বাম-বিজেপি নেতাদের সঙ্গে কথা প্রণবের
শুরুতেই মুলতুবি, সংসদ চালাতে মরিয়া কংগ্রেস
শীতকালীন অধিবেশন শুরুর দিনেই আভাস মিলল আগামী এক মাস কতটা উত্তপ্ত থাকবে সংসদের আবহাওয়া। মূল্যবৃদ্ধি, চিদম্বরম, সংখ্যালঘু সংরক্ষণ, তুলোর দাম বৃদ্ধি, তেলেঙ্গানা-সহ একগুচ্ছ দাবিতে তুমুল হট্টগোলের জেরে শুরুর দেড় ঘণ্টার মধ্যেই দিনভরের জন্য মুলতুবি হয়ে গেল সংসদ। অচলাবস্থার ইঙ্গিত পেয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে আসরে নামে কংগ্রেস। বিরোধী শিবিরে বিভাজন ধরানোর চেষ্টা চালানোর পাশাপাশি বাম ও বিজেপি নেতৃত্বের সঙ্গে আলাদা ভাবে কথা বলে অচলাবস্থা কাটানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন কংগ্রেসের শীর্ষ নেতারা। অন্য দিকে সরকারকে বিপাকে ফেলতে মরিয়া বিজেপি কংগ্রেসের কৌশল ভেস্তে দিতে বামেদের সঙ্গে তাদের ঐক্য টিকিয়ে রাখতে সক্রিয়। সব মিলিয়ে অচলাবস্থা এখনই কাটার কোনও লক্ষণ নেই।
এ দিন সংসদের দুই কক্ষেই বিরোধীদের হট্টগোলের জেরে অধিবেশন মুলতুবি করে দিতে হয়। তুলোর ন্যূনতম দাম বৃদ্ধির দাবিতে মহারাষ্ট্রের বিজেপি-শিবসেনা সাংসদরা, মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে মুলতুবি প্রস্তাব গ্রহণের দাবিতে বাম শিবির আর চিদম্বরমকে বয়কটের ব্যাপারে গোটা এনডিএ শিবির সংসদের দুই কক্ষেই হইচই শুরু করে দেয়। তার মধ্যেই দলের অস্বস্তি বাড়িয়ে তেলেঙ্গানা প্রশ্নে টিআরএস-এর সঙ্গে সরব হয় সেখানকার কংগ্রেস সাংসদরাও! সরকারের সহযোগী দল সমাজবাদী পার্টিও হইচই শুরু করে। সংখ্যালঘু সংরক্ষণ প্রশ্নে। সব মিলিয়ে প্রথম দিনে সংসদ চালানোই সম্ভব হল না।
সংসদে ঢোকার মুখে অর্থমন্ত্রী। ছবি: পি টি আই
কিন্তু সংসদের এই অধিবেশন এ ভাবে বিরোধীদের কারণে পণ্ড হতে দিতে নারাজ সরকার। আসলে কংগ্রেস নেতৃত্ব সংসদের অধিবেশনটি নিজেদের ভাবমূর্তি শোধরানোর কাজে ব্যবহার করতে চাইছেন। দুর্নীতির একের পর এক অভিযোগে জর্জরিত মনমোহন সিংহ সরকার চায়, লোকপাল বিল, বিচার ব্যবস্থার দায়বদ্ধতা বিল পাশ করিয়ে, খাদ্য নিরাপত্তার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিল পেশ করে জনমানসে নিজেদের রাজনৈতিক ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে। সে জন্য সংসদ চালানো তাদের পক্ষে অত্যন্ত জরুরি। ফলে গত বছর শীতকালীন অধিবেশনে যৌথ সংসদীয় কমিটি গঠন নিয়ে যে ভাবে মাসখানেক ধরে বিরোধীদের সঙ্গে রীতিমতো স্নায়ুর যুদ্ধ চালিয়ে গিয়েছে কংগ্রেস, এ বারে সেই পদক্ষেপ না করে একটু নমনীয় মনোভাব নিয়েই সমাধানের পথ খুঁজছে সরকার।
মূল্যবৃদ্ধি ও কালো টাকা উদ্ধারের দাবিতে বাম ও বিজেপি হাতে হাত মিলিয়ে মুলতুবি প্রস্তাব আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সরকার চাইছে, বাম-বিজেপির এই ঐক্য ভাঙ্গতে। লোকসভার নেতা প্রণব মুখোপাধ্যায় আজ মধ্যাহ্নভোজে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন বাম নেতা সীতারাম ইয়েচুরি, গুরুদাস দাশগুপ্তদের। চিদম্বরমকে বয়কটের ব্যাপারে বামেদের যে সায় নেই, সে কথা প্রণববাবুকে জানিয়ে দেন বাম নেতারা। প্রণববাবু তাঁদের বোঝান, মুলতুবি