ভর্তুকির সিলিন্ডার বেঁধে
দিয়ে দাম বাড়াচ্ছে সরকার
মূল্যবৃদ্ধির বাজারে এ বার রান্নার গ্যাস নিয়েও চিন্তা বাড়তে চলেছে মধ্যবিত্তের।
পরিবার-পিছু বছরে চার থেকে ছ’টির বেশি সিলিন্ডারে আর ভর্তুকি দেবে না কেন্দ্রীয় সরকার। এখন প্রতিটি সিলিন্ডারে ভর্তুকির পরিমাণ ২৭০ টাকা। নতুন নিয়ম বলবৎ হলে বাকি সিলিন্ডার কিনতে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা খরচ করতে হবে।
ভর্তুকি দেওয়া সিলিন্ডারের সংখ্যা বেঁধে দেওয়ার সুপারিশ করেছে নন্দন নিলেকানির নেতৃত্বাধীন টাস্ক ফোর্স। সেই সুপারিশ মেনে নিতে চলেছে কেন্দ্র। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায় আজ বলেন, “খুব তাড়াতাড়িই রান্নার গ্যাসের নতুন বণ্টন ব্যবস্থা পাইলট প্রকল্প হিসেবে চালু করতে চলেছি। এর ফলে ভর্তুকির খরচ বাঁচবে। যাঁদের সত্যিই দরকার, তাঁদের কাছে আরও বেশি করে ভর্তুকি পৌঁছে দেওয়া যাবে।”
অর্থ মন্ত্রকের বক্তব্য, গৃহস্থদের ব্যবহারের জন্য গ্যাস সিলিন্ডার বেআইনি ভাবে হোটেল, রেস্তোঁরাঁ, শিল্পে ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে ভর্তুকির অনেকটাই জলে যাচ্ছে। সেই কারণেই এই নতুন ব্যবস্থা চালু করার উদ্যোগ। দারিদ্রসীমার নীচে বসবাসকারীরা যাতে এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত না হন, সে জন্য তাঁদের নগদ মূল্যে ভর্তুকি দেওয়া হবে। গরিবদের সুরাহা দিয়েও সরকারের ভর্তুকির বোঝা কমানোই সরকারের উদ্দেশ্য।
সরকারের এই পরিকল্পনা যথাযথ ভাবে রূপায়িত হলেও মধ্যবিত্তরা যে ধাক্কা খাবেন, তা নিয়ে সন্দেহ নেই। তার উপর গত সপ্তাহে ‘রাজনৈতিক চাপে’ পেট্রোলের দাম কমানো হলেও যে ভাবে ডলারের তুলনায় টাকার দাম রোজই পড়ছে, তাতে ডিসেম্বরের শুরুতে তেল সংস্থাগুলি ফের দাম বাড়াতে ‘বাধ্য’ হবে বলে মনে করছে অর্থ মন্ত্রক।
এই অবস্থায় সরকারের যুক্তি মানতে নারাজ বিরোধীরা। বিজেপি-র সমর্থন নিয়ে বামেরা আজ মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে সরকারের ব্যর্থতা নিয়ে সংসদে মুলতুবি প্রস্তাব এনেছে। বামেদের প্রশ্ন, কেন একের পর এক পেট্রো-পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণমুক্ত করে দেওয়া হচ্ছে? কেন পেট্রোলের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা হচ্ছে না? কেনই বা ফাটকাবাজি নিষিদ্ধ করা হচ্ছে না?
