাড়গ্রাম থেকে নিমপুরা হয়ে। একটি কলকাতা থেকে চৌরঙ্গি হয়ে। আর একটি কলকাতা বা ওড়িশা--দু’টি দিক দিয়েই ঢোকা যায়। এ ক্ষেত্রে ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক দিয়ে বারবেটিয়া হয়ে ঢুকতে হবে। অন্য দু’টি রাস্তার সম্প্রসারণ করতে হলে বেশি সমস্যা। কারণ, ওই দু’টি রাস্তায় শহরের মধ্যস্থল হয়ে গিয়েছে। সে ক্ষেত্রে রাস্তা চওড়া করতে হলে দু’দিকের দোকানঘর ভাঙতে হবে অনেক বেশি। তা ছাড়াও রাস্তার বেশিরভাগ অংশ শহরের মধ্যস্থলে হওয়ায় যানজট এড়ানোও কঠিন।
কিন্তু বারবেটিয়া থেকে হলে সেই ঝামেলা নেই। তাই অর্থ পাওয়ার পরেই ২০০৯ সালে রাস্তা তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০১০ সালে বেআইনি দখল উচ্ছেদও হয়ে যায়। প্রথম দিকে কিছু মানুষ প্রতিবাদ করলেও পরবর্তীকালে আন্দোলনও থেমে যায়। কয়েক জন যদিও হাইকোর্টেও গিয়েছেন। প্রশাসন সূত্রের খবর, যে সব ক্ষেত্রে কোর্টে মামলা হয়েছে, সেই বিতর্কিত জমি এড়িয়েও রাস্তা তৈরি সম্ভব। তাই আদালতের মামলা রাস্তা নির্মাণে বাধার কারণ হয়ে দাঁড়াবে না। বাধার মূল কারণ হয়েছে রাজ্য সরকারেরই দু’টি দফতর। কাজ করবে পূর্ত দফতর। দেখভাল করবে মহকুমা প্রশাসন। সমস্যা তৈরি হয়েছে বিদ্যুৎ দফতর এবং জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরকে নিয়ে। প্রশাসন সূত্রের খবর, রাস্তা তৈরি করতে গিয়ে যদি এলাকার মানুষ জল না পান, তা হলে ব্যাপক সমস্যা তৈরি হবে। আবার বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হলেও ক্ষোভের সঞ্চার হবে। তাই আগে এই দু’টি কাজ করে ফেলতে হবে। কী ভাবে করা হবে তারও নক্সা ও আনুমানিক ব্যয় জানিয়ে একটি রিপোর্ট তৈরি করেছে পূর্ত দফতর। যা রাজ্য সরকারের কাছে পৌঁছে গিয়েছে। যাতে সংশ্লিষ্ট দফতরগুলি রাজ্য থেকে জেলাকে এই অর্থ দেয় সে জন্য আবেদন জাাননো হয়েছে। প্রশাসন জানিয়েছে, সেই আশ্বাসও পাওয়া গিয়েছে। টাকা পেলেই দ্রুত বাতিস্তম্ভ ও পাইপলাইন সরিয়ে রাস্তার কাজ শুরু হয়ে যাবে। |