বসতে চায় ছত্তীসগঢ়
মমতার পথই একমাত্র পথ, অভিনন্দন রমনের
শুধু নয়াদিল্লি নয়। যৌথবাহিনীর হাতে কিষেণজির মৃত্যুকে মমতা সরকারের রণকৌশলের ‘বড় সাফল্য’ হিসেবে দেখছে মাওবাদী সংগঠনের ‘স্নায়ুকেন্দ্র’ বলে পরিচিত ছত্তীসগঢ়ের সরকারও। মাওবাদী দমন অভিযানে পশ্চিমবঙ্গের ‘পন্থা’কে স্বাগত জানিয়ে ওই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, মাওবাদী সমস্যা নিয়ে তিনি শীঘ্রই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন।
প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম থেকে শুরু করে কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বের মতে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অত্যন্ত বিচক্ষণতার সঙ্গে অভিযান পরিচালনায় পরামর্শ জুগিয়েছেন। একই প্রশংসার প্রতিধ্বনি আজ শোনা গিয়েছে ছত্তীসগঢ়ের মুখ্যমন্ত্রী রমন সিংহের মুখে। যিনি বলেছেন, “মাওবাদীদের নিশ্চিহ্ন করার প্রক্রিয়ায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গত কাল যে সাফল্য অর্জন করেছেন, সে জন্য তাঁকে সাধুবাদ জানাই।” রমনের মতে, “মাওবাদ দমনে চার রকমের পন্থা নেই। পন্থা একটাই। আর সেটা কোনও রাজ্যের নয়, তা জাতীয় পন্থা।”
তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের আশঙ্কা, কিষেণজির মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে মাওবাদীরা পাল্টা হানার চেষ্টা করতে পারে। যে কারণে, কেন্দ্র ও রাজ্য দু’পক্ষকেই এখন অনেক বেশি সতর্ক হতে হবে। কেন্দ্র চায়, মাওবাদী মোকাবিলায় ঝাড়খণ্ড-ছত্তীসগঢ়-পশ্চিমবঙ্গ পারস্পরিক সমন্বয় আরও বাড়িয়ে তুলুক। যে কারণে তিন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের মধ্যে বৈঠক আয়োজনের বিষয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে। বস্তুত এই মুহূর্তে রমন সিংহও তা চাইছেন। ছত্তীসগঢ়ের মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, “ছত্তীসগঢ়ে মাওবাদীরা মমতার বিরুদ্ধে পোস্টার লাগিয়েছে। এ ব্যাপারে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। খুব শিগগিরই আমরা মমতার সঙ্গে আলোচনায় বসব।”
মাওবাদী দমন অভিযান নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘সাফল্য’ ও ‘বিচক্ষণতা’ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র-সচিব রাজকুমার সিংহ আজ বলেন, “পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চেয়েছিলেন, মাওবাদী নেতারা যাতে আত্মসমর্পণ করেন। বারবার জানানো হয়েছিল, ধরা দিলে তাঁদের চিকিৎসার দায়িত্ব সরকার নেবে। কিন্তু মাওবাদীরা রাজি হননি। অগত্যা যৌথবাহিনীকে খতম অভিযানে নামতে হয়েছে।” অভিযানে গত কাল সাফল্য মিলল কী ভাবে?
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের মতে, বিভিন্ন বাহিনীর মধ্যে যথাযথ সমন্বয়সাধনই ছিল সাফল্যের চাবিকাঠি। মন্ত্রকের বক্তব্য: আধা ফৌজিরা জঙ্গল-যুদ্ধে দড় ঠিকই, কিন্তু তাঁদের অধিকাংশই বহিরাগত। ফলে এলাকার ভূগোল সম্পর্কে রাজ্য পুলিশের উপরে তাদের নির্ভর করতে হয়। এ ব্যাপারে রাজ্য পুলিশ যথাযথ সাহায্য করেছে। উপরন্তু কেন্দ্রীয় ও রাজ্য গোয়েন্দারাও সিআরপি এবং রাজ্য পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে গিয়েছেন।
এর আগে বেশ ক’বার কিষেণজিকে ধরার চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। বাম জমানায় যা সম্ভব হয়নি, এ বার তা হল কী ভাবে?
