মোটরবাইক কেনার টাকা জোগাড় করতেই দমদমের আট বছরের শুভম চক্রবর্তীকে অপহরণের ছক কষেছিল ওই বাড়িরই ভাড়াটে রাকেশ পাণ্ডে।
শুভম-খুনে মূল অভিযুক্ত রাকেশকে জেরা করে এ কথাই জেনেছে পুলিশ। একই বক্তব্য তার দুই সঙ্গী বিশ্বজিৎ ঘোষ ও কোনা ঘোষের। তদন্তকারীরা জানান, ওই দু’জনকে সঙ্গে নিয়ে শুভমকে অপহরণের ছক কষে রাকেশ। কোনা এক ভ্রমণ সংস্থায় সামান্য বেতনে গাড়ি চালায়। বিশ্বজিৎ কার্যত বেকার। টাকার লোভেই শুভমকে অপহরণের পরিকল্পনায় সামিল হয় তারা। পুলিশের দাবি, খুনের পরিকল্পনা প্রথমে ছিল না। কিন্তু ধরা পড়ার আশঙ্কায় শুভমকে শ্বাসরোধ করে হাড়োয়ার খালে ফেলে দেওয়া হয়। ময়না-তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে জানা গিয়েছে, শ্বাসরোধ হওয়ায় জ্ঞান হারায় শুভম। তখনও তার মৃত্যু হয়নি। ওই অবস্থাতেই তাকে জলে ফেলা হলে ডুবে মৃত্যু হয় শিশুটির।
উত্তর ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার চম্পক ভট্টাচার্য বলেন, “টাকার জন্যই শিশুটিকে অপহরণ করা হয় বলে অনুমান। তার পরে খুনের পরিকল্পনা ছিল কি না, খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” তদন্তকারীরা জানান, রাকেশ, বিশ্বজিৎ ও কোনা তিন জনেই দমদমের বাসিন্দা। কলেজপড়ুয়া রাকেশ কেটারিং-ও করে। পুলিশকে সে জানায়, ব্যবসার প্রয়োজনেই মোটরবাইক কেনার পরিকল্পনা ছিল। চটজলদি টাকা পেতেই অপহরণের ছক কষে দুই বন্ধুকে জানায়।
শুভমকে অপহরণ করলে শিশুটি তাকে চিনে ফেলবে এ কথা বুঝেও কেন ঝুঁকি নিল রাকেশ? পুলিশকে রাকেশ জানিয়েছে, শুভমকে বাড়ি থেকে ‘ভুলিয়ে’ নিয়ে গিয়ে কোনা এবং বিশ্বজিতের হাতে দেওয়ার কথা ছিল তার। শুভমকে আটকে রেখে তার পরিজনদের হুমকি ফোন করার ‘দায়িত্ব’ ছিল বিশ্বজিৎদের। রাকেশ যে এতে জড়িত, তা শুভম কোনওভাবেই বুঝতে পারবে না বলে মনে করেছিল তারা।
পুলিশ জানায়, পরিকল্পনা মতো শুক্রবার রাতে শুভমকে চকোলেট দেওয়ার লোভ দেখিয়ে বাড়ি থেকে বার করে নিয়ে যায় রাকেশ। কিছুটা দূরেই গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছিল বিশ্বজিৎরা। চালক ছিল কোনা। শুভমকে তাদের হাতে তুলে দেয় রাকেশ। শিশুটিকে নিয়ে দমদমের মধুগড় থেকে বারাসতের দিকে রওনা দেয় অপহরণকারীরা। রাকেশ ফিরে যায়। জেরায় ধৃতেরা জানায়, গাড়িতে উঠেই শুভম চিৎকার শুরু করে। তাকে থামাতে মারধর শুরু করে বিশ্বজিৎরা। গলাও টিপে ধরে। পুলিশ জানায়, এর পরেই বেহুঁশ হয়ে গাড়ির সিটে নেতিয়ে পরে শিশুটি। দুষ্কৃতীরা তখন ভেবেছিল, শুভম মারা গিয়েছে।
পুলিশি জেরায় রাকেশরা আরও জানিয়েছে, শিশুটি ‘মরে’ গিয়েছে ভেবে দিশাহারা হয়ে পড়ে কোনা ও বিশ্বজিৎ। বারাসতের একটি ‘ডেরা’ থেকে ফোনে ওই শিশুটির গলা পরিজনদের শুনিয়ে টাকা আদায়ের ছক ছিল রাকেশদের। কিন্তু, শুভমের ওই অবস্থা দেখে চলন্ত গাড়ি থেকেই তার বাবা গোবিন্দ চক্রবর্তীকে ফোন করে বিশ্বজিৎরা। ২৫ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ চাওয়া হয়। এর পরেই হাড়োয়ায় এক নির্জন জায়গায় গাড়ি দাঁড় করিয়ে খালের জলে শুভমকে ফেলে পালায় দু’জনে। রাকেশ পুলিশকে জানায়, শুভমের বাবা গোবিন্দবাবু একটি গেঞ্জি কারখানা কর্মী হলেও তাঁর দোতলা বাড়িতে কয়েক ঘর ভাড়াটে আছেন। তাই গোবিন্দবাবুর রোজগার ভালই বলে ভেবেছিল রাকেশ। সে কারণেই ২৫ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ চাওয়া হয়। |