|
|
|
|
দাবি বিদ্যুৎমন্ত্রীর |
বিদ্যুৎ উৎপাদনে ৬ মাসেই সাফল্য রাজ্যের |
শুভাশিস সৈয়দ • বহরমপুর |
ক্ষমতা দখলের পরে রাজ্যে বিদ্যুৎ পরিষেবা দেওয়ার সাফল্যে বামফ্রন্ট জমানার চেয়ে অনেকটাই এগিয়ে বর্তমান সরকার।
বামফ্রন্টের আমলে যা ছিল ৬০-৭০ শতাংশ, রাজ্যে সরকারের পরিবর্তনের পরেই সেই সাফল্য ৭০-৭৩ শতাংশে পৌঁছিয়েছে বলে দাবি বিদ্যুৎমন্ত্রী মণীশ গুপ্তের। মণীশবাবু বলেন, ‘‘বিদ্যুৎ উৎপাদন, সংবহন ও ব্যবহারের দিক থেকে বামফ্রন্টের আমলে ৬০-৭০ শতাংশ সাফল্য মিলেছে। আমরা ক্ষমতায় আসার পরে ওই সাফল্যের হার বেড়ে হয়েছে ৭০-৭৩ শতাংশ। এ জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপও গ্রহণ করা হয়েছে। তার মধ্যে কর্মীদের বদলি প্রক্রিয়াও রয়েছে।”
এ দিন সার্কিট হাউসে রাজীব গাঁধী বৈদ্যুতিকরণ যোজনা প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি নিয়ে জেলার বিধায়কদের সঙ্গে আলোচনা করেন। বিদ্যুৎ চুরি রুখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের ব্যাপারেও বৈঠক হয়। তার আগে সার্কিট হাউসের ঘরে বসে বিদ্যুৎমন্ত্রী যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গণের আলোর খোলনলচে বদলে ফেলার কথাও বলেন।
তাঁর কথায়, “যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গণে মোহনবাগান ও ইস্টবেঙ্গল ম্যাচের সময়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ১৫ সেকেন্ডের জন্য আলো নিভে যায়। ওই ত্রুটির কারণ খতিয়ে দেখে একটি রিপোর্ট জমা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। ওই রিপোর্ট হাতে পেলে বিস্তারিত জানানো সম্ভব। তবে যুবভারতীতে মান্ধাতার আমলের ফ্লাড লাইট রয়েছে। ওই আলো নিভে গেলে ফের জ্বলতে ১৫ মিনিট সময় নেয়। এ জন্য আমরা নতুন করে ফ্লাড লাইট লাগানোর পরিকল্পনা করেছি।” |
|
ছবি: গৌতম প্রামাণিক। |
এ দিকে বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে সাঁওতালডিহিতে ৮০০ মেগাওয়াটের ‘সুপার ক্রিটিক্যাল’ সাব-স্টেশন তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। মণীশবাবু বলেন, “ওই সাব-স্টেশন তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হচ্ছে। আগামী ৪-৫ বছরের মধ্যেই ওই তিনটে সাব-স্টেশন তৈরি হয়ে যাবে।” কাটোয়ায় বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরির ব্যাপারে একটা জমি অধিগ্রহণের সমস্যা রয়েছে। সে প্রসঙ্গে মণীশবাবু বলেন, “ওই বিদ্যুৎ কেন্দ্র যাঁরা গড়ছেন, তাদেরকে প্রয়োজনীয় জমি কিনে নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। জমি অধিগ্রহণে রাজ্য সরকারের কোনও ভূমিকা থাকছে না।”
তবে আচমকা কয়লার দাম বেড়ে যাওয়ায় সমস্যায় পড়তে হচ্ছে বলে মণীশবাবু জানান। তাঁর কথায়, “কয়লার দাম নিয়ন্ত্রণের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে। কয়লার দাম বেঁধে দেওয়া যায়, সে ব্যাপারে আমি নিজে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে কথা বলেছি।”
সেই সঙ্গে বিদ্যুৎ চুরি বেড়ে যাওয়ায় উষ্মা প্রকাশ করেন বিদ্যুৎমন্ত্রী। তিনি বলেন, “রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় প্রতি দিন অসম্ভব হারে বিদ্যুৎ চুরি হয়ে যাচ্ছে। রাজ্য জুড়ে বিদ্যুৎ চুরি রুখতে আগামী ১লা ডিসেম্বর থেকে লাগাতার অভিযান চালানো হবে। সর্বস্তরের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে পুলিশের সহায়তায় ওই অভিযান চালানো হবে, যাতে লোকসান ঠেকানো যায়।” নতুন সাবস্টেশন গড়ে তোলা, বিদ্যুৎ সরবরাহ করার ক্ষেত্রে উন্নয়নের পাশাপাশি পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ দফতরের অফিসারদের কোনও গাফিলতি রয়েছে কিনা, তাও এ দিনের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।
তবে রাজীব গাঁধী বৈদ্যুতিকরণ গ্রামীণ যোজনা প্রকল্পে কাজের অগ্রগতিতে মুর্শিদাবাদ অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে। একাদশ পরিকল্পতা খাতে ওই যোজনা প্রকল্পের আওতায় ২০১২ সালের মার্চের মধ্যে জেলার ২৬টি ব্লকের ১৮৯৮টি গ্রামের বিপিএল তালিকাভুক্ত ৬ লক্ষ ৭০ হাজার গ্রাহকের কাছে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্য মাত্রা ধার্য করে কেন্দ্রীয় সরকার। এজন্য ১৯৫ কোটি টাকা অর্থ বরাদ্দ করা হয়। কিন্তু ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে চালু হওয়া ওই প্রকল্পের আওতায় এখন পর্যম্ত মাত্র ৫৭১টি গ্রামের ১ লক্ষ ৩০ হাজার গ্রাহককে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। ১৬৪১টি ট্রান্সফর্মারের মধ্যে বসানো হয়েছে ৬৫২টি। এদিকে নতুন করে অর্থ বরাদ্দ না হলে ১৮৯৮টি গ্রামের মধ্যে ৪৭২টি গ্রামের বিপিএল তালিকাভুক্ত পরিবারের কাছে বিদ্যুৎ পৌঁছানো যাবে না বলেও বিদ্যুৎ দফতরের তরফে জানানো হয়েছে। বিদ্যুৎ দফতরের সুপারিন্টেন্ড ইঞ্জিনিয়ার সিদ্ধার্থ রায় বলেন, “ওই প্রকল্পের ৮০ শতাংশ পরিকাঠামো তৈরির কাজ সম্পূর্ণ হলেও বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে কিছুটা পিছিয়ে রয়েছে। তবে নতুন করে অর্থ বরাদ্দ হলে বাকি ৪৭২টি গ্রামেও বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া হবে।” |
|
|
|
|
|