‘নিরাপত্তার অভাব’, ইস্তফা সরকারি চিকিৎসকের
নিরাত্তার অভাবকে দায়ী করে সরকারি চাকরি থেকেই ইস্তফা দিলেন এক তরুণ চিকিৎসক।
রোগী মৃত্যুর জেরে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ তুলে গত ১৩ অক্টোবর টাকি গ্রামীণ হাসপাতালের চিকিৎসক ইন্দ্রনীল দত্তকে মারধর করেছিল উত্তেজিত জনতা। জীবনের প্রথম চাকরিতেই ‘বিভীষিকা’র মুখোমুখি হয়েছেন জানিয়ে চাকরিতে ইস্তফা দিয়েছেন তিনি। তাঁর বক্তব্য, “সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর বা ডাক্তারকে মারধর করে সমস্যার সমাধান হবে না। কী পরিকাঠামোর মধ্যে আমাদের কাজ করতে হয়, তা মানুষকে বুঝতে হবে।”
বসিরহাট মহকুমা স্বাস্থ্য আধিকারিক অসিত পাণ্ডে বলেন, “ইন্দ্রনীলবাবুর ইস্তফাপত্র স্বাস্থ্যভবনে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। ১৩ অক্টোবরের ঘটনার পর থেকে আরও এক চিকিৎসক কাজে আসছেন না। তাঁকে শো-কজ করে, বেতন আটকে দিয়েও লাভ হয়নি। পরিষেবা বেহাল।” আপাতত হাসপাতালে চিকিৎসকের সংখ্যা মাত্র দু’জন। ফলে টাকি, হাসনাবাদ-সহ স্থানীয় পঞ্চায়েতের প্রায় তিন লক্ষ মানুষের ভরসার এই হাসপাতালে যে কোনও সময়ে পরিষেবা বন্ধ হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন কর্তৃপক্ষ।
বস্তুত, নিরাপত্তার অভাব নিয়ে ক্ষোভ রাজ্যের সরকারি হাসপাতালগুলিতে নতুন নয়। ওই অভিযোগে সম্প্রতি কর্মবিরতির করেছিলেন ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জুনিয়র ডাক্তারেরা। রোগী-মৃত্যু বা চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগে জেলার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেও এর আগে চিকিৎসক-নিগ্রহের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু সরকারি চিকিৎসকদের ইস্তফা দেওয়ার যে প্রবণতা সম্প্রতি তৈরি হয়েছে, তাতে যথেষ্ট বিপাকে পড়েছে স্বাস্থ্য দফতর। এক পক্ষ বলছেন, ডাক্তারদের পড়াশোনার জন্য বহু টাকা ব্যয় করে সরকার। তাই মাঝপথে তাঁদের চাকরি ছাড়া সম্পূর্ণ অনৈতিক। সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের যুক্তি, রাজ্যের হাসপাতালগুলিতে পরিকাঠামো না থাকাতেই তাঁদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে। যেমন, ইন্দ্রনীলবাবু বলেছেন, “সরকারের প্রতি আমরা নিশ্চয়ই কৃতজ্ঞ। কিন্তু উত্তেজিত জনতাকে সামলাতে আমরা তো আর লাঠি হাতে নিতে পারব না! ”
১৩ অক্টোবর হাসনাবাদের গুলিবিদ্ধ এক ব্যবসায়ীকে আনা হয় টাকি গ্রামীণ হাসপাতালে। প্রায় একই সময় সেখানে আনা হয় আমলানি গ্রামের এক রোগীকে। ৫০ শয্যার এই হাসপাতালে চিকিৎসক বলতে তিন জন। গুরুতর অবস্থায় দুই রোগী একসঙ্গে এসে যাওয়ায় গুলিবিদ্ধ ব্যক্তিকে বসিরহাট হাসপাতালে রেফার করা হয়। সেখানেই তিনি মারা যান। এর পরেই লোকজন চড়াও হয় ইন্দ্রনীলবাবুর উপরে। হাসপাতালের চিকিৎসক তথা টাকি ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক সর্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, “যতটুকু পরিকাঠামো আছে, তার মধ্যেই আমরা চেষ্টা করি। আমাদের ভুল বুঝে যে ভাবে হামলা হচ্ছে, তাতে সকলেই আতঙ্কিত।”
গুরুত্বপূর্ণ এই হাসপাতালে চিকিৎসক থাকার কথা ৬ জন। ইন্দ্রনীলবাবু ছেড়ে যাওয়ার পরে আছেন মাত্র দু’জন। প্রতিটি হাসপাতালে সর্বক্ষণ শিশু চিকিৎসক রাখার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু শিশু বিশেষজ্ঞ তো দূরের কথা, অর্থোপেডিক সার্জেন, স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ, হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ কেউ নেই। অপারেশন থিয়েটার আছে। কিন্তু নেই অ্যানাস্থেটিস্ট। চতুর্থ শ্রেণির কর্মী ১২ জন থাকার কথা। সাকুল্যে তিন জনের উপরে সব কাজের ভার। এক্স-রে বন্ধ বহু দিন ধরে। জরুরি ওষুধ নিয়মিত মেলে না। স্বাভাবিক ভাবেই পরিষেবা না পেয়ে রোগী ও আত্মীয়দের ক্ষোভ গিয়ে পড়ে চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যকর্মীদের উপরে। স্বাস্থ্য অধিকর্তা শ্যামাপদ বসাক বলেছেন, “মানুষের শুভবুদ্ধির উদয় না হলে সমস্যার মীমাংসা হবে না। না হলে পরিস্থিতি যে দিকে গড়াচ্ছে, তাতে আমরা অত্যন্ত চিন্তিত। চিকিৎসক, নার্সরা কাজে যোগ দিতে ভয় পাচ্ছেন।” আর পরিকাঠামো? উত্তর, “ধীরে ধীরে সব হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.