|
|
|
|
|
মাটির মানুষ |
সাদা বোঁদেতেই খ্যাতি ভোলানাথের
অশোককুমার কুণ্ডু • জয়রামবাটি |
|
দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় এমন অনেক মানুষ আছেন, যাঁরা কোনও দিন সে অর্থে
আলোকবৃত্তে আসেননি। অথচ, তাঁরা গোটা জীবন ধরে জেলার মনন এবং সাংস্কৃতিক
মানচিত্রকে রঙিন করে তুলেছেন। মাটি থেকে উঠে আসা সেই সব মানুষের কথা। |
খাস কলকাতার কে সি দাসের রসগোল্লা কিংবা নকুড়ের সন্দেশ নয়। নয় বর্ধমানখ্যাত সীতাভোগ, মিহিদানা। একেবারে সাদামাঠা সাদা বোঁদে দিয়েই চার পুরুষ ধরে জেলার মিষ্টির জগৎকে একহাতে ধরে রেখেছেন কুঞ্জবিহারী, ক্ষুদিরাম, সত্যচরণ এবং বর্তমান প্রজন্ম ভোলানাথ পাল।
পদবি পাল বলতে যে কেউ ভেবে বসবেন প্রতিমাশিল্পীদের কথা। কিন্তু এ ক্ষেত্রে ঘটনা অন্যরকম। আদি গ্রাম বাঁকুড়ার দেশড়ায় মিষ্টি তৈরি করে ঝাঁকায় করে জয়রামবাটিতে এনে বিক্রি করতেন কুঞ্জবিহারী। পরে ধীরে ধীরে সমৃদ্ধ হল জনপদ। শ্রীমা সারদার জন্মস্থান এখন পর্যটনের অন্যতম ক্ষেত্র হয়ে ওঠায় সর্বদাই জমজমাট। মঠের বিশেষ উৎসব ছাড়াও নিত্যদিন যাত্রী আনাগোনার বিরাম নেই। সময়ের তাগিদে আর চাহিদায় গড়ে উঠেছে একাধিক মিষ্টির দোকান। সেখানে হরেক মিষ্টিও মেলে। কিন্তু খ্যাতিতে সকলের আগেই থেকে গিয়েছে সাদা বোঁদে।
ঝাঁকার বদলে গড়ে উঠেছে মা সারদার নামে বিখ্যাত মিষ্টান্ন ভাণ্ডার। মায়ের ঘাটের পাশেই। দোকানে ঢুকে পরিচয় আর প্রয়োজনের কথা বলতেই বেরিয়ে এল সাদা বোঁদের ঠিকুজি। “দেখুন, দোকানে খদ্দেরের চাহিদা থাকে হরেক রকমের মিষ্টির। কিন্তু এখানে সাদা বোঁদের চল বেশি। কামারপুকুর আর জয়রামবাটি ছাড়া আর কোথাও এটির দেখা পাবেন না। এখানে যত ভক্ত ও ট্যুরিস্ট আসেন এ কথা তাঁদেরই। আমরা তো আর কোথাও যাই-টাই না।”---ভিয়ানে কারিগরের হাতে টুপটুপ করে ভাজা হতে থাকা বোঁদের কড়াইয়ের দিকে তাকিয়ে কথা শেষ করেন ভোলানাথ। ছানতার ছ্যাঁদায় গলে, ফুলঝুরি ছড়িয়ে পড়ছে উত্তপ্ত কড়াইয়ে। আর সেই ফুলঝুরি ডুব দিচ্ছে চিনির সাগরে। কারিগর, সিহড়ের তরুণ শ্যামসুন্দর সিংহ বললেন, “একটু অপেক্ষা করুন, ভাজা শেষ করে আপনাকে সাদা বোঁদের ফ্যাক্টোটা (রেসিপি) শোনাব।”
শোনা গেল, সাদা বোঁদের রহস্যের দু’টি কারণ। এক, বোঁদে তেলে ভাজলেই তা লালচে হবে। সাদা বোঁদে তাই ভাজা হয় ঘিয়ে। আগে অবশ্য গাওয়া ঘিয়ে ভাজা হত। তবে এখন আর খরচায় পোষাতে পারা যায় না। দামও অনেক বেশি পড়ে যায়। তাই ডালডাতেই আশ্রয়। জানালেন ভোলানাথ।
সাদা বোঁদের জন্য কাঁচামাল হল বরবটির দানার গুঁড়ো যা ‘বরবটি বেসন’ নামে পরিচিত ময়রাদের কাছে। আগে স্থানীয় চাষিরাই বরবটি চাষ করে পাকা দানার জোগান দিতেন। এখন বরবটি বেসন চালানি হয়ে এখানকার বাজারে আসে কলকাতার বড় বাজার থেকে। বেসনের সঙ্গে দ্বিগুণ পরিমাণ মেশাতে হয় আতপ চালের গুঁড়ো।
সারারাত ভিজিয়ে রাখতে হয় মিশ্রণ। তার পর তা থেকে পেস্ট বা লেই তৈরি এবং বড় ছানতার অসংখ্য ছ্যাঁদার ভিতর দিয়ে গরম কড়াইয়ে ডালডায় ভাজা। ভাজা হলে গাঢ় চিনির রসে ডুবিয়ে রাখা। ব্যস, শো-কেসে হাজির সাদা বোঁদে।
সাদা বোঁদের কাহিনী শুনে ওঠার মুখে হঠাৎই সাক্ষাৎ রামকৃষ্ণ সারদা বিদ্যাপীঠের প্রাক্তন শিক্ষক কানাই বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। কানে ভেসে এল সনির্বন্ধ অনুরোধ, “একটু স্বাদ নিন। না হলে এর মাহাত্ম্য বুঝবেন কী করে?” |
|
|
|
|
|