হাসপাতালের ‘ব্যামো’ দূর করতে দশ দফা ‘দাওয়াই’ বাতলে দিলেন খোদ সুপারই। গত ১৯ তারিখ হাসপাতালের সরকারি প্যাডে লেখা সেই নির্দেশ ইতিমধ্যে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে চিকিৎসকদের কাছেও। করিমপুর গ্রামীণ হাসপাতালের সুপার বিধুভূষণ মাহাতো বলেন, ‘‘হাসপাতালে সুস্থ পরিবেশ ফেরাতে এই ব্যবস্থা। চিকিৎসার পাশাপাশি কিছু দায়িত্বও পালন করার কথা বলা হয়েছে চিকিৎসকদের। এর ফলে যেমন রোগীরা উপকৃত হবেন তেমনি হাসপাতালে কাজের ক্ষেত্রেও সুস্থ পরিবেশ বজায় থাকবে। দায়িত্ব কিন্তু কোনও চিকিৎসকের একার নয়, এটা টিমওয়ার্ক। তাই নির্দেশ মেনে চললে সকলেই লাভবান হবেন।’’
করিমপুর গ্রামীণ হাসপাতালের পরিষেবা নিয়ে এলাকার মানুষের অভিযোগ বহু দিনের। গত দিন দশেকে দফায় দফায় অভিযোগ জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ। সুপারের নির্দেশিকা অনুসারে,
১) হাসপাতালের আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকেরা সকাল ৯ টা থেকে বিকেল ৪ টে পর্যন্ত তাদের ক্লিনিক খোলা রাখবেন।
২) চিকিৎসকেরা প্রত্যেকে প্রত্যেককে সহযোগিতা করবেন অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়ানোর জন্য কেউ কারো বিরুদ্ধে অপমানজনক কথা বলবেন না।
৩) ওষুধ ব্যবসায়ীদের হাসপাতালে ঢোকার অনুমতি দেওয়া যাবে না।
৪) হাসপাতালের আউটডোরে সকাল ৯-১৫ এর মধ্যে চিকিৎসকেরা পৌঁছে যেতে হবে। দেরি করলে সেই চিকিৎসককে অনুপস্থিত বলে ধরা হবে।
৫) চিকিৎসকেরা অকারণে দামী কিংবা অবাঞ্ছিত ওষুধ লিখবেন না। হাসপাতালে যা ওষুধ আছে চেষ্টা করতে হবে সেই ওষুধই লেখার।
৬) হাসপাতালে মদ্যপ বা দুষ্কৃতীদের বিষয়েও চিকিৎসদের সতর্কতা জরুরি।
৭) হাসপাতালের কোনও চিকিৎসক কেব্ল টিভিতে বিজ্ঞাপণ দেবেন না ও ব্যক্তিগত প্রেসক্রিপসন প্যাড ব্যবহার করবেন না।
৮) রোগীদের কি খাবার দেওয়া হচ্ছে সে বিষয়েও চিকিৎসকেরা নজর রাখবেন।
৯) হাসপাতালে সন্তান প্রসবের পর প্রসূতি বা তার বাড়ির লোকজনের কাছ থেকে স্বাস্থ্যকর্মীরা যাতে টাকা না নেন সেদিকেও নজর রাখতে হবে কর্তব্যরত চিকিৎসককে।
১০) চিকিৎসকদের ডিউটি রোস্টার দিয়ে দেওয়ার পরে কোনও রদবদল করতে হলে নিজেদের মধ্যেই সেটা ঠিক করতে হবে।
নির্দেশিকা অনুসারে কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে সে কথা কবুল করলেন হাসপাতালেরই বেশ কিছু কর্মী তাদের কথায়, এখন সাড়ে নটার আগেই আউটডোরে চিকিৎসক ঢুকে পড়ছেন। এত দিন দশটার আগে তো কারোর দেখাই মিলত না। ওষুধ ব্যবয়ায়ীদেরও খুব একটা দেখা যায়নি। বন্ধ হয়েছে চিকিৎসকদের বারবার ওষুধ বদলের ঘটনাও।
সুপার বিধুভূষণ মাহাতোর কথায়, ‘‘হাসপাতালে বিশৃঙ্খলা চলছিল। রোগীরা অসুবিধায় পড়ছিলেন। বেশ কিছু অভিযোগ আসছিল। এ জন্য এমন নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিছু চিকিৎসকদের এটা মানতে কষ্ট হচ্ছে বলে শুনেছি। আশা করি তাঁরাও এর সুফলটা বুঝবেন। আর একান্তই যদি কেউ এটা না মানেন তবে প্রয়োজনে তাঁকে শো-কজও করা হতে পারে।’’ করিমপুর ১ ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি চিররঞ্জন মণ্ডল বলেন,‘‘ এই হাসপাতালের উপর বহু মানুষ নির্ভরশীল। পরিষেবা নিয়েও মানুষের ক্ষোভ রয়েছে। সম্প্রতি আমরা সুপারকে একটা স্মারকলিপিও দিয়েছি। এখন সুপার যদি রোগীদের স্বার্থে কিছু পদক্ষেপ করেন তা খুব ভাল কথা। আশা করছি নিয়মগুলো শুধু খাতা কলমে আটকে না থেকে কাজেও রূপান্তরিত হবে।’’ করিমপুরের বিধায়ক সিপিএমের সমরেন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, ‘‘এই নিয়মগুলো অনেক আগেই চালুর দরকার ছিল। পরিকাঠামোগত কিছু সমস্যা এখানেও আছে। হাসপাতাল থেকে সামান্য পরিষেবাটুকুও পেতেও মানুষ হয়রান হচ্ছিলেন। আশা করা যায় এখন পরিস্থিতি কিছুটা পাল্টাবে’’
তেহট্টের অতিরিক্ত মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সঞ্জয় মণ্ডল বলেন, ‘‘করিমপুর গ্রামীন হাসপাতাল নিয়ে বেশ কিছু অভিযোগও আসছিল তবে সুপার যে নিয়মগুলো চালু করেছেন সেগুলো কিন্তু সকলের জন্যই ভাল।’’
সুপার বলেন, ‘‘হাসপাতালে চতুর্থ শ্রেণীর কর্মী খুব কম। যেকারণে হাসপাতাল ঠিকমত পরিষ্কার রাখতে পারছি না। গাড়ি রাখা নিয়ে একটা সমস্যা আছে। ২৯ নভেম্বর রোগী কল্যাণ সমিতির আলোচনায় বিষয়গুলো তুলব। হাসপাতাল চত্বরে মদ্যপদের ঘোরাঘুরি ও পরিষ্কারের ব্যাপারে প্রশাসন ও পঞ্চায়েতের সাহায্য চাইব।’’
করিমপুর ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান কংগ্রেসের তারক সরখেল বলেন, ‘‘এখন প্রশ্ন, নিয়মগুলো আদৌ কার্যকর হবে তো? হাসপাতাল পরিষ্কারের ব্যাপারে সুপার এত দিন আমাদের কিছু বলেননি।” |