যতই বিতর্ক হোক, পিছু হটলেন না তিনি। বরং উত্তরপ্রদেশে মায়াবতী সরকারের বিরুদ্ধে তাঁর আগ্রাসী স্বর আজ আরও উঁচু তারে বেঁধে দিলেন রাহুল গাঁধী।
এক সপ্তাহ আগে উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা ভোটের প্রচার অভিযান শুরু করে রাহুল জনসভায় বলেছিলেন, “আর কত দিন উত্তরপ্রদেশের মানুষ মহারাষ্ট্র-পঞ্জাবে গিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি করবে?” এই ‘ভিক্ষাবৃত্তি’ শব্দটা নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন মায়াবতী। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, “এ রাজ্যের মানুষ কঠোর পরিশ্রমী, কিন্তু ভিক্ষুক নয়।” আর বিজেপি-মুলায়মের তরফে বলা হয়, উত্তরপ্রদেশবাসীকে অপমান করেছেন রাহুল। এই বিতর্কে কংগ্রেস অবশ্য অখুশি নয়। কংগ্রেস শীর্ষ সূত্রে বলা হচ্ছে, মায়া-মুলায়ম যে ভাবে রাহুলকে নিশানা করছেন, তাতে কংগ্রেসের লাভ বই লোকসান নেই। উত্তরপ্রদেশ ভোটে রাহুলের প্রাসঙ্গিকতাই এতে বাড়ছে। |
সুতরাং বিতর্ক থেকে পিছিয়ে আসার কোনও লক্ষণ দেখাচ্ছেন না রাহুলও। বরং ঝুঁকি নিয়েও আগ্রাসী আক্রমণকেই তাঁর হাতিয়ার করতে চান তিনি। সম্প্রতি এআইসিসি-র এক বৈঠকে কিছু প্রবীণ নেতা রাহুলকে এ নিয়ে প্রশ্নও করেছিলেন। তাঁরা বলেছিলেন, এত ঝুঁকির রাস্তায় হেঁটে ভোটে ফল খারাপ হলে তার সমস্ত দায় গিয়ে পড়বে রাহুলের উপরেই। রাহুল তখন তাঁদের বলেন, অতি সাবধানী হতে গিয়েই দল ডুবেছে। দলীয় কর্মীদের মধ্যে উৎসাব যদি ফিরিয়ে আনতে হয়, ঝুঁকি নিয়েও আক্রমণে যেতে হবে। সেই মোতাবেকই উত্তরপ্রদেশে পাঁচ দিনের সফরে বেরিয়ে আজ বরাবাঁকিতে এক জনসভায় রাহুল ফের বিতর্ক উস্কে বললেন, “স্টুডিওতে বসে টিভির পর্দায় আমাকে অনেকেই সমালোচনা করছেন। কিন্তু ট্রাফিক সিগন্যালে দাঁড়িয়ে ভিক্ষারত শিশুদের তাঁরা এক বার প্রশ্ন করে দেখুন যে, ওরা কোথা থেকে এসেছে? জবাব পাবেন, উত্তরপ্রদেশ।”
কংগ্রেস শীর্ষ সূত্রে বলা হচ্ছে রাজনীতিকরা যাই বলুন, রাহুল গাঁধী কেন ভিক্ষাবৃত্তির প্রসঙ্গ তুলেছিলেন, তা উত্তরপ্রদেশের মানুষের বুঝতে অসুবিধা নেই। দেশের সবথেকে বড় রাজ্যের ক্রমাগত পিছিয়ে পড়া নিয়ে মানুষের মনে প্রভূত অসন্তোষ রয়েছে। আর সেই অসন্তোষকেই উস্কে দিতে চাইছেন রাহুল। ভোট চাইছেন উন্নয়নের প্রশ্নে। উত্তরপ্রদেশে তাঁর দুই সভায় রাহুল আজ সেই কথাই বলেছেন। তিনি ঘোষণা করেছেন, কংগ্রেস জাতপাতের সরকার চায় না। উন্নয়নকামী সরকার চায়। কিন্তু মায়াবতীর শাসনে উন্নয়ন তো হচ্ছেই না, বরং উন্নয়নের জন্য কেন্দ্রের পাঠানো টাকাও লুঠ হচ্ছে।
কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতার কথায়, হিন্দি বলয়ে জাতপাতের ভিত্তিতে ভোট হওয়াটাই ছিল দীর্ঘদিনের দস্তুর। কিন্তু বিহারে গত দু’টি বিধানসভা ভোটে জাতপাতের সমীকরণকে পিছনে ফেলে উন্নয়নই নির্ণায়ক ভূমিকা নিয়েছে। উত্তরপ্রদেশে তার কি প্রভাব পড়বে না? উত্তরপ্রদেশেও শিক্ষিতের সংখ্যা বাড়ছে। অনুন্নয়ন নিয়ে নতুন প্রজন্মের উষ্মা বাড়ছে। সেই নতুনদেরই উন্নয়নের বার্তা দিতে চাইছেন রাহুল গাঁধী। ফুলপুরের মতো আজও রাহুলের সভার আগে বিক্ষোভ হয়েছে। বিমানবন্দর থেকে রাহুলের কনভয় বেরোতেই কিছু সমর্থক সামনে এসে বিক্ষোভ দেখান। রাজ্য কংগ্রেস নেতা অখিলেশ সিংহ বলেন, এই সব বিক্ষোভই প্রমাণ করছে যে, কংগ্রেসের টিকিটের চাহিদা রয়েছে। |