|
|
|
|
তিলজলায় দাহ্যে বোঝাই ঘরে পুড়ে মৃত দুই মহিলা |
নিজস্ব সংবাদদাতা |
গলগলিয়ে ধোঁয়া, আগুনের হল্কা বেরোচ্ছিল ঘিঞ্জি গলির একচিলতে ঘরটা থেকে। প্রচণ্ড তাপ আশপাশে। ঘরের ভিতরে তখন আর্তনাদ করছেন অসহায় দুই মহিলা।
মঙ্গলবার সকালে তিলজলার রায়চরণ ঘোষ লেনে বাঁশবাগান এলাকার ঘটনা। স্থানীয় বাসিন্দারা পরে দেওয়াল ভেঙে ঘরে ঢুকলেও বাঁচানো যায়নি দগ্ধ দুই মহিলাকে। দমকলের দু’টি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে যায়। দমকলমন্ত্রী জাভেদ খান, সিপিএম নেতা রবীন দেব প্রমুখ পৌঁছন সেখানে।
পুলিশ জানায়, মা আনিসা বেগম (৬০), স্ত্রী মুন্নি বেগম (৪০) এবং চার সন্তানকে নিয়ে চারতলা বাড়ির একতলার ওই ঘরে ভাড়া থাকতেন মহম্মদ আনসারুল। চামড়া ‘ট্যান’ করার রাসায়নিকের খালি কৌটো কিনে তা পরিষ্কার করে বিক্রি করতেন। ঘরেই সেগুলি রাখতেন আনসারুল। কৌটো পরিষ্কারের রাসায়নিক, কেরোসিন তেলও থাকত ঘরেই।
সকাল ৯টা নাগাদ আগুন লাগার সময়ে ঘরে ছিলেন শুধু আনিসা ও মুন্নি। পড়শি এক মহিলা বলেন, “হঠাৎ বাঁচাও, বাঁচাও চিৎকার শুনে গিয়ে দেখি আগুন আর প্রচণ্ড ধোঁয়া বেরোচ্ছে ঘর থেকে।” স্থানীয় যুবক মসিউর রহমান, মহম্মদ আনোয়ার, আলাউদ্দিনেরা দ্রুত উদ্ধারে নামেন। তাঁরা জানান, সিঁড়ি দিয়ে কিছুটা নেমে ওই ঘর। দরজা ভিতর থেকে বন্ধ ছিল। আশপাশের বাড়ি থেকে জল দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা হয়। মসিউর বলেন, “বাড়ির পিছনের গলি দিয়ে ঘরটার কাছে যাই। হাতুড়ি দিয়ে দেওয়াল, জানলা ভাঙার চেষ্টা করি। হল্কা বেরোচ্ছিল ভিতর থেকে। শেষে দেওয়ালটা ভাঙা যায়।” আলাউদ্দিন বলেন, “ঢুকে দেখি, এক কোণে পুড়ে কাঠ হয়ে পড়ে আছেন প্রৌঢ়া। কাছেই অর্ধদগ্ধ অবস্থায় অন্য জন।” দমকল পৌঁছনোর আগে পাড়ার তরুণ-যুবকেরা আগুন নেভানো শুরু না করলে তা আরও ছড়াত বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন স্থানীয় অনেকেই।
|
|
তিলজলায় ভস্মীভূত সেই ঘর। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র। |
কী ভাবে আগুন লাগল? দমকলের প্রাথমিক অনুমান, রান্নার হিটারে শর্ট সার্কিট থেকে আগুন ছড়ায় ঘরে মজুত রাসায়নিকের কৌটো, কেরোসিন ও অন্য দাহ্য পদার্থে।
স্থানীয়েরা জানান, বিহারে আত্মীয়ের বাড়ি গিয়েছেন আনসারুল। দুই ছেলে সোনু, মনু এবং মেয়ে চাঁদনি পরভীন ছিল মামার বাড়িতে। এ দিন ছোট মেয়ে নার্গিসকে স্কুলে পৌঁছে দিয়ে বাড়ি ফেরেন মুন্নি। তার পরেই এই ঘটনা। নার্গিসকে স্কুল থেকে ফিরিয়ে আনা হয়। পাড়ার একটি দোকানে বিহ্বল চোখে বসেছিল একরত্তি মেয়েটি। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, একচিলতে ঘরে রাসায়নিকের কৌটোর স্তূপের জন্য শোয়ার জায়গাও পেতেন না আনসারুলরা। গভীর রাত পর্যন্ত রাস্তায় ঘুরতেন প্রৌঢ়া আনিসা। সালাম বলেন, “ওই পরিবার খুব কষ্ট করে রোজগার করত।”
এ দিন ঘটনাস্থলে যান সিপিএম নেতা রবীন দেব ও কলকাতার পুরসভার বিরোধী দলনেত্রী রূপা বাগচী। স্থানীয় কিছু দুষ্কৃতী সাংবাদিকদের হেনস্থা ও ধাক্কাধাক্কি করায় তাঁরা কথা বলতে পারেননি বলে কলকাতা জেলা সিপিএম অফিসে সাংবাদিক বৈঠক করে অভিযোগ জানান রবীনবাবু। আরও অভিযোগ, পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানাতে মহাকরণে ফোন করেন রবীনবাবু। মমতা ব্যস্ত থাকায় কথা হয়নি। পরে মুখ্যমন্ত্রীর ফোন পেয়ে রবীনবাবু জানান, মমতা বলেছেন, সাংবাদিকদের হেনস্থা ও সিপিএমের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলতে না দেওয়ার বিষয়টি তাঁর জানা ছিল না। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিককে গোটা ঘটনাটির বিষয়ে জানিয়ে ওই ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে সিপিএম। |
|
|
|
|
|