সাহায্যের হাত বাড়াতে, তথ্য দিতে রেলের সেই গয়ংগচ্ছই
ক-একটা করে ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটে আর রেলের অব্যবস্থার একই ছবি আসে ঘুরেফিরে।
সোমবার মাঝরাতের পর থেকে দুর্ঘটনাস্থল এবং ধানবাদ স্টেশনে সেই অব্যবস্থার ছবিই দেখলেন আপ দুন এক্সপ্রেসের যাত্রীরা। আর ওই অগ্নিদগ্ধ (দু’টি বাতানুকূল কামরা) ট্রেনের যাত্রীদের আত্মীয়েরা একই অব্যবস্থার শিকার হলেন হাওড়া স্টেশনে।
মঙ্গলবার ওই ট্রেনের যে-সব যাত্রী যাত্রা বাতিল করে হাওড়ায় ফিরে এলেন, তাঁদের অভিযোগ, সোমবার দুর্ঘটনার পরে দীর্ঘ ক্ষণ রেল-কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোনও সাহায্য মেলেনি। পাহাড়-ঘেরা নির্জন এলাকায় কার্যত নিরাশ্রয় অবস্থায় শীতের রাত কাটাতে হয়েছে আতঙ্কিত যাত্রীদের।
ঘটনাস্থল থেকেই ফোনে দুঃসংবাদ। নিজস্ব চিত্র
ধানবাদ থেকে ৪০ কিলোমিটার দুরে ঝাড়খণ্ডের পারসনাথ ও নিমিয়াঘাট স্টেশনের মধ্যে যেখানে ওই ট্রেনে আগুন লাগে, সেখানে রেলের সাহায্য পৌঁছতে প্রায় চার ঘণ্টা লেগে যায়। আর পুড়ে যাওয়া কামরা দু’টিকে গোমো স্টেশনে নিয়ে যাওয়া হয় মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮টার পরে। তার আগে পুলিশকর্মী ও স্থানীয় বাসিন্দারা আহতদের অনেককে গাড়িতে চাপিয়ে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন বলে হাওড়ায় ফিরে আসা যাত্রীরা জানিয়েছেন।
দমদম ক্যান্টনমেন্টের নবীন কুমার ছিলেন দুর্ঘটনাগ্রস্ত দু’টি কামরার একটিতে (বি-২)। মা, স্ত্রী ও শিশুপুত্রকে নিয়ে তিনি বারাণসী যাচ্ছিলেন। তাঁর অভিজ্ঞতা, “কোনও মালপত্রই ট্রেন থেকে নামাতে পারিনি। দেড় বছরের ছেলেটার পরনের প্যান্টটাও ছিল না। শীতের রাতে নির্জন, অন্ধকার স্টেশনে বসে ঠকঠক করে কেঁপেছি। মনে হচ্ছিল, আগুনের হাত থেকে পরিবারের সকলকে বাঁচাতে পারলেও ঠান্ডাতেই বুঝি মারা যাব।”
কিছু পরে ঝাড়খণ্ড পুলিশের একটি দল আসায় কিছুটা মনে বল পেয়েছিলেন নবীনবাবুরা। কিন্তু তখনও রেলের কারও দেখা মেলেনি বলে অভিযোগ করেন তিনি। বলেন, “চার ঘণ্টা পরে এল রেলের সাহায্য। তত ক্ষণে স্থানীয় মানুষ এবং পুলিশকর্মীরা আহতদের হাসপাতালে পাঠাতে শুরু করে দিয়েছেন।”
ট্রেনে আগুন: সালতামামি
বছর অগ্নিকাণ্ড মৃত আহত
২০০৩-০৪ ১৪ ৪১ ৪৪
২০০৪-০৫ ১০
২০০৫-০৬ ১৫ ১৫ ৬৮
২০০৬-০৭
২০০৭-০৮

২০০৮-০৯

৩১ ১১
২০০৯-১০
২০১০-১১
যাত্রীদের মতো তাঁদের আত্মীয়দের নাকাল হতে হল হাওড়া স্টেশনে তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে। হাওড়া স্টেশন চত্বরে যাত্রী সহায়তা কেন্দ্র খোলা হয়েছিল এ দিন সকালেই। ঘটনাস্থলের খবর নেওয়ার জন্য তিনটি টেলিফোন নম্বর দেওয়া হয়। ওই সব ফোন নম্বরে যোগাযোগ করে যাত্রীদের খোঁজখবর পাওয়ার কথা। তথ্য জানানোর এই সব পরিকাঠামো থাকলেও সেখানে ছিল না শুধু তথ্য! ভারপ্রাপ্ত রেলকর্মীরা কোনও তথ্যই দিতে পারছিলেন না যাত্রীদের আত্মীয়দের। কারণ, তাঁরা কোনও খবরই সংগ্রহ করতে পারছিলেন না। ওই ট্রেনের কোন কামরায় কোন কোন যাত্রী চেপেছিলেন, শুধু সেই ‘রিজার্ভেশন লিস্ট’ বা সংরক্ষণ তালিকা নিয়েই বসে ছিলেন কর্মীরা।