প্রস্তাবের পর ভোটাভুটিতে সরকার হেরে গেলে তো নির্বাচন অবশ্যম্ভাবী। বামেরা কি ভোটের জন্য প্রস্তুত? তা ছাড়া সংসদ না চললে অস্থিরতা আরও বাড়বে। বর্তমান পরিস্থিতিতে সকলে মিলে স্থায়িত্বের বার্তা দেওয়াই কাম্য। সংসদ অচল থাকলে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনাই সম্ভব নয়। অনেক বিল পাশ ও পেশ করার কর্মসূচি রয়েছে। সে গুলিও আটকে যাবে। প্রণববাবুর সঙ্গে বৈঠকের পরে আগের থেকে সুর কিছুটা নরম করে সিপিআই নেতা গুরুদাস দাশগুপ্ত বলেন, “ঐকমত্যের মাধ্যমে সংসদ চালাতে আগ্রহী আমরা। যাতে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা চলতে পারে।” বাম শিবিরের একটি সূত্রের দাবি, সিপিএম এখনও মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে মুলতুবি প্রস্তাবে অনড় থাকলেও সিপিআই শেষ পর্যন্ত যে কোনও রূপে আলোচনা মেনে নিতে প্রস্তুত। বিরোধী ঐক্য ধরে রাখতে মরিয়া বিজেপি আবার মুলতুবি প্রস্তাবে ভোটাভুটির ব্যাপারটি বামেদের হাতেই ছেড়ে দিয়েছে। বামেরা যদি মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে আলোচনায় রাজি হয়, তাতেও সম্মতি রয়েছে বিজেপির। রাতে কংগ্রেসের তরফে দাবি করা হয়, বিরোধীরা ভোটাভুটি ছাড়াই মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে আলোচনায় সম্মত হয়েছে।
সরকার অবশ্য বসে নেই। শুধু মাত্র বামেদের পাশে নিয়ে বিরোধী ঐক্যে ফাটল ধরানোর কৌশলই নয়, বিজেপি নেতাদের সঙ্গেও যোগাযোগ রেখে তাঁদের পরিস্থিতি বোঝানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন তাঁরা। সংসদের দুই সভার বিরোধী দলনেতা অরুণ জেটলি ও সুষমা স্বরাজের সঙ্গে বৈঠকের পরে গত কাল নিজের বাড়িতে বিজেপি সভাপতি নিতিন গডকড়ীকেও মধ্যাহ্নভোজে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন প্রণববাবু। সংসদ সচল রাখার ব্যাপারে বিজেপির কাছেও সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি।
তার মধ্যেই এ দিন কংগ্রেসের মুখপাত্র অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি বিজেপিকে আক্রমণ করে বলেন, “প্রথম দিন থেকেই বিজেপি তুচ্ছ বিষয়গুলিকে ধরে সংসদ অচল করার তোড়জোর চালাচ্ছে।” পাল্টা জবাবে অরুণ জেটলি বলেন, “চিদম্বরমকে বয়কটের সিদ্ধান্ত থেকে পিছিয়ে আসছি না। কিন্তু তার জন্য সংসদ অচল করা আমাদের লক্ষ্য নয়। বিল পাশ করানোর বিরোধিতাও করছি না। চিদম্বরমের বদলে প্রধানমন্ত্রী নিজে বা স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অনায়াসে জবাব দিতে পারেন। আমরা সেগুলি শুনবও।” কংগ্রেস যে লোকপাল বিল এনে নিজেদের ভাবমূর্তি শোধরাতে চাইছে, আজ সেই প্রসঙ্গে টিম-অণ্ণার সঙ্গেও বৈঠক করেন জেটলি-সুষমা। প্রশান্ত ভূষণ, অরবিন্দ কেজরিওয়াল, কিরণ বেদীরা আজ সংসদে এসে জেটলি ও সুষমার সঙ্গে বৈঠক করেন। পরে জেটলি বলেন, “সিংহভাগ বিষয়েই আমাদের অবস্থানের সঙ্গে টিম-অণ্ণা একমত। সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে সরকার শেষ পর্যন্ত বিলের কী খসড়া নিয়ে আসে, তা দেখে আমরা দলের অবস্থান জানাব।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.