বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল |
যাত্রীনিবাস ছোট, সমস্যায় রোগীর আত্মীয়-পরিজনেরা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • বাঁকুড়া |
রাত নামলেই সমস্যায় পড়ছেন বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীর পরিজনেরা। কারণ, হাসপাতাল চত্বরে একটি যাত্রীনিবাস থাকলেও সেখানে অধিকাংশের থাকার জায়গা হচ্ছে না। শীতের শুরুতে তাই খোলা আকাশের নীচে রাত কাটাতে অনেকে খুব কষ্ট পাচ্ছেন। অল্প পরিসরের এই যাত্রীনিবাস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রয়োজনের তুলনায় যে যথেষ্ট নয়, তা মেনে নিয়েছেন খোদ হাসপাতাল সুপারও।
রাঢ় বাংলার বাসিন্দারা এই মেডিক্যাল কলেজের উপরে নির্ভরশীল। বাঁকুড়া, পুরুলিয়া ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার একাংশের বাসিন্দারা এখানে চিকিৎসা করাতে আসেন। ফলে রোগীর চাপের সঙ্গে তাঁদের পরিজনদেরও চাপ থাকে। রোগীর পরিজনেদের ক্ষোভ, রাজ্যের অন্যান্য জায়গায় কয়েকটি জেলা সদর হাসপাতালে রীতিমতো বড় আয়তনের যাত্রীনিবাস রয়েছে। কিন্তু, বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রোগীর আত্মীয় স্বজনদের রাতে মাথা গোঁজার মত সেরকম জায়গা নেই। কয়েক বছর আগে একটি ব্যাঙ্কের উদ্যোগে স্ত্রী ও প্রসূতি বিভাগের পাশে একটি যাত্রীনিবাস তৈরি হয়। কিন্তু, তা পর্যাপ্ত নয়। সেখানে মাথা পিছু দু’টাকা ভাড়া দিয়ে থাকা যায়। কিন্তু তা প্রয়োজনের তুলনায় খুব ছোট। এই মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গড়ে দৈনিক ১১০০ রোগী থাকেন। তাদের অনেকের পরিজনেরা হাসপাতালে থাকেন। যাত্রীনিবাসে তাঁদের সবার ঠাঁই হয় না। এই যাত্রীনিবাসের দেখাশোনার দায়িত্বে রয়েছে একটি ক্লাব। জানা গিয়েছে, যাত্রীনিবাসে পুরুষ ও মহিলাদের জন্য দু’টি ঘর রয়েছে। সেখানে ১২০ জন পুরুষ-মহিলার শোবার জায়গা রয়েছে। ঠাসাঠাসি করে অনেক ক্ষেত্রে ১৮০ জন পর্যন্ত থাকেন। কিন্তু গরমকালে ঠাসাঠাসি করে অতজন থাকতে পারেন না।
রোগীর পরিজনেরা জানিয়েছেন, গরমকালে তবুও হাসপাতাল চত্বরে গাছের তলায় খবরের কাগজ বা গামছা, কাপড় বিছিয়ে শুয়ে থাকা যায়। কিন্তু শীত ও বৃষ্টির মধ্যে তাঁদের চরম ভোগান্তির শিকার হতে হয়। এখন শীত শুরুর মুখে হাসপাতালে গিয়ে রোগীর পরিজনদের কাছে রাত কাটানোর তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা শোনা গেল। গঙ্গাজলঘাটির বাসিন্দা সুভাষ পাল বলেন, “হাসপাতালে মা’কে ভর্তি করেছি। রাতে হাসপাতালে থাকা দরকার বলে বাড়ি ফিরিনি। যাত্রীনিবাসেও জায়গা পাইনি। এই ঠাণ্ডার মধ্যের খোলা আকাশের নীচে রাত কাচাতে হয়েছে। ঠাণ্ডা লেগে নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়েছি।”
অনেকে বাধ্য হয়ে রাত কাটাচ্ছেন বাঁকুড়া শহরের লজ, হোটেলে। কিন্তু সেখানে রাত কাটাতে গিয়ে অনেকের আবার হাসপাতালে ভর্তি থাকা আত্মীয়ের জন্য দুঃশ্চিন্তায় ঘুম আসে না। সিমলাপালের স্বপন আচার্য বলেন, “হাসপাতালে রাতে থাকার জায়গা পাইনি। একটা হোটেয়ে থাকতে হচ্ছে। কিন্তু হাসপাতাল থেকে দূরের হোটেলে থেকে কী লাভ? অসুস্থ মায়ের জন্য ওষুধ নিয়ে আসা বা অন্য কোনও প্রয়োজনে হাসপাতালের কর্মীরা ডাকাডাকি করলেও আমি জানতে পারবো না।” তাঁদের দাবি, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবিলম্বে এই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা উচিত।
হাসপাতালের সুপার পঞ্চানন কুণ্ডু বলেন, “ওই যাত্রীনিবাসটি প্রয়োজনের তুলনায় ছোট। এ জন্য রোগীর পরিজনদের সমস্যা হয়।” তাঁর আশ্বাস, “হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কাছে একটি বড় যাত্রীনিবাস তৈরি করার পরিকল্পনা রয়েছে। সেই যাত্রীনিবাসটি তৈরি হলে আশাকরি তাঁদের রাত কাটানোর সমস্যা অনেকটাই মিটে যাবে।” |