পুর-স্বাস্থ্য
খাবি খাওয়া দফতর
গুরুত্বপূর্ণ পদগুলিতে বছরের পর বছর কর্মী নেই। কোনও কোনও পদ এমনকী, ২০ বছর ধরে শূন্য। ফলে কার্যত শিকেয় উঠেছে কাজকর্ম। ছবিটি হাওড়া পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের।
পুরসভার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দফতর স্বাস্থ্য। কিন্তু সেই দফতরে হেল্থ অফিসার, মেডিক্যাল অফিসার, ফুড ইনস্পেক্টরের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদগুলিতে কর্মী নেই। ফলে স্বাস্থ্য দফতর নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ পুরকর্মী, বিরোধী দল, এমনকী, খোদ মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) তথা ডেপুটি মেয়র কাবেরী মৈত্রেরও। তাঁর কথায়: “গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মী না থাকায় কাজের খুব অসুবিধা হচ্ছে। কোনও রকমে কাজ করতে হচ্ছে।”
কিন্তু এই অবস্থার পরিবর্তনে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি কেন? কাবেরীদেবীর বক্তব্য: “আগের সরকারের কাছে সমস্যাটি জানানো হয়েছিল। কিন্তু সেই সময় পুরসভার যে সব অফিসার এই বিষয়টির দায়িত্বে ছিলেন তাঁদের কাজে ত্রুটি ছিল। ফলে আজও সমস্যা মেটেনি।”
কী অবস্থায় রয়েছে পুরসভার স্বাস্থ্য দফতর?
পুরসভা সূত্রে খবর, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মী না থাকায় এক দিনের কাজ করতে দশ দিন লেগে যাচ্ছে। কখনও মাস গড়িয়ে যাচ্ছে। যেমন, পুরসভার কোনও ওয়ার্ড থেকে দূষণের অভিযোগ এলে তা খতিয়ে দেখতে অনেক সময় লেগে যাচ্ছে। কেননা, পাঁচ জনের জায়গায় এই মুহূর্তে মাত্র দু’জন স্যানিটারি ইনস্পেক্টর রয়েছেন। প্রায় আট বছর ধরে হেল্থ অফিসার না থাকায় ডেপুটি হেলথ অফিসারকেই দফতরের সমস্ত কাজকর্ম চালাতে হচ্ছে। তা ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ পদগুলিতে লোক না থাকায় কয়েক জন কর্মীর উপরে অত্যধিক কাজের চাপ পড়ছে।
হাওড়া পুরসভার ৫০টি ওয়ার্ড। লোকসংখ্যা প্রায় ১৪ লক্ষ। পুরসভার স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সংখ্যা ১৯। কিন্তু অধিকাংশই বেহাল। নগরবাসীর অভিযোগ, সেখানে পরিষেবা মেলে না বললেই চলে। কারণ, ইতিমধ্যেই তিন জন মেডিক্যাল অফিসার অবসর নিয়েছেন। বাকিদের তিনটি করে স্বাস্থ্যকেন্দ্র সামলাতে হয়। আবার পুরসভার প্রতিটি ওয়ার্ডে মশা-মাছি দমনের তেল, ব্লিচিং ঠিক ভাবে ছড়ানো হচ্ছে কি না দেখার জন্যও কোনও ভেক্টর কন্ট্রোল অফিসার নেই। ফলে সেই কাজেও ঘাটতি থেকে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পাশাপাশি, কোনও এলাকায় ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়লেও তা দেখভালের কোনও ব্যবস্থা নেই।
হাওড়া পুরসভার বিভিন্ন এলাকায়, বিশেষত জিটি রোড, হাওড়া স্টেশন চত্বর, বেলিলিয়াস রোড-সহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় ঘুরলেই চোখে পড়বে, রাস্তার ধারে বিক্রি হচ্ছে রঙিন পানীয়, কাটা ফল, খাবার। ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে হোটেল। কিন্তু সেই সব খাবারের মান পরীক্ষার কোনও ব্যবস্থা পুরসভার নেই। কারণ, ২০ বছর ধরে ফুড ইনস্পেক্টরের পদটি শূন্য।
হাওড়ার পাঁচটি সংযোজিত ওয়ার্ড। পুরসভা সূত্রে খবর, নিকাশি, জঞ্জালের কারণে দূষণের অভিযোগ সব থেকে বেশি আসে ওই সব এলাকা থেকেই। কিন্তু স্যানিটারি ইনস্পেক্টরের সংখ্যা কম হওয়ায় সব অভিযোগ খতিয়ে দেখা সম্ভব হয় না। প্রাক্তন কাউন্সিলর তথা জেলা কংগ্রেস নেতা সৌমেন দে বলেন, “পুরসভা উদ্যোগী নয়। স্বাস্থ্য দফতরে কর্মীর অভাবে পুরসভার ৫০টি ওয়ার্ডের জনস্বাস্থ্য পরিষেবা বিপর্যস্ত। আমরা সরকারের কাছে আবেদন করব অবিলম্বে এই ব্যর্থ পুরবোর্ড ভেঙে দেওয়ার জন্য।”
হাওড়া পুরসভা সূত্রে খবর, বর্তমানে স্বাস্থ্য দফতরের যে গুরুত্বপূর্ণ পদগুলিতে কর্মী নেই সেগুলি হাওড়া মিউনিসিপ্যালিটি থাকার সময়ে অনুমোদন পেয়েছিল। কর্পোরেশন হওয়ার পরেও সেই সংখ্যা বাড়েনি। তা ছাড়া পদগুলিও ফাঁকা। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্বাস্থ্যকর্মীর কথায়: “ফাঁকা পদগুলিতে কর্মী এলেও এত বড় এলাকায় ঠিকমতো কাজ করা সম্ভব নয়। শূন্যস্থান পূরণের পাশাপাশি পদের সংখ্যাও বাড়ানো উচিত।” ডেপুটি মেয়র কাবেরীদেবী বলেন, “ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকারের কাছে ফের বিষয়টি জানানো হয়েছে। পুরমন্ত্রীও বিষয়টি জানেন। আশা করা যায়, সমস্যা মিটবে।”
যদিও পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, “আজ পর্যন্ত ওরা আমায় অন্তত কিছু জানায়নি। ডেপুটি মেয়র তথা মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য)-কে আমি চিনিই না। আসলে হাওড়া পুরসভার সমস্ত বিষয় ভুলে ভরা। এর আগেও এই পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ পেয়েছি। ওরা উদ্যোগী হয়ে আমাদের জানালে ব্যবস্থা নিতে পারব।”

পদ পূরণ কবে
পদের নাম মোট পদ শূন্য পদ
স্বাস্থ্য আধিকারিক ১ (৮ বছর ধরে)
মেডিক্যাল অফিসার
(অ্যালোপ্যাথি)
স্যানিটারি ইনস্পেক্টর
ফুড ইনস্পেক্টর ২ (২০ বছর ধরে)

ছবি: রণজিৎ নন্দী




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.