সেই মুলতুবি প্রস্তাব খারিজ হয়ে গেলেও, প্রণববাবু আজ নিজে থেকেই মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে সংসদে বিবৃতি দিয়েছেন। মূল্যবৃদ্ধির জন্য জোগান ও সরবরাহের ফারাক, ডলারের তুলনায় টাকার দাম পড়ে যাওয়া, আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম বৃদ্ধি এবং মন্দার মোকাবিলায় আমেরিকার মতো দেশে নগদ জোগান বাড়ার মতো কারণগুলিকে দায়ী করেছেন তিনি। তবে তাঁর আশা, আগামী বছরের মার্চের শেষে মূল্যবৃদ্ধির হার ৬ থেকে ৭ শতাংশের মধ্যে নেমে আসবে। যা শুনে বিজেপি নেতা যশবন্ত সিন্হার বক্তব্য, মার্চে দাম কমানোর আশা দেখিয়ে প্রণববাবু আসলে আরও ছয় মাস সময় চেয়ে নিলেন। আর সিপিআইয়ের গুরুদাস দাশগুপ্তর কটাক্ষ, “উনি ধর্মে বিশ্বাস রাখুন, কিন্তু জ্যোতিষী হওয়ার দরকার নেই।”
বিরোধীদের এই সম্মিলিত আক্রমণ ভোঁতা করতে মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের যুদ্ধে তাদেরও সামিল করার কৌশল নিতে চাইছে সরকার। আজ বাম নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে প্রণববাবু বলেন, ইউরোপে সঙ্কটের ফলে সেখান থেকে পুঁজি চলে যাচ্ছে আমেরিকায়। তার ফলে প্রায় সব মুদ্রার তুলনায় ডলারের দাম বাড়ছে। এ ক্ষেত্রে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের হস্তক্ষেপেও বিশেষ লাভ হবে না। এই অবস্থায় বিরোধী নেতারাই দাওয়াই বলে দিন। সবাইকে নিয়ে একটি উপদেষ্টা কমিটি তৈরি করা যেতে পারে বলে প্রস্তাব দেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী। প্রয়োজনে এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকার শ্বেতপত্র আনতেও রাজি বলে জানান তিনি। বামেরা অবশ্য সরকারের এই ‘ফাঁদে’ পা দিতে রাজি হননি।
যশবন্তও পাল্টা অভিযোগ তুলেছেন, আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির জন্য এ দেশে টাকার দাম কমছে, এই যুক্তি ধোপে ঠেকে না। দেশীয় অর্থনীতি ঠিকমতো পরিচালনা করতে না পারার ফলেই এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। প্রণববাবু আজ যুক্তি দিয়েছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি ও ভোজ্য তেল-সহ বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়ার ফলেই এ দেশে মূল্যবৃদ্ধি হচ্ছে। সেই দাম কমলেও যেটুকু লাভ হত, টাকার দাম পড়ে যাওয়ায় আমদানির খরচ আগের জায়গাতেই থাকছে। কিন্তু যশবন্তের দাবি, দেশের অর্থনীতির আশি শতাংশ বিদেশের উপর নির্ভরশীল নয়। কাজেই এই যুক্তি ত্রুটিপূর্ণ।
আন্তর্জাতির পরিস্থিতির পাশাপাশি মূল্যবৃদ্ধির আরও একটি কারণ আজ দেখিয়েছেন প্রণববাবু। তিনি বলেন, এ দেশে দ্রুত আর্থিক বৃদ্ধির ফলে জোগানের তুলনায় চাহিদা বেশি তৈরি হয়েছে। তার ফলেও মূল্যবৃদ্ধি হচ্ছে। প্রণববাবুর বক্তব্য, চিন, দক্ষিণ কোরিয়া থেকে ভিয়েতনাম, আর্জেন্তিনার মতো দেশও এই অধ্যায় পেরিয়ে এসেছে। আর্থিক বৃদ্ধির ফলে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে। যোজনা কমিশনের হিসেবে, মুদ্রাস্ফীতির হার হিসেবের মধ্যে রেখেও ২০০৭ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে ১৬ শতাংশ বেতন বেড়েছে।
এই যুক্তি খারিজ করে দিয়ে সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, আর্থিক সমীক্ষা অনুযায়ী সাধারণ মানুষ সংসার খাতে যে টাকা খরচ করেন তার পরিমাণ কমেছে। তা হলে চাহিদা বাড়ার তত্ত্ব টেকে কী করে!
তবে বিরোধীদের আক্রমণের মুখে আজ একটি বিষয় স্পষ্ট করে দিয়েছেন প্রণববাবু। তা হল, আর্থিক বৃদ্ধির লক্ষ্য থেকে সরকার সরে আসছে না। তাঁর যুক্তি, নগদের জোগান কমাতে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বেশি কড়া হলে আর্থিক বৃদ্ধিতে ধাক্কা লাগবে। আবার আর্থিক ঘাটতি কমানোর কথা মাথায় রেখে ব্যয় কমাতে গেলেও আর্থিক বৃদ্ধিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। এই দু’টি বিষয় মাতায় রেখেই সতর্ক পা ফেলছে মনমোহন-সরকার।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.