ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্ট পেয়ি চেকের মাধ্যমে সরাসরি চাষিদের থেকে ধান কেনার উদ্যোগের প্রতিবাদে বিক্ষোভ দেখালেন দক্ষিণ দিনাজপুরের চাষিদের একাংশ। সোমবার থেকে গঙ্গারামপুরের ফুলবাড়ি এলাকায় সরকারি সহায়ক মূল্যে ধান কেনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে প্রশাসন। তবে চেকে ধানের দাম মেটানোয় এবং খোলা বাজারে ধান বিক্রি শুরু না হওয়ায় ক্ষুব্ধ চাষিদের একাংশ। মঙ্গলবার দুপুরে তপন ব্লকের বটতলায় শতাধিক চাষি ধান বিক্রি করতে না পেরে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান। তাঁদের অভিযোগ, “খোলা বাজারে কেউ ধান কিনছেন না। সরকারি তরফে সব জায়গায় ধান কেনার ব্যবস্থা হয়নি। কোথায় যাব বুঝতে পারছি না।” জেলা খাদ্য নিয়ামক ভাস্কর হালদার বলেন, “জেলার কয়েকটি ব্লকে ধান কেনার ব্যবস্থা হয়েছে। তবে যা ধান উৎপন্ন হয়েছে তার সিকিভাগ সরকারি ব্যবস্থায় কেনা সম্ভব। আবার খোলা বাজারে ধান বেচাকেনার অনুমতি দিয়ে দাম পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সরকারি পর্যায়ে আলোচনা চলছে।” দক্ষিণ দিনাজপুরে এবার ৬ লক্ষ টন ধান উৎপাদন হয়েছে। চালকলগুলির মাধ্যমে প্রতি কুইন্টাল ১ হাজার ৮০ টাকা করে ধান কেনা হচ্ছে। ফড়ে এবং দালালদের দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে চাষিদের চেকে দাম দেওয়া হচ্ছে। বহু চাষি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট না থাকায় ধান বিক্রি করতে পারেননি। তাঁরা নগদে ধান কেনার দাবি তুলেছেন। সব মিলিয়ে সরকারিভাবে প্রায় ৭০ হাজার টনের বেশি ধান কেনা সম্ভব নয় বলে খাদ্য নিয়ামক জানিয়েছেন। কিন্তু বাকি ধান কারা কিনবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ দিন বালুরঘাটে প্রশাসনিকস্তরে এক বৈঠক করেন তৃণমূলের তিন বিধায়ক হরিরামপুরের বিপ্লব মিত্র, তপনের বাচ্চু হাঁসদা এবং কুমারগঞ্জের মাহমুদা বেগম। বিপ্লববাবু বলেন, “৪২টি চালকলের উপর ২০ হাজার টন লেভি চাল ধার্যের কোটা বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। হিলি দিয়ে বাংলাদেশে চাল রফতানির অনুমোদনে বাড়তি ধানের সমস্যা মিটতে পারে।” দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলাশাসক দুগার্দাস গোস্বামী বলেন, “সরকারি ভাবে সমস্ত ধান কেনা সম্ভব নয়। বিধায়কদের প্রস্তাব উচ্চ পর্যায়ে জানানো হয়েছে।” অন্য দিকে, এ দিন সরকারের সহায়ক মূল্যে কেনা ধান থেকে তৈরি চাল বদলে দেওয়ার অভিযোগ তুলে কোচবিহারের জেলাশাসক ও খাদ্য নিয়ামককে স্মারকলিপি দেয় কোচবিহারের যুব কংগ্রেস। সংগঠনের সভাপতি অভিজিৎ দে ভৌমিক অভিযোগ করেন, দারিদ্রসীমার নীচে বসবাসকারীদের সহায়ক মূল্যে কেনা ধান থেকে পাওয়া চাল বিলির কথা। কিন্তু খাদ্য দফতরের একাংশ ও কিছু প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতার মদতে ওই চাল বদলে ভিন রাজ্যে গুদামজাত থাকা খাবার অযোগ্য চাল বিলি হচ্ছে। তিনি বলেন, “বাম আমলে যে সব মিল মালিক ওই ধান কেনার দায়িত্ব পেতেন তাঁদের এ বারও দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ফলে খাবার অযোগ্য গত মরসুমের মজুত চাল সরবরাহ সহজ হয়েছে। তৃণমূল বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ঘোষের ছাতার তলায় বসে চাল বদলের কারবার হচ্ছে বলেও আমরা শুনেছি। বিষয়টির তদন্ত হওয়া উচিত।” তৃণমূল বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বিষয়টি উড়িয়ে দিয়ে বলেন, “আমাদের সরকার স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করছে, করবেও।” কোচবিহারের খাদ্য নিয়ামক মানিকলাল দাস বলেন, “জেলার ৫টি চালকলের মালিকেরাই এ বারে ধান কেনার জন্য নিয়ম মেনে প্রাথমিক চিঠি পান। তার পরেও কেউ আবেদন করলে তাও দেখা হবে। চালের গুণগত মান খতিয়ে দেখেই আমরা নিই। তা বদলে দেওয়ার ব্যাপার নেই।” কোচবিহারের জেলাশাসক মোহন গাঁধী বলেন, “বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।” |