নদীবাঁধের ভাঙন রুখতে আরামবাগ মহকুমায় ভেটিভার ঘাস চাষের ব্যবস্থা চালু হল। রাজ্যে এই উদ্যোগ প্রথম বলে হুগলি জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর। মঙ্গলবার খানাকুল ১ ব্লকের উদনা গ্রামে মুণ্ডেশ্বরী নদীর বাঁধে এই কর্মসূচির শিলান্যাস করেন জেলাশাসক শ্রীপ্রিয়া রঙ্গরাজন। জেলাশাসক জানান, একশো দিনের কাজের প্রকল্পে নদীবাঁধগলুলিতে এই চাষ হবে। পরীক্ষামূলক ভাবে উদনায় তা শুরুও হয়ে গেল। পরবর্তী কালে খানাকুল ২, পুড়শুড়া এবং আরামবাগ ব্লকেও এই কর্মসূচি নেওয়া হবে।
ভেটিভার ঘাস কী ধরনের?
উদ্যানপালণ দফতর সূত্রের খবর, এই প্রজাতির ঘাস তামিলনাড়ুতে ব্যাপক পরিমাণে দেখা যায়। বাংলায় এটি ‘খসখস ঘাস’ নামে পরিচিত। এই খসখস গ্রীষ্মের তাপ আটকাতে অনেকে বাড়ির দেওয়ালে ঝুলিয়ে রাখেন। ঘাসের বৈশিষ্ট্য, দুই থেকে আড়াই ফুট লম্বা হয়। কিন্তু এর শিকড় মাটির নীচে প্রায় ১৪ ফুট পর্যন্ত বিস্তৃত থাকে। ফলে, নদীর পাড়ের মাটিকে আঁকড়ে রাখতে পারে। পাড়ের মাটি আঁকড়ে রাখা ছাড়াও ঘাসের মূল কঠিন মাটিতে প্রবেশ করে। এর আরও উপকারিতা, গবাদি পশুর সুষম খাদ্য হিসাবে ব্যবহার হতে পারে। ছাগল-গরু মুড়িয়ে খেয়ে ফেললেও দ্রুত ফের মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। এই ঘাসের আরও উপযোগিতা হল, বৃষ্টির জলের অপচয় ৭০ শতাংশ পর্যন্ত কমাতে পারে। ফলে, মাটির নীচে জলস্তর বৃদ্ধি পায়।
জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, ভূমিক্ষয় রোধে ভেটিভার ঘাসের ব্যবহার হয় বিশ্বের প্রায় ২৫টি দেশে। বাংলাদেশ, থাইল্যান্ড, চিন, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়ায় এর বহুল ব্যবহার দেখা যায়। এ দেশে এখনও পর্যন্ত অসম এবং তামিলনাড়ুতে প্রকল্পটি কার্যকর হয়েছে। হুগলি জেলার আরামবাগ মহকুমায় প্রকল্পটি চালু করতে অসম থেকে ঘাসের চারা আনা হচ্ছে। পরিবহণ খরচ-সহ চারা প্রতি খরচ ২ টাকা। ১ মিটার অন্তর চারা রোপণ করার নিয়ম।
আরামবাগের মহকুমাশাসক অরিন্দম নিয়োগী বলেন, “বোল্ডারিং-সহ যে সব কারিগরী পদ্ধতিতে বাঁধ সংরক্ষণের চেষ্টা হয়, তা প্রচুর খরচ সাপেক্ষ। অধিকাংশ ক্ষেত্রে তা স্থায়ীও হয় না। একই কাজ বার বার করে খরচ হয় আরও বেশি। এই ঘাস চাষ করে খরচ হবে চিরাচরিত পদ্ধতির এক দশমাংশ। তা ছাড়া, একশো দিনের কাজের প্রকল্পে এই কাজ করানোয় নতুন কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হবে। স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে ক্রমে এই কর্মসূচিতে সামিল করা হবে বলে জানিয়েছেন মহকুমাশাসক। শুকনো ঘাস থেকে হস্তশিল্পের ব্যবস্থা করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
কিন্তু এতই যদি উপযোগী, এত দিন কেন ব্যবহার করা হয়নি এই পদ্ধতি?
মহকুমাশাসক জানান, এই বিষয়টি তাঁদের অবগত ছিল না। অরিন্দমবাবুূর কথায়, “অসম সরকার তথা ইস্টার্ন ইন্ডিয়া ভেটিভার নেটওয়ার্ক-এর অধিকর্তা শান্তনু ভট্টাচার্যের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করি। রাজ্যের সেচ দফতরকে বিষয়টি জানানো হয়। তাঁরা এলাকা পরিদর্শনে আসেন। খানাকুল ১ বিডিও-র স্কিমটি অনুমোদন করে সেচ দফতর।” বিডিও সুপ্রভাত চট্টোপাধ্যায় জানান, বছর খানেক আগে এই পদ্ধতি সম্পর্কে সন্ধান দেন আরামবাগ মহকুমা তথ্য আদিকারিক ভাস্করজ্যোতি বেরা। তিনি মহকুমাশাসক ও জেলাশাসককে বিষয়টি জানান। মহকুমাশাসকের প্রেরণায় এ বার সেই প্রস্তাব কার্যকর হচ্ছে।
উদনা গ্রাম-সংলগ্ন বাঁধের কাজে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৩৫ লক্ষ টাকা। এর মধ্যে একশো দিনের কাজের মজুরি বাবদ খরচ হবে প্রায় ২৩ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা। ৮২৬ জন জবকার্ড হোল্ডারের জন্য ১৮২৩৩টি শ্রমদিবস সৃষ্টি করা যাবে বলে প্রশাসনের আশ্বাস। |