টু-জি কাণ্ডে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরমের ইস্তফা দাবি করে গত কালই বিজেপি নেতৃত্ব জানিয়ে দিয়েছিলেন, সংসদে তাঁকে বয়কট করবে এনডিএ। আর আজ লোকসভার অধিবেশনের প্রথম দিনে কাকতালীয় ভাবে প্রশ্নোত্তর পর্বের প্রথম প্রশ্নটাই ছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সংক্রান্ত। চিদম্বরম জবাব দিতে উঠলে তাঁকে বাধা দেন বিজেপি তথা এনডিএ সাংসদরা।
চিদম্বরমকে কেন্দ্র করে যখন এমন জলঘোলা চলছে, তখন জনতা পার্টির সভাপতি সুব্রহ্মণ্যম স্বামী আজ চিদম্বরম এবং এ রাজার মধ্যে চালাচালি হওয়া এক গুচ্ছ চিঠি ফাঁস করে অভিযোগ করেছেন, স্পেকট্রামের মূল্য নির্ধারণ নিয়ে এঁরা দু’জনেই ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। |
এই জোড়া চাপের মুখে অস্বস্তিতে পড়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। আজ দিনভর সাংবাদিকদের এড়িয়ে চলেছেন তিনি। সংসদ মুলতুবি হওয়া মাত্র সোজা চলে গিয়েছেন নর্থ ব্লকে, নিজের দফতরে। তবে দিনের শেষে চিদম্বরমকে খানিকটা হলেও স্বস্তি দিয়ে দল ও সরকার একজোট হয়ে তাঁকে আড়াল করার চেষ্টা করেছে। সাম্প্রতিক কংগ্রেস রাজনীতিতে যা বিরল। এর কারণ হিসেবে কংগ্রেস সূত্রে বলা হচ্ছে, দলে চিদম্বরমের জনপ্রিয়তা যতই কম হোক, তিনি তো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বিপদে পড়লে তো সরকারই বিপদে পড়বে। তাই এই তৎপরতা।
আজ সংসদের অধিবেশন বসার আগে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ বলেন, “বয়কট করার মতো কোনও ঘটনাই ঘটেনি। আশা করব বিরোধীরা এর থেকে বিরত থাকবেন।” আর সলমন খুরশিদ থেকে শুরু করে অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি পর্যন্ত কংগ্রেসের মন্ত্রী নেতাদের বক্তব্য, টু-জি কাণ্ডে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কোনও প্রাথমিক তদন্তেরও নির্দেশ দেয়নি আদালত। ফলে তাঁর ইস্তফার প্রশ্নই ওঠে না। অভিষেকদের যুক্তি, কংগ্রেস যখন জর্জ ফার্নান্ডেজকে সংসদে বয়কট করছিল, তখন প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সংক্রান্ত দুর্নীতি নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত কমিশন চলছিল। আর চিদম্বরম তো টেলিকম মন্ত্রী ছিলেন না। যিনি টেলিকম মন্ত্রী ছিলেন, সেই এ রাজা আগেই ইস্তফা দিয়েছেন। ফলে চিদম্বরমকে বয়কটের সিদ্ধান্ত নিয়ে সংসদীয় রাজনীতিতে বিজেপি বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে।
কিন্তু বিজেপি এখনও অনড়। দলীয় সূত্রে বলা হচ্ছে, সংসদে চিদম্বরমকে নিশানা করার লক্ষ্য তাদের আগে থেকেই ছিল। কিন্তু বয়কটের রাজনীতির নেপথ্যে এখন অন্য কারণও উঠে আসছে। আর তার কেন্দ্রবিন্দুতে তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতা। চিদম্বরমের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক বরাবরই আদায় কাঁচকলায়। গত লোকসভা ভোটে চিদম্বরমের জয়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে এখনও আদালতে মামলা চালাচ্ছে জয়ললিতার দল। এহেন জয়ললিতা বিজেপি নেতাদের বার্তা দিয়েছেন, চিদম্বরমকে সংসদে বয়কট করলে তিনি ভবিষ্যতে তাঁদের সঙ্গে বৃহত্তর সমঝোতায় যেতে পারেন। বিজেপি তাতে রাজি। আর তাই জয়ললিতা যেমন লালকৃষ্ণ আডবাণীর সভায় তাঁর প্রতিনিধি পাঠিয়েছেন, তেমনই সংসদে চিদম্বরমকে বয়কট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব। কিন্তু মুশকিল হল, সেই সিদ্ধান্তে অনড় থাকতে গিয়ে সর্বভারতীয় রাজনীতিতে প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে বিজেপি-কে। এই প্রশ্নও উঠছে যে, গুজরাতে মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে একাধিক তদন্ত চলছে, আদালত একের পর এক পর্যবেক্ষণ দিয়েছে, তার পরেও কেন মোদীর ইস্তফা চাইলেন না আডবাণীরা? তা ছাড়া, চিদম্বরমের বিরুদ্ধে আদালত কোনও প্রাথমিক তদন্তের নির্দেশও দেয়নি? তা হলে কি বদলার রাজনীতি করছে বিজেপি? জর্জ ফার্নান্ডেজকে অতীতে কংগ্রেস যে ভাবে বয়কট করেছিল, তার শোধ নিতে চাইছে? |
জবাবে বিজেপি শীর্ষ নেতা যশবন্ত সিন্হা বলেন, বিজেপি বদলার রাজনীতি করছে না। গণতন্ত্রের সেবায় তখন জর্জকে বয়কট করেছিল কংগ্রেস, এখন বিজেপি করছে। তা ছাড়া, মোদী ও চিদম্বরমের বিষয় এক নয়। চিদম্বরম যে টু-জি কাণ্ডে এ রাজার সঙ্গে মিলিত ভাবে ষড়যন্ত্র করেছিলেন, তার সুনির্দিষ্ট প্রমাণ রয়েছে। অর্থ মন্ত্রকের নোটেও সে কথা বলা হয়েছে।
আজই চিদম্বরম-রাজার চিঠিপত্র প্রকাশ করে সুব্রহ্মণ্যম স্বামী দাবি করেছেন, টু-জি স্পেকট্রামের দাম নির্ধারণ নিয়ে দু’জনের মধ্যে চার বার বৈঠক হয়েছিল। সুতরাং চিদম্বরম দায় এড়াতে পারেন না। যার উত্তরে কংগ্রেস মুখপাত্র অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি বলেন, “উনি নিজে মামলা করেছেন, নিজেই বিচার করছেন। ওঁর কথার কোনও গুরুত্ব নেই।” |