বৈদ্যুতিক চুল্লি বিকল, শবদাহ নিয়ে সমস্যা
বৈদ্যুতিক চুল্লি বিকল। ফলে শবদাহ করতে এসে নাকালের একশেষ হতে হচ্ছে মৃতের পরিজনদের। গত দু’মাস ধরে রঘুনাথগঞ্জ শ্মশানে এই পরিস্থিতি চলছে।
জঙ্গিপুর মহকুমা ছাড়াও বীরভূম, ঝাড়খণ্ড এলাকার বহু মানুষ গঙ্গার ধারে তাঁদের প্রিয়জনদের শবদাহ করতে এই শ্মশানে আসেন। বহু পুরনো এই শ্মশানে কাঠেই শবদাহ করা হত। তার জন্য অপেক্ষা করতে হত অনেকক্ষণ। সেই কারণেই গত ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে এখানে চালু করা হয় বৈদ্যুতিক চুল্লিটি। কিন্তু তারপর মাত্র ছ’মাসের মধ্যেই তিন বার খারাপ হয়ে গিয়েছে সেই বৈদ্যুতিক চুল্লি। ফলে মানুষের ভোগান্তি কমেনি।
বীরভূমের ভদ্রপুর থেকে পরিজনের দেহ নিয়ে শবদাহ করতে মঙ্গলবার কাকভোরে এখানে এসেছিলেন শিশির রায়। তাঁর কথায়, “চুল্লি রয়েছে জেনেই আমরা এখানে এসেছি। কিন্তু এখানে এসে শুনছি দু’মাস হল সেই চুল্লি খারাপ। এ দিকে বৈদ্যুতিক চুল্লি চালু হওয়ার পরে কাঠের চুল্লি অচল। তাই কাঠের জোগানও কম হয়ে গিয়েছে। ফলে শ্মশান থেকে দূরে গিয়ে আমাকে কাঠ কিনে আনতে হয়েছে।” তাঁর দাবি, “এখানে কাঠের দর বেশি। ৪০০ টাকা কুইন্টাল।” তাঁর কথায়, “শ্মশানে আমাকে ৬৩০ টাকা সরকারি ভাবে দিতে হয়েছে। সেই টাকার মধ্যেই আমার কাঠের দামও ধরে রাখা হয়েছে। কিন্তু কাঠ অআমাকে বাইরে থেকে বেশি দামে কিনতে হল।” এই একই অবস্থা অন্য সকলেরই। তা ছাড়া, কাঠের চুল্লিতে সময়ও সাগছে অনেক। তাঁদের অপেক্ষা করতে হয়েছে সাড়ে সাত ঘণ্টা।
রঘুনাথগঞ্জেরই বাসিন্দা শ্মশানযাত্রী সুবীর হালদার বলেন, “শ্মশানে কাঠের ব্যবস্থা থাকবে এটাই নিয়ম। জঙ্গিপুর পুরসভা এই শ্মশান চালায়। যেহেতু বৈদ্যুতিক চুল্লি রয়েছে, তাই কিন্তু এই এলাকায় কাঠের জোগান একেবারে কমে গিয়েছে। আমাদেরও বাইরে থেকেই কাঠ কিনতে হয় চড়া দরে।” তাঁর দাবি, “দু’মাস ধরে এই সমস্যা চলার পরেও কারও কোনও হেলদোল নেই। চুল্লিটি সারানোর কোনও চেষ্টা হচ্ছে না।”
ধুলিয়ান, জিয়াগঞ্জ ও বহরমপুরেও বৈদ্যুতিক চুল্লি রয়েছে। কিন্তু ওই রঘুনাথগঞ্জ ঝাড়খণ্ড ও বীরভূম থেকে কাছে। ফলে ঝাড়খণ্ড ও বীরভূমের প্রান্তিক এলাকার মানুষ গঙ্গার ধারে এই শ্মশানেই আসেন। ঝাড়খণ্ড প্রান্ত থেকে আসতে গাড়িতে লাগে ৪০-৫০ মিনিট, বীরভূম থেকে তারও কম। তাই বরাবরই এই শ্মশানের উপরে চাপ ছিল। বৈদ্যুতিক চুল্লি হওয়ার পরে সেই চাপ আরও বেড়েছে।
জঙ্গিপুর পুরসভার বিরোধী দল নেতা সমীর পণ্ডিত বলেন, “গঙ্গা দূষণ রোধের উদ্দেশ্যে গঙ্গা অ্যাকশন প্ল্যানে এই চুল্লিটি করা হয়েছিল। তার জন্য সব মিলিয়ে খরচ হয়েছিল ১ কোটি ২৪ লক্ষ টাকা। এই অর্থের ৬৬ শতাংশই দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। এটি চালু হওয়ার পরে দূষণ মুক্ত পরিবেশ তৈরি হয়েছে। দিনে ১২টি করে শবদাহ করা হচ্ছিল। কিন্তু তারপর থেকে কাঠের প্রয়োজন অনেক কমে যায়।” তিনি বলেন, “এখন ওই শ্মশানে কাঠের চুল্লিতে দিনে ৫টি করে শবদাহ করা হচ্ছে।” তাঁর বক্তব্য, “যে সংস্থা ওই বৈদ্যুতিক চুল্লিটি তৈরি করেছিল, তারা এক বছরের জন্য গ্যারান্টি দিয়েছিস। পুরসভার উচিত, এত তাড়াতাড়ি তা খারাপ হয়ে যাওয়ার পরে স্বাভাবিক ভাবেই সেই সংস্থাকে বলা তা সারিয়ে দিতে। কেন তা পুরসভা করছে না, তা আমরা জানি না।”
জঙ্গিপুর পুরসভার উপ পুরপ্রধান অশোক সাহা বলেন, “ওই সংস্থাকে বলা হয়েছে। তারা চুল্লি সারানোর কাজ শুরুও করেছে।” তাঁর দাবি, “এত দিন পুরসভার লোক ওই চুল্লি চালাতেন। কিন্তু তাতে সমস্যা হচ্ছিল। তাই ঠিক হয়েছে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে বলা হবে ওই চুল্লি চালাতে। তাঁরা অভিজ্ঞ। ফলে আর অসুবিধা হবে না বলেই মনে হয়।” পুরপ্রধান মোজাহারুল ইসলাম বলেন, “আশা করছি দু’এক দিনের মধ্যেই চুল্লিটি সারিয়ে ফেলা যাবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.