উত্তরপ্রদেশ ভেঙে চারটি রাজ্য গড়ার প্রস্তাব নিয়ে দেশ জুড়ে হইচইয়ের রেশ পড়ল দার্জিলিঙেও। তা নিয়ে পাহাড়ের তিন মহকুমায় জল্পনাও শুরু হয়েছে। পাহাড়ের বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল ওই প্রস্তাবের বিষয়টি সামনে রেখে আলাদা গোর্খাল্যান্ডের দাবি সামনে রেখে সংগঠন বাড়াতে সক্রিয় হয়ে উঠেছে, এমন আশঙ্কায় আসরে নেমে পড়ল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চাও। মোর্চার অন্দরের খবর, আলাদা রাজ্যের দাবি নিয়ে পাহাড়ে যাতে অন্য কোনও দল আসরে নামতে না-পারে, সে জন্য দলের যুব সংগঠনকে প্রচার ও সভায় নামার নির্দেশ দিয়েছেন শীর্ষ নেতারা। মঙ্গলবার যুব মোর্চার তরফে সাধারণ সম্পাদক প্রিয়বর্ধন রাই সাংবাদিক বৈঠক করে লাগাতার প্রচার ও সভা করার কথা ঘোষণা করেছেন। আগামী ১৮ ডিসেম্বর কালিম্পঙের মংপুতে সভা করবে যুব মোর্চা। সাধারণ সম্পাদক বলেন, “আলাদা তেলেঙ্গনা কিংবা উত্তরপ্রদেশ ভেঙে চারটি রাজ্য হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হলে গোর্খাল্যান্ডও হতে পারে। সে জন্য আমরা লাগাতার আন্দোলন করব। প্রতিটি এলাকায় দাবি আদায়ের জন্য কমিটি গড়ব। তার পরে ১৮ ডিসেম্বর জনসভা হবে মংপুতে।” তবে তাঁরা যে আগের মতো কোনও অবরোধ, বিক্ষোভ কিংবা বন্ধের রাস্তায় হাঁটবেন না সে কথা যুব মোর্চা নেতারা স্পষ্ট করে দিয়েছেন। তাঁরা জানান, শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আন্দোলন হবে। যুব মোর্চার তরফে আন্দোলনের কথা ঘোষণা হলেও মোর্চা সভাপতি বিমল গুরুঙ্গ কিংবা সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরিরা বিষয়টি নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি। দলের প্রচার সচিব হরকাবাহাদুর ছেত্রী বলেন, “বিষয়টি নিয়ে যা বলার যুব মোর্চার নেতারাই বলবেন।” পাহাড়ের মোর্চা বিরোধী রাজনৈতিক দল অখিল ভারতীয় গোর্খা লিগ, সিপিআরএম এবং জিএনএলএফও পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছে। যুব মোর্চার আন্দোলনের খবর পৌঁছেছে মহাকরণেও। প্রশাসনের এক কর্তা জানান, আপাতত জিটিএ বিল অনুমোদন করানোর উপরেই মোর্চার শীর্ষ নেতৃত্ব আগ্রহী। পাশাপাশি, কোনভাবেই যাতে পাহাড়ে উন্নয়ন প্রক্রিয়া বাধাপ্রাপ্ত না-হয় তা নিশ্চিত করতে তৎপর মোর্চা নেতারা। সে জন্য রাজ্য পুলিশ-প্রশাসন বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন নন। মোর্চা সূত্রের খবর, ইতিমধ্যে দার্জিলিং, কার্শিয়াং এবং কালিম্পং পুরসভার ক্ষমতা দখলের পর তিনটি এলাকার ওয়ার্ড ধরে ওয়ার্ড কমিটি গঠনের কথা মোর্চার তরফে ঘোষণা করা হয়েছে। এদিন ওয়ার্ড ধরে ধরে ‘গোর্খাল্যান্ড কমিটি’ তৈরি হবে বলে যুব মোর্চার জেলা সভাপতি জানিয়েছেন। তিনি জানান, উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী মায়াবতী সেই রাজ্যে নতুন চারটি রাজ্যের প্রস্তাব দিয়েছেন। তেলেঙ্গানা আলাদা রাজ্যের দাবিদার। কিন্তু গোর্খাল্যান্ড ১০৩ বছরের পুরানো দাবি। আলাদা রাজ্য হলে আমাদেরটাই আগে হতে হবে। এই ব্যাপারে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী এবং মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দেওয়া হচ্ছে। এই অবস্থায় আন্দোলন নামার প্রস্তুতি শুরু করেছে গোর্খা লিগও। দলের সাধারণ সম্পাদক প্রতাপ খাতি বলেন, “জিটিএ-র নামে পাহাড়ের মানুষকে মোর্চার প্রতারিত করেছে। আলাদা রাজ্য ছাড়া পাহাড়ের মানুষের উন্নয়ন ঠিকঠাক হবে না। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা ওঁর সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছি। পাশাপাশি, পাহাড়ে আলাদা রাজ্যের দাবিতে আমরা আন্দোলনে নামব।” বস্তুত, গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (জিটিএ) গড়ার চুক্তি হলেও ‘হৃদয়ে’ আলাদা রাজ্যের স্বপ্ন যে থাকবে তা বারেবারেই ঘোষণা করেছেন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সভাপতি বিমল গুরুঙ্গ। একাধিক সভায় সে কথা উল্লেখ করে মোর্চা সভাপতি দাবি করেছেন, পাহাড়ে জিটিএ চুক্তি হলেও আগামী দিনে গোর্খাল্যান্ডের দাবি নিয়ে আন্দোলনের অধিকার শুধু তাঁদেরই থাকবে। |