চাষ বাড়লেও বাজার নেই, সমস্যায় জেলার ফুলচাষিরা
ফুল-চাষ বাড়ছে। নতুন নতুন এলাকায় ফুল-চাষে সংশ্লিষ্ট দফতর উৎসাহও দিচ্ছে। চাষিদের জন্য প্রশিক্ষণ শিবির হচ্ছে। কিন্তু, পশ্চিম মেদিনীপুরে ফুলের কোনও বাজারই নেই। ফলে, বাধ্য হয়েই চাষিদের পূর্ব মেদিনীপুর কিংবা হাওড়ায় গিয়ে ফুল বিক্রি করতে হচ্ছে। পরিবহণ খরচ বেশি হচ্ছে। চাষ বাড়লেও তাই লাভ তেমন ঘরে তুলতে পারছেন না জেলার ফুল-চাষিরা।
জেলার মধ্যে সব থেকে বেশি ফুল চাষ হয় ডেবরায়। ক’বছর আগে এখানেই একটি ফুল-সংরক্ষণ কেন্দ্র ও বাজার গড়ার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। প্রাথমিক ভাবে একটি জায়গাও চিহ্ণিত করা হয়। কিন্তু, এর পর কাজ আর এগোয়নি। ফুল-চাষিদের অভিযোগ, এলাকায় ফুল-সংরক্ষণের কোনও ব্যবস্থা বা বাজার না-থাকায় তাঁদের ক্ষতিগ্রস্ত হতে হচ্ছে। কারণ, ফুল শুকিয়ে গেলে তেমন দাম মেলে না। পচে-শুকিয়ে নষ্টও হয় কিছুটা। সমস্যার কথা মেনে ডেবরার বিধায়ক রাধাকান্ত মাইতি বলেন, “আগের পরিকল্পনাতেই ত্রুটি ছিল। জেলার এই এলাকায় একটি ফুলের-বাজার ও সংরক্ষণ কেন্দ্র জরুরি। বাজার তৈরির জন্য ফের নতুন করে উদ্যোগ নেওয়া হবে।” জেলার উদ্যানপালন আধিকারিক শুভাশিস গিরি-র বক্তব্য, “আগের থেকে ফুল-চাষে উৎসাহ বেড়েছে। অধিক লাভের আশায় অনেকেই ফুল-চাষ শুরু করছেন। জেলায় একটি ফুল-বাজার তৈরির জন্য উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হবে।”
ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার অধিকাংশ মানুষ কৃষি-নির্ভর। চাষবাস করেই তাঁদের সংসার চলে। তেমন শিল্প নেই। চাষ আবার প্রধানত বৃষ্টি-নির্ভর। বেশির ভাগ এলাকায় বছরে এক বারই চাষ হয়। কোথাও কোথাও একাধিক বার। কিন্তু, পর্যাপ্ত জলের অভাবে প্রায় সময়ই ক্ষতিগ্রস্ত হন চাষিরা। সেচ-সেবিত এলাকা কম। জেলায় মোট কৃষি-জমির পরিমাণ ৭ লক্ষ ৭৩ হাজার ৩৭৫ হেক্টর। এর মধ্যে সেচের সুবিধা রয়েছে মাত্রই ৩ লক্ষ ২৩ হাজার ৯৬৩ হেক্টর জমিতে। অর্থাৎ, অর্ধেকেরও কম। আবার আলু-চাষে পর্যায়ক্রমে দেখা দেয় হয় ধসা রোগের বিপদ, না হলে অধিক-ফলন জনিত ক্ষতি।
এই পরিস্থিতিতে ধান-আলুর প্রচলিত চাষেরা বদলে জেলার একাংশে ফুল-চাষে উৎসাহ বাড়ছে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট দফতর। বছর পাঁচ-ছ’য়েক আগেও ডেবরা, দাসপুর ও সংলগ্ন এলাকায় মূলত ফুল চাষ হত। কিন্তু, এখন এর পরিধি বেড়েছে। খড়্গপুর গ্রামীণ, নারায়ণগড়, সবং, পিংলার কিছু জায়গায় ফুল-চাষ শুরু হয়েছে। এই সব এলাকায় গাঁদা, রজনীগন্ধার মতো ফুলের চাষই হয়। উদ্যানপালন দফতর সূত্রে খবর, এখন জেলায় গোলাপ চাষ হয় প্রায় ৪০০ হেক্টর জমিতে। গাঁদা ৭০০ হেক্টর। রজনীগন্ধা ৭৮৫ হেক্টর। চন্দ্রমল্লিকা ৪৫ হেক্টর জমিতে। সংশ্লিষ্ট দফতরের এক আধিকারিক বলেন, “বছর পাঁচেক আগেও এই পরিমাণ জমিতে ফুল চাষ হত না। ধীরে ধীরে চাষের এলাকা বাড়ছে। অনেকেই ফুল-চাষে উৎসাহ পাচ্ছেন।” তাঁর কথায়, “বেশি লাভের সম্ভাবনা থেকেই এই পরিস্থিতি। কেউ যদি ভাল ভাবে রজনীগন্ধা চাষ করতে পারেন, তা হলে একই পরিমাণ জমিতে ধান চাষ করে যত না লাভ পাবেন, তার চেয়ে রজনীগন্ধা চাষ করে চার-পাঁচ গুণ বেশি লাভ পেতে পারেন।”
জেলায় ফুল-চাষের এলাকা বাড়ছে দেখেই বছর চারেক আগে ফুলের বাজার গড়ে তোলার দাবি ওঠে। প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছিল, দাসপুর কিংবা ডেবরায় বাজার ও একটি ফুল-সংরক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে। পরে ঠিক হয়, এই বাজার ও সংরক্ষণ কেন্দ্র হবে ডেবরাতেই। কারণ, জেলার মধ্যে এখানেই বেশি ফুল চাষ হয়। পাশাপাশি, যোগাযোগ ব্যবস্থাও ভাল। এই এলাকা হয়েই গিয়েছে ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক। রয়েছে রেল-যোগাযোগ। পরিকল্পনা তৈরির পর ডেবরায় প্রাথমিক ভাবে একটি জায়গাও চিহ্ণিত হয়। কিন্তু, এর পর কাজ আর এগোয়নি বলেই অভিযোগ। অরূপ দাস, খগেন সাহুদের মতো ফুল-চাষিদের বক্তব্য, “জেলায় ফুল-বাজার এবং সংরক্ষণ কেন্দ্র তৈরি করা অত্যন্ত জরুরি। নির্দিষ্ট বাজার থাকলে ক্রেতা-বিক্রেতা সবারই সুবিধা হবে।” চাষিদের সমস্যার কথা মেনে জেলা পরিষদের সভাধিপতি অন্তরা ভট্টাচার্য বলেন, “চাষের এলাকা বাড়ছে। এই অবস্থায় ফুল বাজার, সংরক্ষণ কেন্দ্র না থাকলে সমস্যা হবেই। নতুন করে পরিকল্পনা তৈরি করে সংশ্লিষ্ট দফতরকে পদক্ষেপ করতে হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.