অগ্রহায়ণ মাসেও নাওয়া খাওয়ার সময় পাচ্ছেন না বিদ্বান হালদার, নৃসিংহ মণ্ডলেরা। কাকভোরে ঘুম থেকে উঠেই নেমে পড়ছেন নদীতে। আগের বিকেলে পেতে রাখা জাল তুলতেই আড়, বোয়াল, চিতলের রূপোলি ঝিলিক। এমনকী বরাত ভাল থাকলে ইলিশও। প্রাক শীতের পদ্মায় এমন মাছের প্রাচুর্য দেখে যারপরনাই অবাক হয়ে যাচ্ছেন মৎস্যজীবীরাও।
তাঁদের কথায়,এ বারে বর্ষায় বৃষ্টি হয়েছে মন্দের ভাল। কিন্তু এই অগ্রহায়ণেও পদ্মা, মাথাভাঙা, জলঙ্গী কিংবা বিলগুলোতেও জল টলটল করছে। স্বাভাবিকভাবেই মাছের সমাহার, এবং মৎস্যজীবীদের চোখে ঝিলিক। জেলার মৎস ও কৃষি দফতরসূত্রে জানা গিয়েছে গত বছর বর্ষা ব্যাপকভাবে ভুগিয়েছিল। ভরা বর্ষাতেও বৃষ্টির প্রায় দেখা মেলেনি। এ বার অবশ্য পরিস্থিতি বদলেছে। নদিয়া জেলার সহ-মৎস্য অধিকর্তা সম্পদ মাজি বলেন,‘‘ গতবছর খরার কারণে মাছচাষ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল জেলার বিলগুলোতে কোন জল ছিল না। সমস্যায় পড়েছিলেন মৎস্যজীবিরা। কিন্তু এবার যথেষ্ট পরিমাণে বৃষ্টি হওয়ায় জল রয়েছে বিল ও নদীতে। ফলে এই বছর মাছ চাষে সমস্যার কোন কারণ নেই।’’ জেলার সহ-কৃষি অধিকর্তা ভাস্কর দত্ত বলেন,‘‘ এ বারের বর্ষায় মাত্রাতিরিক্ত বৃষ্টি হয়েছে এমনটা ভাবলে ভুল হবে গত বছর বৃষ্টি না হওয়ার জন্য খরা ঘোষিত হয়েছিল। কিন্তু এ বারের যে বৃষ্টিটা হয়েছে সেটাই স্বাভাবিক সেই কারণেই এ বছর কোথাও জলের ঘাটতি নেই।’’
নদী বিশেষজ্ঞ কল্যাণ রুদ্র’র কথায়,‘‘বেশি বৃষ্টি হওয়া মানে মাটির নীচেও বেশি পরিমাণে জল সঞ্চিত হয়েছে। ফলে এখন সেই ভূগর্ভস্থ জল আস্তে আস্তে নদীতে উঠে আসছে। যে কারণে অন্যান্যবারের তুলনায় এই সময় নদীতে জল বেশি আছে।’’
তেহট্টের এক মৎস্য সমবায় সমিতির সভাপতি মন্টুগোপাল হালদার বলেন,‘‘গতবছর মা ছচাষে ব্যাপক লোকসান হয়েছিল এ বার বিলগুলোতে পর্যাপ্ত জল থাকার কারণে কিছুটা লাভের মুখ দেখছি বিলে জল থাকার কারণে আমরা বেশি করে মাছের চারা ছাড়ছি।’’
মুর্শিদাবাদের জলঙ্গি থেকে রোজ ভোরে সাইকেল উজিয়ে হোগলবেড়িয়া থানার কাছারিপাড়া এলাকায় পদ্মায় মাছ ধরতে আসেন বিদ্বান হালদার। পদ্মায় মাছ ধরেই সংসার চালান কাছারিপাড়ার নৃসিংহ মণ্ডলও। তাঁদের কথায়,‘‘অগ্রহায়ণেও পদ্মায় মাছ পাব, আশা করিনি। এ বার আড়, বোয়ালের পাশাপাশি ৮০০-৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশও মাঝে মাঝে জালে বেধে যাচ্ছে। অন্যান্যবারের তুলনায় এইসময় আমাদের আয়ও ভালই হচ্ছে।’’ কাছারিপাড়ার বাসিন্দা তথা করিমপুর ১ পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন কর্মাধ্যক্ষ শঙ্কর মণ্ডল বলন,‘‘ কাছারিপাড়া, মধুগাড়ি, বাউসমারি এলাকার বহু সম্পন্ন কৃষকের ঘরবাড়ি, জমি জায়গা একসময় পদ্মার ভাঙনে তলিয়ে গিয়েছে। তাদের অনেকেই সব হারিয়ে এখন মাছ ধরে সংসার চালান। বছর পাঁচেক আগেও পদ্মায় সারাবছরই বেশ ভালো জল থাকত। কিন্তু ২০০৬-এর পর থেকে কার্তিক-অগ্রহায়ণে নদী প্রায় শুকিয়ে যায়। এ বার তারই ব্যতিক্রম দেখছি।” |