কেন্দ্রকে ‘বার্তা’ সুপ্রিম কোর্টের
রেল-রাস্তা অবরোধে শাস্তি বিশেষ আদালতে
সাধারণ মানুষকে বিপদে ফেলে রেল বা রাস্তা অবরোধ করলে এ বার শাস্তির মুখে পড়তে হতে পারে অবরোধকারীদের। দেশের সর্বোচ্চ আদালত আজ সেই রকম হুঁশিয়ারিই দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারকে।
সুপ্রিম কোর্টের সাফ কথা, কেন্দ্র সতর্ক না-হলে অবরোধকারীদের শাস্তি দিতে বিশেষ আদালত তৈরির জন্য নির্দেশ দেওয়ার কথা ভাববে তারা। শীর্ষ আদালতের বিচারপতি জি এস সিঙ্ঘভি এবং বিচারপতি এস ডি মুখোপাধ্যায়ের বেঞ্চ আজ জানিয়েছে, পথ-অবরোধ বা রেল রোকো রুখতে কেন্দ্রকে আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে ‘নির্দিষ্ট প্রস্তাব’ পেশ করতে হবে। যদি কেন্দ্র তা করতে ব্যর্থ হয়, তা হলে কোর্টই এই বিষয়ে সরাসরি হস্তক্ষেপ করবে। কোর্টের কাছে অবরোধ ‘অপরাধ’ হিসেবেই গণ্য হবে।
অবরোধের সংস্কৃতি বন্ধ করতে বিচারপতি সিঙ্ঘভি এবং বিচারপতি মুখোপাধ্যায়ের বেঞ্চ স্পষ্ট বলছে, “যারা রেল বা রাস্তা অবরোধ করবে, তাদের বিরুদ্ধে আমরা বাধ্যতামূলক বিচারের কথা ভাবছি। তিন মাসের মধ্যে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে। তার জন্য বিশেষ আদালত তৈরি করা যায় কি না, সে বিষয়েও ভেবে দেখছি আমরা।”
রেল বা রাস্তা অবরোধের জেরে সাধারণ মানুষকে যথেচ্ছ দুর্ভোগের শিকার হতে হলেও প্রতিবাদের এই কৌশল কিছুতেই বন্ধ করা যাচ্ছে না বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে শীর্ষ আদালত। গত মাসেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের জমি নিয়ে বিতর্কের জেরে কিষাণগঞ্জে রেল-রাস্তা অবরোধ করা হয়। যার জেরে কার্যত পঙ্গু হয়ে পড়ে উত্তরবঙ্গের রেল যোগাযোগ। ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কে স্তব্ধ হয়ে পড়ে যান চলাচলও। সেই অবরোধ তুলতে শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর দফতরকে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছিল।
এই ধরনের অবরোধে হয়রান-বিরক্ত হয়ে সাধারণ মানুষই অনেক সময় অবরোধ তুলতে এগিয়ে এসেছেন। তাঁরা প্রমাণ করে দিয়েছেন, প্রতিবাদের এই ধরন তাঁদের একেবারেই না-পসন্দ। যেমনটা দেখা গিয়েছিল গত বছর এপ্রিলে পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনার বামনগাছি স্টেশনে। সেখানে রেল অবরোধ তুলতে অসুস্থ ছেলেকে কোলে নিয়ে একাই এগিয়ে এসেছিলেন হাবরার শ্যামল ঘোষ। তার পর পাশে পেয়েছিলেন তাঁরই মতো দুর্ভোগের শিকার আরও অনেক যাত্রীকে।
গত বছর এপ্রিলেই হরিয়ানায় মির্চাপুর গ্রামে জাতপাত নিয়ে সংঘর্ষে প্রতিবন্ধী এক বালিকা-সহ দু’জনের মৃত্যু হয়। সেই ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে টানা বেশ কয়েক দিন রেল ও রাস্তা অবরোধ করেছিলেন জাঠ সম্প্রদায়ের লোকজন। এতে রেলের ক্ষতি হয়েছিল ৩৪ কোটি টাকা। এ নিয়ে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয় সুপ্রিম কোর্টে। আজ তার শুনানির সময়ই কেন্দ্রের উদ্দেশে কড়া মন্তব্য করেছে শীর্ষ আদালত।
নিত্য অবরোধ ঠেকাতে কী কী পদক্ষেপ করা যায়? এই বিষয়ে জানতে কিছু দিন আগেই কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে কিছু প্রস্তাব চেয়েছিল বিচারপতি সিঙ্ঘভি এবং বিচারপতি মুখোপাধ্যায়ের বেঞ্চ। অবরোধের জন্য যে পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হয়, তা অবরোধকারীদের কাছ থেকেই ‘উসুল’ করে নেওয়া যায় কি না, কেন্দ্রকে তা-ও ভাবতে বলেছিল শীর্ষ আদালত। কারণ বেঞ্চের যুক্তি ছিল, ‘অনেক সময় মন্ত্রীদেরও রাস্তা বা রেল রোকো আন্দোলনে যোগ দিতে দেখা যায়। এটা হয়তো তাঁদের রাজনৈতিক কর্মসূচির অঙ্গ।’ বস্তুত, দলীয় কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে রেল লাইনে চেয়ার পেতে মন্ত্রীর বসে পড়ার ছবি এ রাজ্যবাসীরই দেখা আছে। ক্ষমতায় আসার পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বন্ধ-অবরোধের সংস্কৃতি থেকে রাজ্যকে মুক্ত করার প্রস্তাব দিলেও অন্য রাজনৈতিক দলগুলি তাতে খুব বেশি সাড়া দেয়নি। সেই সংস্কৃতি থেকে পুরোপুরি মুক্ত হতে পারেনি তাঁর নিজের দল তৃণমূলও।
শীর্ষ আদালতের প্রশ্নের উত্তরে সে বার কেন্দ্র জানিয়েছিল, এই নিয়ে ভাবার জন্য আরও সময় চাই। কিন্তু তার পরে কেন্দ্রের তরফে আর কোনও সাড়া না মেলায় এ বার সুপ্রিম কোর্ট তাদের যথেষ্ট ভর্ৎসনা করেই বলেছে, “আপনারা কি এ বিষয়ে সত্যিই উদ্বিগ্ন? আমরা জানতে চাই, অবরোধের সময় যাত্রীদের নিরাপত্তার স্বার্থে কত জন পুলিশ মোতায়েন করা হয়? হায়দরাবাদে এক দিনের বিক্ষোভে ১৮৪টি বাসে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। আমাদের দেশে দেখা যাচ্ছে সহ্যের কোনও সীমা নেই।”
অবরোধ রুখতে এবং অবরোধকারীদের শাস্তি দিতে কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়, তা ভাবতে আজ ফের কেন্দ্রকে আরও তিন সপ্তাহ সময় দিয়েছে কোর্ট। তাতেও যদি কেন্দ্রের টনক না নড়ে, সে ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টই সক্রিয় হবে। কেন্দ্রকে বেঞ্চ বলেছে, “আপনারা যদি কিছু না করেন, আমরাই করব। কোনও না কোনও সময়ে আমরা প্রত্যেকেই অবরোধের শিকার হই। কিছু দিন আগে দিল্লিতে বিক্ষোভের জেরে তুমুল যানজট হয়। আইনজীবীরা ঠিক সময়ে কোর্টে পৌঁছতে না পারায় অনেক মামলার শুনানিও হয়নি। যার ফলে ফের ভুগতে হয়েছে সাধারণ মানুষকেই।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.