উত্তর ব্যারাকপুর |
জঞ্জাল থেকে সার, উদ্যোগী পুরসভা |
আবর্জনা নিয়ে মাথাব্যথা দু’জনেরই। উপযুক্ত জায়গার অভাবে একজন নিজেরই এলাকায় যত্রতত্র জঞ্জাল ফেলে
দূষণ সৃষ্টি করছে। আর এক জন নিজেদের সেই জঞ্জাল থেকে সার তৈরি এবং তা বাজারজাত করার মাধ্যমে
কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করছে। উত্তর ২৪ পরগনার তৃণমূল পরিচালিত নৈহাটি এবং উত্তর ব্যারাকপুর
পুরসভায় জঞ্জাল সমস্যার সমাধানেএমনই বিপরীত ছবি দেখলেন
বিতান ভট্টাচার্য। |
জঞ্জাল থেকে সার তৈরি করে তা বাজারজাত করতে উদ্যোগী হয়েছে পুরসভা। শুধু তাই নয়, জঞ্জাল থেকে তৈরি হওয়া সার দিয়ে নিজেদের জমিতে চাষ-আবাদ করে কর্মসংস্থানের পরিকল্পনাও নিয়েছে ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের অন্যতম পুরনো উত্তর ব্যারাকপুর পুরসভা।
জঞ্জাল সমস্যায় জর্জরিত ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের অধিকাংশ পুরসভা। পানিহাটি বা নৈহাটির মতো ঘন জনবসতির পুরসভাগুলি জঞ্জাল ফেলার জায়গা না পেয়ে রাস্তায় ও ফাঁকা জমিতে জঞ্জাল ফেলে দূষণ ছড়াচ্ছে। এই দুই পুরসভার মতো অধিকাংশ পুরসভাই জঞ্জাল অপসারণের উপায় খুঁজে পাচ্ছে না। উত্তর ব্যারাকপুর পুরসভা অবশ্য ইতিমধ্যেই সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্টে দেশের মধ্যে দ্বিতীয় স্থানের শংসাপত্র লাভ করেছে। উত্তর ব্যারাকপুর পুরসভার চেয়ারম্যান তৃণমূলের মলয় দাস বলেন, ‘‘আমাদের উদ্যোগ ছিল। আমরা করতে পেরেছি। সদিচ্ছা থাকলে উপায় ঠিকই হয়। শিল্পাঞ্চলের বাকি পুরসভাগুলি আমাদের কাছে এ ব্যাপারে সহযোগিতা চাইলে আমরা নিশ্চয়ই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেব।’’ |
|
আবর্জনা থেকে সার তৈরির প্রস্তুতি।-নিজস্ব চিত্র |
তবে উত্তর ব্যারাকপুর পুরসভার এই উদ্যোগের প্রাথমিক কাজ শুরু করেছিল পূর্বতন বাম সরকার। এই পুরসভা ও পাশ্ববর্তী গাড়ুলিয়া মিলিয়ে গাড়ুলিয়ার ১১ নম্বর ওয়ার্ডের ডাম্পিং গ্রাউন্ডে আবর্জনা জমিয়ে সেখান থেকে ভার্মি সার তৈরির পরিকল্পনা আগেই ছিল। কিন্তু আগের বামশাসিত পুরবোডর্র্ সেটি বাস্তাবায়িত করতে পারেনি। সাত মাস আগে উত্তর ব্যারাকপুরের নতুন পুরবোর্ড ৩৩ বিঘার এই ডাম্পিং গ্রাউন্ডে পচনশীল আবর্জনা থেকে সার তৈরি শুরু করে। উত্তর ব্যারাকপুর পুরসভার চেয়ারম্যান ইন কাউন্সিল (জঞ্জাল) কমলেশ উকিল বলেন, ‘‘আমাদের পুর এলাকায় প্রতিটি বাড়িতে দু’টি করে বালতি দেওয়া আছে। একটা লাল আর একটা সবুজ। লালটাতে অপচনশীল আর সবুজ বালতিতে পচনশীল আবর্জনা রাখার কথা। প্রতিদিন সকালে বাড়ি বাড়ি ঘুরে সেই আবর্জনা সংগ্রহ করেন পুরসভার সাফাই কর্মীরা। সেটি জমানো হয় একটি বড় ভ্যাটে। তারপর সেখান থেকে নিয়ে যাওয়া হয় ডাম্পিং গ্রাউন্ডে।’’ কমলেশবাবুর কথায়, ‘‘আমাদের এখানেও মানুষকে সচেতন করতে আমাদের অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। অনেক বাড়িতে তো ময়লা ফেলার জন্য ঢাকা দেওয়া নতুন বালতি দেওয়ার পরে সেগুলোতে চাল, আটা রাখা হতো। বাড়ি বাড়ি ঘুরে বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে সেটা বন্ধ করা গিয়েছে। একই ভাবে প্লাস্টিকের ব্যবহারও বন্ধ করেছি আমরা। ফলে পচনশীল আবর্জনাই বেশি পাওয়া যাচ্ছে এখন।’’
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, এলাকার প্রায় ২৩ হাজার বাড়ি থেকে প্রতিদিন ১০ টন আবর্জনা পাওয়া যায়। তার থেকে অন্তত পাঁচ টন সার তৈরি হয়। সেই সার বিক্রি হয় আশপাশের কৃষক ও ফুলচাষিদের কাছে। কুড়িজন কর্মী এই ডাম্পিং গ্রাউন্ডে জঞ্জাল থেকে সার তৈরির কাজে নিযুক্ত। এখানকার সুপারভাইজার মিহির মল্লিক বলেন, ‘‘আমাদের এখানে যা জায়গা আছে তাতে পাশাপাশি অন্য পুরসভার জঞ্জাল জমা করেও আমরা সার তৈরি করতে পারি।’’ |
|