|
|
|
|
ভসরাঘাটে ‘সেতু’ বাঁধা হয়নি, দুর্ভোগ মানুষের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
নতুন সরকার সদ্য পাকা সেতুর ঘোষণা করেছে। ১৫ অক্টোবর মুখ্যমন্ত্রীর জঙ্গলমহল সফরের দিনই নয়াগ্রাম-কেশিয়াড়ির মধ্যে সুবর্ণরেখার উপর ভসরাঘাটে বহু প্রতীক্ষিত সেই সেতুর শিলান্যাস হয়েছে। তবে সেই সেতু কবে গড়ে উঠবেতা নিয়ে সংশয় পিছু ছাড়েনি। আগের সরকারের আমল থেকেই তো সেতুর কথা শুনেই আসছিলেন দুই ব্লকের মানুষ। শিলান্যাস তাই নতুন করে তরঙ্গ তোলেনি। তবে সেতু গড়ে উঠলে মানুষ যে দু’হাত তুলে সরকারকে আশীর্বাদ জানাবেনতাতে সন্দেহ নেই। সেতুর বড় দরকার।
পাকা সেতু যত দিন না হচ্ছেএত কাল অস্থায়ী ‘ফেয়ার ওয়েদার ব্রিজ’ বানিয়েই চলত যাতায়াত। এ বার কিন্তু লাল ফিতের ফাঁসে আটকে ভসরাঘাটের সেই ‘ফেয়ার ওয়েদার ব্রিজ’। এখনও মেদিনীপুর থেকে নয়াগ্রাম পর্যন্ত বাস যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। ফলে সাধারণ মানুষকে প্রতি দিনই চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। নদীর এক পারে নেমে হেঁটে নদী পার হতে হচ্ছে। অনেক দূর হাঁটার পর অন্য বাসে যাতায়াত করতে হচ্ছে। আর প্রশাসনিক কর্তাদের ঘুরপথে গোপীবল্লভপুর হয়ে নয়াগ্রাম যেতে হচ্ছে। তাতে গাড়ির তেলের খরচ যেমন বাড়ছে তেমনই সময় নষ্টও হচ্ছে।
কেন এখনও এই অস্থায়ী সেতু তৈরি করা যায়নি? পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা সভাধিপতি অন্তরা ভট্টাচার্য বলেন, “সেতু তৈরি করতে ফি বছর ৩৫-৪০ লক্ষ টাকা খরচ হয়। এ বার তাতে আপত্তি জানিয়েছে অডিট বিভাগ। তাই আমরা ভেবেছিলাম, কেউ নিজস্ব উদ্যোগে সেতু তৈরি করে সরকারি নিয়মে যাতায়াতের জন্য অর্থ নিলে দিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু তাতেও প্রশাসনিক আপত্তি থাকায় করা যায়নি।” জেলা পরিষদের এক্সিকিউটিভ অফিসার সাগর সিংহ বলেন, “অডিট আপত্তি তোলায় অস্থায়ী কাজে এত টাকা খরচ করা যায়নি। কেউ নিজ উদ্যোগে সরকারি এই কাজ করতে পারে কি না, না হলে এ ক্ষেত্রে জেলা পরিষদেরই বা কী করণীয়--সে নিয়ে রাজ্যের পঞ্চায়েত দফতরের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে। সেখান থেকে এখনও কোনও নির্দেশিকা না আসায় কাজটি করা যায়নি।”
|
|
প্রতি বর্ষায় ধুয়ে যায় অস্থায়ী সেতু। —নিজস্ব চিত্র। |
মেদিনীপুর, কেশিয়াড়ি, দাঁতন, নারায়ণগড় বা বেলদা থেকে নয়াগ্রাম যেতে হলে সুবর্ণরেখা নদী পেরিয়েই যেতে হয়। আবার নয়াগ্রামের মানুষকে নদী পেরিয়েই এ পথে আসতে হয়। যে কারণে প্রতি বছরই বর্ষার শেষে নদীর উপরে একটি অস্থায়ী সেতু তৈরি করা হয়। নদীর মধ্যেই কিছুটা অংশে মোরাম ও পাথর দিয়ে মজবুত রাস্তা তৈরি করা হয়। আবার জল চলাচলের জন্য দু’টি রাস্তার মাঝে কিছুটা করে কাঠের সেতু তৈরি হয়। এ ভাবেই কিছুটা রাস্তা ও তার পর সেতু পার হয়ে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যাতায়াত চলে। বর্ষা এলেই অবশ্য তা ভেঙে নষ্ট হয়ে যেত। বর্ষার পরে ফের সেতু তৈরি করা হত। যার জন্য প্রতি বছরই জেলা পরিষদের খরচ হত ৩৫-৪০ লক্ষ টাকা। সেই টাকা আদায়ের জন্য বেসরকারি সংস্থাকে দায়িত্বও দেওয়া হত। সেতু ও রাস্তা পারপারের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ (টোল) আদায়ের দায়িত্বে থাকত সেই সংস্থা। কিন্তু ১০ লক্ষের বেশি টাকা জেলা পরিষদ পেত না। কারণ, যে বেসরকারি সংস্থা ওই কাজ করত, তারাও নিজেদের লাভ, কর্মচারীর বেতন বাদ দিয়েই জেলা পরিষদকে টাকা দিত।
প্রতি বছর এত টাকা অস্থায়ী কাজে খরচ হওয়ার বিষয়টি অডিট মানতে পারেনি। তার জন্য জেলা পরিষদের কাছে কৈফিয়ৎও তলব করা হয়েছে। তার পরই জেলা পরিষদও এই কাজে পিছিয়ে গিয়েছে। ফলে কবে ওই ‘ফেয়ার ওয়েদার ব্রিজ’ তৈরি হবে তা নিয়ে সংশয়ে সকলেই। জেলা পরিষদও নিশ্চিত কিছুই বলতে পারছে না। এক্সিকিউটিভ অফিসার পঞ্চায়েত দফতরে চিঠি পাঠিয়ে করণীয় কী জানতে চেয়েছেন। সেটাও প্রায় মাস দুই হয়ে গেল। কোনও উত্তর আসেনি। ফলে সাধারণ মানুষকে চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়তে হচ্ছে। সমস্যায় পড়েছেন নয়াগ্রামের বিধায়ক দুলাল মুর্মু নিজেও। তাঁকে প্রায়ই বিভিন্ন কারণে মেদিনীপুরে আসতে হয়। তাঁর কথায়, “সব দিন গোপীবল্লভপুর হয়ে ঘুরপথে যাওয়া কঠিন। তাতে অনেক সময় লাগে। তাই নদী পর্যন্ত একটি গাড়িতে যেতে হয়। পরে নদীর ও পাড় থেকে যাওয়ার জন্য অন্য ব্যবস্থা করতে হয়। সাধারণ মানুষকে অশেষ দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।” |
|
|
|
|
|