দমদম ক্যান্টনমেন্ট এলাকার বাসিন্দা দেবীপ্রসাদ সরকার হাওড়ায় এসেছিলেন পুত্রবধূ মিনতি সরকারের খোঁজে। এ দিন দুপুরে তিনি অভিযোগ করেন, “এক ঘণ্টারও বেশি সময় ঘুরে বেড়াচ্ছি। যাত্রী সহায়তা কেন্দ্রে যোগাযোগ করছি। কিন্তু কেউ কোনও তথ্য জানাতে পারছে না।”
একই অভিযোগ দুলাল মণ্ডলের। তিনি বলেন, “আমার ভাগ্নের শ্বশুর-শাশুড়ি ছিলেন ট্রেনে। ওঁরা কী অবস্থায় আছেন, তা জানার জন্য বারবার যোগাযোগ করছি। কিন্তু রেলের কাছে কোনও তথ্যই নেই!” রেলের এক কর্মী বললেন, “অন্য দুর্ঘটনার পরে যেমন ভিড় ভেঙে পড়ে, এ দিন সেই চাপটা ছিল না। ভিড় হলে উল্টে আমাদেরই হেনস্থা হওয়ার যথেষ্ট আশঙ্কা ছিল। আমাদের কাছে না আছে মৃত সব যাত্রীর নাম ও ঠিকানা, না আছে আহতদের সকলের পরিচয়। তাঁদের কোথায় চিকিৎসা হচ্ছে, ছিল না সেই তথ্যও। টেলিফোন নম্বর থাকলেও তা কোনও কাজে আসেনি।”
১৫ মে ২০০৩ লুধিয়ানায় গোল্ডেন টেম্পল মেলেমৃত: অন্তত ৩৬
২৬ অক্টোবর ১৯৯৪ লোটাপাহাড়ে মুম্বই-হাওড়া মেলেমৃত: অন্তত ২৭
১০ অক্টোবর ১৯৯০ অন্ধ্রে কাকতীয় ফাস্ট প্যাসেঞ্জারে মৃত: অন্তত ৪৭
৬ এপ্রিল ১৯৯০ পটনার কাছে প্যাসেঞ্জার ট্রেনেমৃত: অন্তত ৭০
২৩ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৫ ছত্তীসগঢ়ে চক্রধরপুর-নাগপুর প্যাসেঞ্জারেমৃত: ৫০-এর বেশি
বিকেল পর্যন্ত মৃত সাত জনের মধ্যে মাত্র তিন জনের নামের তালিকা টাঙানো হয়েছিল হাওড়া স্টেশনে। পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সমীর গোস্বামী অবশ্য বিকেলের দিকে স্টেশনে এসে দাবি করেন, যাত্রীদের সম্বন্ধে ‘যত দূর সম্ভব’ তথ্য সরবরাহ করা হয়েছে।
এই প্রথম নয়। যে-কোনও রেল দুর্ঘটনার পরেই এই ধরনের অব্যবস্থার ছবি দেখা যায়। তথ্য জানার এবং সাধারণ মানুষকে তা জানানোর ক্ষেত্রে রেলের এত সময় লাগে কেন? সমীরবাবু বলেন, “যেখানে দুর্ঘটনা ঘটেছে, সেটি পূর্ব রেলের অধীনে নয়। জায়গাটা পূর্ব-কেন্দ্রীয় রেলের অধীনে। তা ছাড়া ঘটনাস্থল থেকে পূর্ব-কেন্দ্রীয় রেলের প্রধান দফতরের অফিসের দূরত্বও অনেকটা। সেই জন্যই মৃতদের তালিকা তৈরি করতে এবং তথ্য জানাতে দেরি হচ্ছে। তবে কিছুই করা হয়নি, এ কথা ঠিক নয়। যতটা সম্ভব সাহায্য করা হয়েছে।”
আগুনে সামান্য জখম যাত্রীদের এ দিন বিকেলে হাওড়া স্টেশনে আনা হয়। সেখানে ক্ষতিপূরণ হিসেবে আহতদের মাথাপিছু নগদ ২৫ হাজার টাকা তুলে দেন রেলকর্তারা।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.