অর্থের অভাবে থমকে গিয়েছে ময়ূরেশ্বরের লোকপাড়া কলেজের বাড়ি নির্মাণের কাজ। এ ফলে ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে চরম দুঃশ্চিন্তায় পড়েছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ।
কলেজ এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় তিন দশক আগে প্রয়াত শিক্ষাবিদ নব কিশোর হাজরার নেতৃত্বে এলাকার শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষেরা ময়ূরেশ্বর থানার লোকপাড়ায় একটি কলেজ স্থাপনে উদ্যোগী হয়েছিলেন। কলেজ স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় জমি ও টাকা সংগ্রহ করা সত্বেও সরকারি সদিচ্ছার অভাবে সেই উদ্যোগ ফলপ্রসু হয়নি। বছর দু’য়েক আগে এলাকার বাসিন্দারা ফের ওই কলেজ স্থাপনের জন্য সচেষ্ট হন। তাঁরা গ্রামে গ্রামে গিয়ে চাঁদা তুলে ফের আরও ৬ একর জমি কিনে দেন কলেজের নামে। এর মধ্যে কিছু জমি দান করেন স্থানীয় লোকপাড়া হাইস্কুল কর্তৃপক্ষ। ব্যাঙ্কে জমা রাখা হয় কলেজ স্থাপনের জন্য ১৫ লক্ষ টাকা। ২০১০ সালে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় এবং রাজ্য উচ্চ শিক্ষা দফতর কলেজ স্থাপনের অনুমোদন দেয়। |
অসম্পূর্ণ লোকপাড়া কলেজ। ছবি: সোমনাথ মুস্তাফি। |
৫০ জন পড়ুয়া এবং কয়েক জন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকের স্বেচ্ছাশ্রমে সকালের দিকে লোকপাড়া হাইস্কুলে শুরু হয় পঠনপাঠন। ওই বছরই কলেজের নিজস্ব ভবন গড়ে তোলার জন্য এলাকার প্রাক্তন বিধায়ক সাধুচরণ বাগদি এবং সাংসদ রামচন্দ্র ডোমের কোটায় প্রায় ৩৫ লক্ষ টাকা মেলে। ওই টাকায় শুরু হয় কলেজের বাড়ি নির্মাণের কাজ। কিন্তু অর্থাভাবে মাস তিনেক ধরে সেই বাড়ি তৈরির কাজ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এর ফলে সমস্যায় পড়েছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ।
কলেজ পরিচালন সমিতির সহসম্পাদক সুভাষচন্দ্র ঘোষ বলেন, “শর্ত অনুযায়ী তিন বছরের মধ্যে কলেজের নিজস্ব বাড়িতে উঠে যেতে হবে। অথচ বরাদ্দ টাকায় বাড়ির ভিত পর্যন্ত গড়ে ওঠেনি। এলাকার বাড়ি তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী পাহারা দিতে কলেজের নিজস্ব তহবিল থেকে ৩ হাজার টাকা করে খরচ হচ্ছে। কী হবে বুঝতে পারছি না!”
কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথম এবং দ্বিতীয় বর্ষ মিলিয়ে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ২৬৮ জন। ইতিহাস ও বাংলা বিষয়ে অনার্স-সহ ৭টি বিষয়ে পঠনপাঠনের জন্য স্বেচ্ছাশ্রমে পাঠ দিয়েছেন ১৬ জন শিক্ষক। সারা বছরই লোকপাড়া স্কুলের তিনটি ঘরে চলছে ক্লাস। একটাই অফিসঘর। শিক্ষকদের বসার জন্য নেই অন্য কোনও ঘর। পড়ুয়া সুলেখা মণ্ডল, সৃষ্টিধর বায়েন।, বর্ষা পাল, মনিরুল শেখদের কথায়, “সারা বছর বিশেষত শীতের সময়ে সকালে কলেজে আসা যাওয়া করতে আমাদের ভীষণ কষ্ট হয়।” অন্য দিকে, শিক্ষক শিবপ্রসাদ ঘোষ, আদিত্য মুখোপাধ্যায়রা বলেন, “শিক্ষকদের আলাদা বসার ঘর না থাকায় আমাদের সমস্যা হয়।” লোকপাড়া হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক তথা ওই কলেজ কমিটির অন্যতম সদস্য অভিজিৎ দে বলেন, “তিন বছরের জন্য আমরা কলেজ কর্তৃপক্ষকে স্কুল ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছি। সকালের দিকে স্কুল হলে অসুবিধা হয়। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কলেজের কাজ না শেষ হলে পরিচালন সমিতির সঙ্গে আলোচনা করে স্কুলে কলেজ চালানোর সময়সীমা বাড়ানো যায় কি না আলোচনা করে দেখা হবে।”
কলেজের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক অনুকুল শীল বলেন, “সরকার অনুমোদিত জেলার সর্বশেষ কলেজ লোকপাড়া। শুধু বীরভূম নয়, লাগোয়া মুর্শিদাবাদের সামাজিক এবং আর্থিক দিক থেকে পিছিয়ে পড়া তফসিলি আদিবাসী ও সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকার এই কলেজটির উপরে প্রায় ১৮-২০টি স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা নির্ভরশীল। কিন্তু অর্থাভাবে কলেজের বাড়ি নির্মাণের কাজ বন্ধ হয়ে আছে। ফলে কলেজের অগ্রগতি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। সম্প্রতি রাজ্যসভার সাংসদ এ এস মালিহাবাদী সাংসদ কোটার ২৫ লক্ষ টাকা পাওয়া গিয়েছে। শীঘ্রই কাজ শুরু করা যাবে। কিন্তু বাড়ির কাজ সম্পূর্ণ করার জন্য আরও অনেক টাকার প্রয়োজন। তাই পঞ্চায়েত এবং গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রীর কাছে আর্জি জানানো হয়েছে।”
পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ বলেন, “কলেজ কর্তৃপক্ষের আবেদন খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য উচ্চ শিক্ষা দফতরের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হবে।” |