‘গুন্ডা-ট্যাক্স’ চেয়ে ফোন, সন্ত্রস্ত হাওড়ার লোহা ব্যবসায়ীরা
রাত একটু গভীর হলেই মোবাইল ফোন বেজে উঠছে। ফোন ধরলে ও-প্রান্ত থেকে ভেসে আসছে একটি অপরিচিত কণ্ঠস্বর।
‘সুনা তো?’
‘কেয়া’?
‘ম্যায় রামবাবুকো গোলি চালায়া। মেরা নাম শ্রীনু নাইডু। আভি মুঝসে ৪০০ রুপিয়া পার টন গুন্ডা ট্যাক্স দেনা হোগা। যো ব্যাপারি নেহি দেগা, উসকো গোলি মার দুঙ্গা। ম্যায় অমিত কা বাপ হু।”
শ্রীনু নাইডু
এক বার বা দু’বার নয়। বারবার আসছে এই হুমকি-ফোন। আর এই ফোন পেয়ে ফের সন্ত্রস্ত বেলুড়-বজরংবলীর রেলের বাতিল লোহার ব্যবসায়ীরা। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, আতঙ্কিত লোহা ব্যবসায়ীরা পুলিশের পাশাপাশি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরও দ্বারস্থ হয়েছেন। ঘটনার তদন্তে নেমেছে হাওড়া সিটি পুলিশের গোয়েন্দা দফতর। হাওড়ার ডিসি (ডিডি) অখিলেশ চর্তুবেদী বলেন, “বেলুড়ের লোহা ব্যবসায়ীদের বলা হয়েছে, এই ধরনের ফোন এলে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে জানাতে। কিন্তু, অধিকাংশ ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা পুলিশকে সব তথ্য জানান না। তবে এ বার ওই হুমকি-ফোনের অভিযোগ পেয়ে তদন্ত হচ্ছে। এখনই কিছু বলা যাবে না।”
কে এই শ্রীনু নাইডু?
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, শ্রীনু নাইডু হল খড়্গপুরের এক কুখ্যাত দুষ্কৃতী। গত ১২ সেপ্টেম্বর মেদিনীপুরের মোহনপুর সেতুর কাছে ভরদুপুরে রামবাবুর কনভয় লক্ষ করে যে গুলি চালানোর ঘটনা ঘটেছিল, তাতে প্রধান অভিযুক্ত হিসেবে ধরা পড়েছিল সে। বর্তমানে শ্রীনু মেদিনীপুর সেন্ট্রাল জেলে বন্দি। পুলিশের ধারণা, ওই তোলাবাজ জেলে বসেই মোবাইল ফোনে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। যে দু’টি নম্বর থেকে এই হুমকি ফোন যাচ্ছে, সেগুলির টাওয়ারের অবস্থান মেদিনীপুর জেল বলেই তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন।
পুলিশ সূত্রে খবর, রামবাবু জেলে থাকার সময়ে শ্রীনুর নেতৃত্বে গড়ে ওঠে নতুন দল। তার দলে যোগ দেয় রামবাবুর এক কালের শত্রু বাগ্গা রাও ও শিবাজি রাও। তবে শ্রীনুকে নিয়ে পুলিশের মাথাব্যথার আর একটি কারণ হল, ওই মাফিয়ার সঙ্গে খড়্গপুরের কিছু ক্ষমতাশালী রাজনৈতিক নেতার ওঠা-বসা রয়েছে। অভিযোগ, তাঁরাই ওই তোলাবাজকে ‘গুন্ডা-ট্যাক্স’ বা তোলাবাজদের ভাষায় যাকে বলে ‘জিটি’ তুলতে মদত দিচ্ছেন। পাশাপাশি, শ্রীনুর সঙ্গে যোগ দিয়েছে হাওড়া ও খড়্গপুরের কিছু ব্যবসায়ী। অভিযোগ, তাঁরাই শ্রীনুকে অন্য ব্যবসায়ীদের নম্বর দিচ্ছেন জিটি আদায়ের জন্য।
এত দিন রেলের বাতিল লোহা কেনাবেচার ব্যবসায়ে ‘বেতাজ বাদশা’ ছিল কুখ্যাত তোলাবাজ অমিত চৌধুরী। গত দু’দশক ধরে পুলিশের খাতায় ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ এই তোলাবাজ নেপালে বসে মোবাইলে নিয়ন্ত্রণ করত বেলুড় থেকে বিশাখাপত্তনমের নিলাম কারবার। তার উদ্যোগে হাওড়ায় তৈরি হয়েছিল একটি গোপন ‘সিন্ডিকেট’। যে সিন্ডিকেটের কাজ ছিল ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ‘গুন্ডা-ট্যাক্স’ তুলে অমিতের কাছে পাঠানো। এই সিন্ডিকেটের ‘ম্যাস্ল ম্যান’-এর কাজ করত হাওড়ার কিছু কুখ্যাত দুষ্কৃতী। যাদের মাথা ছিল বেলুড়ের তোলাবাজ পলাশ দাস।
পুলিশ সূত্রের খবর, গত জুন মাসে নিজের এলাকাতেই খুন হয়ে যায় পলাশ। পুলিশ জানায়, পলাশ মারা যাওয়ার পরে ‘সিন্ডিকেট’ অনেকটা দুর্বল হয়ে পড়ে। কিছু দিন পরে তা ভেঙেও যায়। ফলে, ফের ময়দান দখলের চেষ্টায় নেমে পড়ে অমিতের বিরোধী পক্ষ। তদন্তকারীদের মতে, সেই চেষ্টার একটি নমুনা হল, সম্প্রতি হাওড়ার লোহা ব্যবসায়ীদের কাছে ওই হুমকি-ফোন যাওয়া।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেলুড়ের এক লোহা ব্যবসায়ী বলেন, “খুনের মামলায় রামবাবু যখন যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে জেলে ছিল, তখনও তাকে ‘জিটি’ দিতে হত। আর এখন জেল থেকে জামিনে মুক্তি পাওয়ার পরেও দিতে হয়। আগে টন প্রতি ২০০ টাকা দিতে হত। এখন সেখানে দিতে হচ্ছে ৩০০ টাকা করে।”
ওই ব্যবসায়ীর অভিযোগ, দুই মাফিয়াকে প্রতি টনে ৭০০ টাকা (অমিতকে ৪০০ এবং রামবাবুকে ৩০০) ‘জিটি’ দিয়ে ব্যবসা একেবারে উঠে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। অনেকে ব্যবসা ছেড়েও দিয়েছেন। এর উপরে ফের ‘জিটি’ চেয়ে আর এক মাফিয়ার হুমকি শুনে আতঙ্কিত ব্যবসায়ীরা রেলের নিলামে যাওয়াই বন্ধ করে দেবেন বলে ভাবছেন।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.