এজলাসে ঢোকার মুখে দেহতল্লাশি নিয়ে বিবাদের জেরে কর্তব্যরত এক মহিলা পুলিশকর্মীর সঙ্গে বিচারপ্রার্থী এক মহিলার মারপিটে রক্ত ঝরল আদালতে। মঙ্গলবার সকাল ১১টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটে উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জ জেলা ও দায়রা বিচারক দীপঙ্কর দাসের এজলাসের সামনে। আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই মহিলা পুলিশকর্মীর নাম সাকিনা খাতুন। তিনি কনস্টেবলের পদে জেলা ও দায়রা বিচারকের এজলাসের নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন। বিচারপ্রার্থী ওই মহিলার নাম মোমিনা বিবি। তাঁর বাড়ি বাঁকুড়া জেলার মজুরডাঙ্গা এলাকায়। মোমিনকা গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
উত্তর দিনাজপুর জেলা পুলিশ সুপার দীপঙ্কর ভট্টাচার্য বলেন, “ওই মহিলা পুলিশকর্মী এবং বিচারপ্রার্থী মহিলার সঙ্গে কথা বলে তদন্ত শুরু করা হয়েছে। আদালতের নিরাপত্তা আরও বাড়ানো হয়েছে।” রায়গঞ্জের কোর্ট ইন্সপেক্টর রবিন মুর্মু বলেন, “ওই ঘটনার পর থেকে আদালতের নিরাপত্তার দায়িত্বে পুলিশকর্মীরা আতঙ্কে কাজ করতে চাইছেন না। সমস্ত বিষয় জেলা পুলিশ সুপারকে জানিয়েছি।” পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এদিন ওই মহিলা জেলা ও দায়রা বিচারকের এজলাসে থাকা এক আইনজীবীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। এজলাসে ঢোকার আগে ওই মহিলা পুলিশ কর্মী মোমিনা বিবির ব্যাগ ও দেহ তল্লাশি করতে গেলে দু’জনের মধ্যে বচসা হয়। কনস্টেবলের অভিযোগ, ওই মহিলা তল্লাশিতে বাধা দেন। জোর করে এজলাসে ঢুকতে যান। বাধা দিলে গোলমাল শুরু হয়। বিচারপ্রার্থী ওই মহিলা কনস্টেবলকে এলোপাথারি চড় মারতে থাকেন। কনস্টেবলের চুলের মুঠি টেনে ধরে তাঁর ডান হাতের কব্জির নীচে কামড় বসিয়ে দেন বলে দাবি। মোমিনার পাল্টা দাবি, তিনি এজলাসে ঢুকতে চাননি। কর্তব্যরত পুলিশ কর্মীদের এক আইনজীবীকে ডেকে দিতে বলেছিলেন। সেই সময় সাকিনা তাঁর চুলের মুঠি ধরে মেঝেতে ফেলে কিল, চড়, ঘুষি ও লাথি মারেন। তাঁর ডান ঘাড়ের কাছে ওই মহিলা পুলিশ কর্মী কামড়ে দেন বলেও তিনি অভিযোগ করেছেন। পরে অপর পুলিশ কর্মীরা তাঁদের সরিয়ে দেন। ঘটনার পরে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ কর্মীরা কোর্ট ইন্সপেক্টরকে ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান। জেলা পুলিশ সুপারের আশ্বাসে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। এদিন বিকালে সাকিনা বিচারপ্রার্থী ওই মহিলার বিরুদ্ধে কোর্ট ইন্সপেক্টরের মাধ্যমে রায়গঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় ১২ বছর আগে মোমিনা বিবির সঙ্গে ইটাহার থানার পাথরপাড়া এলাকার বাসিন্দা নৃপেন সরকারের বিয়ে হয়। তাঁদের ৬ বছরের একটি ছেলে ও ৯ বছরের একটি মেয়ে রয়েছে। প্রায় তিন বছর আগে স্বামী সহ শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে ইটাহার থানায় বধূ নির্যাতনের মামলা দায়ের করে বাপের বাড়ি চলে যান। স্বামী বাদে ওই মামলায় সমস্ত অভিযুক্তরা গ্রেফতার হয়। সম্প্রতি নৃপেন সরকারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে আদালত। ওই মমালার বিষয়েই এদিন আইনজীবীর সঙ্গে দেখা করতে আদালতে যান মোমিনা। তিনি বলেন, “স্বামী এখনও কেন গ্রেফতার হচ্ছে না তা জানতে আদালতে যাই। আইনজীবী আদালতে বসেছিলেন। কর্তব্যরত পুলিশ কর্মীদের আইনজীবীকে ডেকে দিতে বলেছিলাম। সেই সময় দেহতল্লাশির নাম করে ওই মহিলা পুলিশ কর্মী আমাকে মারধর করেন। পুলিশ আমাকে আটকে রাখায় থানায় অভিযোগ জানাতে পারিনি।”
কনস্টেবল সাকিনা খাতুন বলেন, “নিরাপত্তার স্বার্থে এজলাসে ঢুকতে যাওয়া প্রত্যেকের দেহ তল্লাশি করা হয়। মোমিনা বিবি এজলাসে ঢুকতে চাইলে তাঁর দেহতল্লাশি করতে যাই। সেই সময় ওই মহিলা আমাকে এলোপাথারি মারধর করে। সহকর্মীরা এগিয়ে না এলে বড় কিছু হতে পারত। থানায় অভিযোগ জানিয়েছি।” |