টানা আট দিন পড়ার পর মঙ্গলবার চাঙ্গা হল শেয়ার বাজার। এই দিন সেনসেক্স বেড়েছে ১১৯.৩২ পয়েন্ট। বাজার বন্ধের সময়ে তা থিতু হয় ১৬,০৬৫.৪২ অঙ্কে।
অবশ্য, এ দিনও ফের পড়েছে টাকার দাম। এক সময়ে তা নেমে যায় ডলারে ৫২.৭৩ টাকায়। যা টাকার ইতিহাসে ডলারের সাপেক্ষে সবচেয়ে কম দাম। বাজার সূত্রের খবর, বিদেশি আর্থিক সংস্থার তরফে শেয়ার বিক্রি ছাড়াও ব্যাঙ্ক এবং আমদানিকারী সংস্থার ডলারের চাহিদা বেড়ে যাওয়ার জেরেই পতন। আমদানিকারীদের মধ্যে মূলত ছিল তেল সংস্থাগুলি। তবে দিনের শেষে পতনের রেশ কিছুটা কাটিয়ে ওঠে টাকা। এর ফলে বাজার বন্ধের সময়ে প্রতি ডলারের দাম কিছুটা কমে দাঁড়ায় ৫২.২৯/৩০ টাকা। তবে টাকার এই দামও সোমবারের তুলনায় ১৫ পয়সা কম। প্রসঙ্গত, জুলাই মাসেই প্রতি ডলারের দাম ছিল ৪৩.৮৫ টাকা। অর্থাৎ গত চার মাসেই টাকার দাম পড়েছে ১৬.৫ শতাংশ। তবে এই মুহূর্তে টাকার দামের পতন রুখতে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক হস্তক্ষেপ করছে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন গভর্নর ডি সুব্বারাও। এখনই হস্তক্ষেপ করলে পরিস্থিতি আয়ত্তে আসবে না বলে মন্তব্য করেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়ও।
পড়তি বাজারে শেয়ার কেনার জন্য বিনিয়োগকারীদের চাহিদা বেড়ে যাওয়ার হিড়িকেই মঙ্গলবার সেনসেক্স বেড়েছে বলে শেয়ার বাজার সূত্রের খবর। পাশাপাশি, আগামী বৃহস্পতিবার চলতি মাসের ডেরিভেটিভ লেনদেনের শেয়ার হস্তাম্তর এবং দাম মেটানোর দিন। যে-সব লগ্নিকারী ডেরিভেটিভ লেনদেনে আগাম শেয়ার বিক্রি করে রেখেছেন, তাঁরা ওই দিন শেয়ার হস্তান্তরের জন্য প্রস্তুত হতে এই দিন শেয়ার কিনতে নেমে পড়েন। এটিও সূচকের উত্থানে সাহায্য করেছে।
বাজার সূত্রের খবর, চলতি মাসেই সার্বিক ভাবে শেয়ারের দাম পড়েছে ১০ শতাংশ। তবে বাজারের পক্ষে কিছুটা স্বস্তির খবর, রাজকোষ ঘাটতি কমানোর জন্য ব্যবস্থা নিতে আমেরিকার দুই প্রধান রাজনৈতিক দল রিপাবলিকান এবং ডেমোক্র্যাটরা একমত হতে না-পারলেও ওই দেশের রেটিং এখনই কমাচ্ছে না মূল্যায়ন সংস্থাগুলি। এই খবরের জেরে এ দিন ইউরোপের শেয়ার বাজারগুলিও কিছুটা থিতু হয়েছে। যে-সব সংস্থার দর এ দিন উল্লেখযোগ্য ভাবে বেড়েছে, তার মধ্যে রয়েছে রিলায়্যান্স ইন্ডাস্ট্রিজ, স্টেট ব্যাঙ্ক, এইচডিএফসি ব্যাঙ্ক, মারুতি, ইনফোসিস ইত্যাদি।
এ দিকে টাকার দাম পড়ার ব্যাপারে এখনই রিজার্ভ ব্যাঙ্ক হস্তক্ষেপ করছে না বলে জানিয়েছেন শীর্ষ ব্যাঙ্কের গভর্নর ডি সুব্বারাও এবং ডেপুটি গভর্নর সুবীর গোকর্ণ। সুব্বারাওয়ের মতে, বিশ্ব বাজারে বিভিন্ন মুদ্রার ওঠা-পড়ার নিরিখেই টাকার দাম পড়েছে। বিশেষ করে ইউরোপের ঋণ মেটানোর সঙ্কট কোন দিকে মোড় নেয়, তার উপরই নির্ভর করবে ভবিষ্যতে বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে টাকার গতিবিধি। তিনি বলেন, “টাকার দামের এই পতন যদি সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির ওপর প্রভাব ফেলে, কিংবা যদি দেখা যায় যে, এতটা ওঠা-পড়া কাম্য নয়, তবেই রিজার্ভ ব্যাঙ্ক হস্তক্ষেপ করবে।” গোকর্ণ অবশ্য টাকার এই ঐতিহাসিক পতনকে ‘সমস্যা সৃষ্টিকারী’ বলে আখ্যা দিয়েছেন।
এই দিন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়ও বলেন, “রিজার্ভ ব্যাঙ্ক হস্তক্ষেপ করলেই টাকার দামের পতন ঠেকানো যাবে, এমনটা ভাবার কোনও কারণ নেই।” তাঁর মতে, শেয়ার বাজার থেকে বিদেশি বিনিয়োগকারী সংস্থাগুলির লাগাতার টাকা তুলে নেওয়াই টাকার দাম কমার জন্য প্রধানত দায়ী। কারণ, ওই সব সংস্থা ভারতের বাজারে শেয়ার বিক্রি করে যে অর্থ পাচ্ছে, তা দিয়ে ডলার কিনে দেশে নিয়ে যাচ্ছে। এর ফলেই ডলারের চাহিদা তুঙ্গে উঠেছে। বেড়েছে তার দামও। পাশাপাশি, আন্তর্জাতিক অর্থনীতির ডামাডোলও টাকার দাম কমার অন্যতম কারণ বলে মন্তব্য করেন প্রণববাবু।
টাকার মূল্য হ্রাসকে সমস্যা সৃষ্টিকারী বলে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের এই আখ্যাকে অবশ্য যথাথর্র্ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ, টাকার দাম পড়ে গিয়ে ডলারের দাম বাড়ায় সমস্যায় পড়েছেন দেশের আমদানিকারীরা। এক দিকে সুদের হার বাড়ায় এমনিতেই শিল্প সংস্থাগুলি সমস্যায় পড়েছে। বেড়েছে উৎপাদন খরচ। তার উপর আমদানির খরচ বেড়ে যাওয়ার ফলে অনেক ক্ষেত্রেই উৎপাদনের কাঁচা মাল সংগ্রহ এবং যন্ত্রপাতি কেনার খরচ বৃদ্ধি পয়েছে। যা উৎপাদন খরচকে আরও বাড়িয়ে দেবে বলে আশঙ্কা। এর বিরূপ প্রভাব শিল্প উৎপাদন সূচকের উপর পড়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.