ন্যাটো ‘নির্বোধ’, বললেন হিনা
সেনার উপরে হামলা নিয়ে তদন্তের আশ্বাস হিলারির
পাক-আফগান সীমান্তে ন্যাটোর হানায় ২৮ জন পাক সেনার নিহত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ক্রমশ গভীর হচ্ছে পাক-মার্কিন সম্পর্কের ফাটল। আর তা মেরামত করতে তড়িঘড়ি আসরে নেমেছে আমেরিকাও। ঘটনার জন্য দুঃখপ্রকাশ করে পূর্ণাঙ্গ তদন্তের আশ্বাস দিয়েছেন মার্কিন বিদেশসচিব হিলারি ক্লিন্টন।
শুক্রবার রাতে পাক সীমান্তের মোহমান্দ অঞ্চলে পাক সেনার দু’টি সীমান্ত চৌকিতে হেলিকপ্টার থেকে গুলি চালায় ন্যাটো। এক মেজর ও এক ক্যাপ্টেন-সহ ২৮ জন এতে নিহত হয়েছেন বলে জানায় পাক সরকার। সেনা সূত্রের খবর, নিহতের সংখ্যা ২৪। আমেরিকার তরফে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার যাবতীয় প্রচেষ্টা সত্ত্বেও বিষয়টি নিয়ে যথেষ্টই আক্রমণাত্মক পাকিস্তান। পাক বিদেশমন্ত্রী হিনা রব্বানি খার এক বিবৃতিতে বলেছেন, “ন্যাটোর এই নির্বুদ্ধিতার ফলে দু’দেশের সম্পর্ক মজবুত করার প্রয়াস ধাক্কা খাবে।” আমেরিকার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নতুন করে ‘পর্যালোচনা’ করা হবে বলেও খার জানান। পাকিস্তানকে না জানিয়েই তাদের মাটিতে লাদেন-হত্যা অভিযান চালিয়েছিল আমেরিকা। সেই ঘা শুকোতে না শুকোতেই এই ঘটনা আরও এক বার পাক-মার্কিন সম্পর্ক বিষিয়ে তুলল।
ন্যাটোর গুলিচালনার বিষয়টি পর্যালোচনা করতে গত রাতে পাক প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানির নেতৃত্বে জরুরি বৈঠকে বসে ক্যাবিনেটের সুরক্ষা বিষয়ক কমিটি। উপস্থিত ছিলেন পাক সেনাপ্রধান আশফাক পারভেজ কিয়ানিও। ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কী পদক্ষেপ করা হবে, তা সেখানেই ঠিক হয়। আজ সকালে মার্কিন বিদেশসচিব হিলারি ক্লিন্টনকে সেগুলি স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দেন হিনা রব্বানি খার। তাঁর কথায়, “এই ঘটনা কোনও ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এটা আন্তর্জাতিক শিষ্টাচারের পরিপন্থী তো বটেই, পাকিস্তানের সার্বভৌমত্বের উপরেও সরাসরি আক্রমণ।” ঘটনার প্রতিবাদে আগামী মাসে বন শহরে আফগানিস্তান সংক্রান্ত সম্মেলনও বয়কট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পাকিস্তান। সম্মেলনে তালিবান মোকাবিলার ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বসার কথা ছিল খার এবং হিলারির। স্থলপথে ন্যাটো বাহিনীর চলাচলের সব রাস্তাও বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পাকিস্তান। পাকিস্তানের ভিতরে শামসিতে আমেরিকার গোপন বিমানঘাঁটি ১৫ দিনের মধ্যে খালি করে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ড্রোন হামলার জন্য সিআইএ শামসি বিমানঘাঁটি ব্যবহার করে।
ক্ষোভের আগুন মুলতানের রাস্তায়। ছবি -এ পি
পাকিস্তানের এই প্রতিক্রিয়ার পর নড়েচড়ে বসে ওবামা প্রশাসন। মার্কিন বিদেশ মন্ত্রক ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের তরফে যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, “হিলারি ক্লিন্টন এবং প্রতিরক্ষা সচিব লিওন পানেত্তা সেনাদের মৃত্যুর জন্য আন্তরিক ভাবে দুঃখিত। ওঁরা সব দিক খতিয়ে দেখছেন।” হিলারি জানান, সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা-সহ বিভিন্ন বিষয়ে পাকিস্তান আমেরিকার গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী। এই ধরনের ঘটনায় যাতে সেই সম্পর্কে কোনও প্রভাব না পড়ে, তা নিশ্চিত করতে সমস্ত সাহায্য করবে আমেরিকা। পাকিস্তান ঘটনার তদন্তে নামলে তাতেও আমেরিকা পূর্ণ সমর্থন দেবে বলে জানান হিলারি। ওয়াশিংটন সূত্রের খবর, পরিস্থিতি ‘আয়ত্তে’ রাখতে পাক প্রশাসনের সঙ্গে লাগাতার কথাবার্তা চালিয়ে যাচ্ছেন হিলারি-সহ ওবামা প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্তারা।
সুর নরম করেছে ন্যাটোও। ন্যাটোর প্রধান অ্যান্ডার্স ফগ রাসমুসেন এক বিবৃতিতে বলেন, “পাক প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে এই অনিচ্ছাকৃত ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছি। নিহত সেনাদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি।” সমবেদনায় অবশ্য ভুলছেন না পাকিস্তানের সাধারণ মানুষ। সংবাদপত্র থেকে শুরু করে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট সর্বত্রই ধিক্কার ন্যাটোর বিরুদ্ধে। দেশের কিছু অংশে রাস্তায় নেমেও প্রতিবাদে সামিল হয়েছেন মানুষ। বেশ কয়েকটি প্রথম সারির সংবাদপত্র ন্যাটোর বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেওয়ার পাশাপাশি ঘটনার জন্য পাক সরকারের ‘ভ্রান্ত নীতি’কেও দায়ী করেছে। কোনও কোনও কাগজ একে সরাসরি ‘মার্কিন অন্তর্ঘাত’ বলে বর্ণনা করেছে। পেশোয়ারে নিহতদের জন্য এক প্রার্থনাসভায় উপস্থিত ছিলেন কিয়ানি-সহ পাক সেনার বহু পদস্থ কর্তা।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.