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব বলেন, “স্থানীয় গ্রামবাসীও মাওবাদী-দৌরাত্ম্যের বিরোধিতা শুরু করেছেন। উন্নয়নের প্রশ্নে সরকারের সদর্থক অবস্থান গ্রামীণ জনসমাজে মাওবাদী নিয়ন্ত্রণ শিথিল করে দিয়েছে।” কেন্দ্র মনে করছে, মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে মমতা যে ভাবে কর্মসংস্থানের
সুযোগ তৈরি করেছেন, যে ভাবে গ্রামীণ উন্নয়নের স্রোত জঙ্গলমহলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, সেটাও এ ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা নিয়েছে। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়নমন্ত্রী জয়রাম রমেশের বৈঠক ও পরে তাঁর জঙ্গলমহল সফরও গ্রামবাসীদের মনোবল বাড়িয়েছে।
সরকারি সূত্রের বক্তব্য: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মাওবাদীদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার কথা বলেছেন। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী এ-ও বলেছেন, আলোচনা তখনই হতে পারে, যখন মাওবাদীরা হিংসা ছেড়ে সংবিধানে আস্থা রাখবে। কিন্তু এ ব্যাপারে মধ্যস্থ মারফত বারবার অনুরোধ পাওয়া সত্ত্বেও মাওবাদীরা শান্তি প্রস্তাবে রাজি হয়নি। ফলে বাধ্য হয়ে মমতাকে যৌথ অভিযানের পথে যেতে হয়। যদিও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের খবর: আধাসেনা মোতায়েন থাকা সত্ত্বেও যে হেতু রাজ্যে কোনও অভিযান হচ্ছিল না, তাই একটা সময়ে কিছু বাহিনী ফিরিয়ে আনার কথা ভেবেছিল কেন্দ্র। এ নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র-সচিব আলোচনাও করেন রাজ্যের মুখ্যসচিবের সঙ্গে। কিন্তু মুখ্যসচিব আরও সময় চান। রাজ্য সরকার ফের মাওবাদীদের সঙ্গে আলোচনার চেষ্টা চালায়।
তবে তা সফল হয়নি। কেন?
কারণ, মাওবাদী সংগঠনের পলিটব্যুরো কোনও একটা রাজ্যে পৃথক সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। মন্ত্রকের খবর: সেই পলিটব্যুরোর সিদ্ধান্তমতোই মাওবাদীরা আলোচনায় বসার জন্য আধাসেনা প্রত্যাহারের শর্ত আরোপ করে। যাতে মমতা রাজি হননি। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য ছিল: হত্যা চালিয়ে যেতে যেতে আলোচনা হতে পারে না। হত্যা বন্ধ না-হলে আধাসেনা প্রত্যাহারই বা হবে কী করে?
ফলে যৌথবাহিনীর তল্লাশি চলতে থাকে। মন্ত্রকের দাবি, বুড়িশোলে গতকালের অভিযানের আগে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে খবর আসে, কিষেণজি-সহ মাওবাদীদের বেশ কিছু নেতা এক গোপন জায়গায় মিলিত হয়েছেন। কয়েক জন বিশিষ্ট নেতাকে একসঙ্গে হত্যার ছক কষছেন তাঁরা। এটা জানতে পেরেই মমতা অভিযানে সবুজ সঙ্কেত দিয়েছিলেন। কেন্দ্রের বক্তব্য: মুখ্যমন্ত্রীর অনুমতি ছাড়া রাজ্যে কখনওই যৌথ অভিযান হতে পারে না। কিষেণজিকে হত্যার সিদ্ধান্তটা তাঁর নয়, তবে যৌথ অভিযানের অনুমতি তিনি আগাম দিয়েছিলেন। মমতা অবশ্য জোর দিয়েছিলেন সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে অভিযানের উপরে। বলেছিলেন, নিরীহ মানুষের মৃত্যু যেন না হয়। আত্মসমর্পণ-নীতি পর্যালোচনার জন্যও মমতা দিল্লির কাছে আর্জি জানিয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন, যাদের গ্রেফতার করা হবে, তারা আর আত্মসমর্পণ করবে কেন? বরং তাঁর মতে, ধরা দেওয়া মাওবাদীদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে সরকারকে সামাজিক দায়িত্ব নিতে হবে, তাদের পুনর্বাসনের বন্দোবস্ত করতে হবে। মমতার কথা মেনে কেন্দ্রীয় সরকার আত্মসমপর্ণ-নীতি পর্যালোচনার সিদ্ধান্তও নিয়েছে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.