সরকারি অনুষ্ঠান। কিন্তু আমন্ত্রিতদের তালিকায় নাম ছিল না জোট-শরিক কংগ্রেসের স্থানীয় সাংসদ, বিধায়ক তথা মন্ত্রিসভার অন্যতম সদস্য এবং পুরপ্রধানের। জেলা থেকে মন্ত্রিসভায় তৃণমূলের এক মাত্র প্রতিনিধিরও নাম ছিল না। মঙ্গলবার বহরমপুরে বিদ্যুৎ বণ্টন দফতরের সাব-স্টেশন উদ্বোধন অনুষ্ঠানের ওই সরকারি আমন্ত্রণপত্রে নাম ছিল শুধু এক জনের, সংশ্লিষ্ট দফতরের মন্ত্রী মনীশ গুপ্ত। মুর্শিদাবাদ থেকে মন্ত্রিসভায় তৃণমূলের একমাত্র সদস্য, পূর্ত প্রতিমন্ত্রী সুব্রত সাহা বলেন, “আমন্ত্রিতদের তালিকায় আমার নাম ছিল না। তবে উন্নয়নের প্রশ্নে কার্ডে নাম থাকল কি না, তা বড় নয়। অনুষ্ঠানে আমি যেতাম।” কিন্তু তাদের ‘শক্ত ঘাঁটি’ হিসেবে চিহ্নিত মুর্শিদাবাদে, দলীয় সাংসদ ও মন্ত্রী সরকারি অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রণ না পাওয়ায় কংগ্রেসের ক্ষোভ ছিল চরমে।
শেষ পর্যন্ত অবশ্য বিদ্যুৎ দফতরের ওই উদ্বোধন অনুষ্ঠানই বাতিল করে দেন মনীশবাবু। তিনি বলেন, “আজ উদ্বোধন হচ্ছে না। উদ্বোধন আপাতত স্থগিত থাকছে।” কেন? মন্ত্রীর জবাব, “উদ্বোধন এমন কিছু বড় ব্যাপার নয়। সেখানে কার্ড-টার্ড ছাপিয়ে অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ছিল না। ভুল করে একটা কার্ড ছাপা হয়ে গিয়েছে।” তা হলে কি কংগ্রেসের ক্ষোভের ‘আঁচ পেয়েই’ এ দিন অনুষ্ঠান বাতিল করে দিলেন তিনি? বিদ্যুৎমন্ত্রী উত্তর দেননি। মুর্শিদাবাদ জেলা কংগ্রেস অবশ্য তাদের ক্ষোভ লুকোচ্ছে না। ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প প্রতিমন্ত্রী মনোজ চক্রবর্তী বলেন, “অনুষ্ঠানের কথা সরকারি ভাবে আমাকে জানানোই হয়নি। আমি কলকাতায়। খবর পেলাম, সোমবার রাতে আমার বাড়িতে ওই কার্ড পাঠিয়েই দায় সেরেছিল বিদ্যুৎ বণ্টন দফতর। তাতে বহরমপুরে সাংসদ অধীর চৌধুরী, বহরমপুরের পুরপ্রধান নীলরতন আঢ্য বা স্থানীয় বিধায়ক হিসেবে আমার নাম ছিল না।”
মনোজবাবুর দাবি, মুর্শিদাবাদে কংগ্রেসকে এ ভাবে ‘ব্রাত্য’ করে রেখে সরকারি অনুষ্ঠানের ব্যাপারে তাঁর ক্ষোভের কথা সোমবার রাতেই তিনি মনীশবাবুকে জানিয়েছিলেন। তাঁর ফোন পেয়ে বিষয়টি নিয়ে জেলাশাসকের সঙ্গে রাতেই আলোচনা করেন মনীশবাবু। তার পরেই অনুষ্ঠান বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেন। মনোজবাবু বলেন, “রাতে মনীশবাবুর সঙ্গে কথা বলে আমি সন্তুষ্ট। কিন্তু যাঁরা ওই কার্ড ছাপানো থেকে শুরু করে নিমন্ত্রণের দায়িত্বে ছিলেন, তাঁরা কী করে সাংসদ, পুরপ্রধান ও বিধায়ক-মন্ত্রী হিসেবে আমার নাম বাদ দিলেন, বুঝতে পারছি না!” জেলা কংগ্রেসের মুখপাত্র অশোক দাস বলেন, “সকাল সাড়ে ১১টায় অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সাংসদ অধীর চৌধুরীর বাড়িতে কার্ড পাঠানো হয়েছে, এ দিন সকাল ১১টা ৫০ মিনিটে। দলীয় বিধায়কেরাও ওই অনুষ্ঠানের কথাই জানতেন না। এটা সরকারি ভাবে আমাদের অপমান করা নয়?”
ম্যারাপ বাঁধা সম্পূর্ণ। সাব-স্টেশনের সামনে কালো পাথরের ফলকও বসে গিয়েছিল। মঞ্চ সাজানোর জন্য ফুল কেনা থেকে অতিথিদের জন্য বেশ কয়েকশো ‘টিফিন-প্যাকেট’-এর অর্ডার দেওয়া হয়ে গিয়েছিল। এই অবস্থায় অনুষ্ঠান বাতিলের পরে জেলা বিদ্যুৎ বণ্টন দফতরের কর্তারা এ প্রসঙ্গে মুখ খুলতে চাননি। |