দিনভর হিসেব-নিকেশের কাজে ব্যস্ত থাকেন তিনি। কিন্তু বাড়ি ফিরেই বসে পড়েন নারকেল মালা নিয়ে। কাজ করতে করতে মাঝে-মধ্যে রাত কেটে ভোরও হয়ে যায়। তবু ক্লান্তি নেই তাঁর। আর এই শিল্পের নেশাই কৃষি মন্ত্রকের পুরস্কার এনে দিয়েছে তাপস পালকে।
চাকরির জন্য কালনায় বসবাস করলেও তাপসবাবুর আদি বাড়ি কাটোয়ার চণ্ডুল গ্রামে। কালনার মহকুমাশাসকের অফিসে নজরৎখানার কর্মী তাপসবাবু। হিসেব-নিকেশ রাখার দায়িত্বে রয়েছেন তিনি। অফিসের কাজকর্ম সামলেও মাস আটেক আগে নারকেলের মালার বিভিন্ন অংশ কেটে তিনি তৈরি করেছিলেন একটি ফুলদানি। যার উপরের দিকে ছিল ব্রম্ভা-বিষ্ণু-মহেশ্বরের মূর্তি। পুরো বিষয়টি নিয়ে তাপসবাবু তৈরি করেছেন একটি তথ্যচিত্র। নারকেল মালার ফুলদানিটি-সহ ওই তথ্যচিত্র পাঠানো হয় রাজ্যের ‘কোকোনাট ডেভলপমেন্ট বোর্ড’-র কাছে। |
শিল্পীর স্বীকৃতি। নিজস্ব চিত্র। |
সেখান থেকে তাঁর শিল্পকর্মটি জাতীয় স্তরে মনোনীত হয়। গত ২১ সেপ্টেম্বর গুয়াহাটির একটি অনুষ্ঠানে শিল্পীর হাতে তুলে দেওয়া হয় পুরস্কার। উপস্থিত ছিলেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ-সহ তিন মন্ত্রী।
তাপসবাবু জানান, প্রথাগত প্রশিক্ষণ না থাকলেও খড় আর বেত দিয়েই প্রথম কাজ শুরু করেন তিনি। ১৯৮৭ সালে কলকাতায় একটি প্রদর্শনী দেখার পরেই নারকেলের মালা দিয়ে বিভিন্ন সামগ্রী তৈরি করতে শুরু করেন তিনি। বহু বার নারকেলের তৈরি মূর্তি তৈরি করে মিলেছে পুরস্কারও। তাপসবাবুর কথায়, “জাতীয় স্তরের সম্মান মেলার পরে জেদ আরও বেড়ে গিয়েছে।” তিনি জানান, আন্তর্জাতিক স্তরের একটি প্রতিযোগিতার জন্য ইতিমধ্যেই প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন তিনি। স্বামীর সাফল্যে খুশি জয়শ্রীদেবীও। তিনি বলেন, “রাতে অফিস থেকে ফিরেও কখনও রং-তুলি, কখনও নারকেলের মালা নিয়ে বসে পড়ে। আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতাতেও ও সাফল্য পাবে বলে আমি আশাবাদী।”
সম্প্রতি মহকুমা প্রশাসনের তরফে সম্মানিত করা হয় তাপসবাবুকে। জেলাশাসক ওঙ্কার সিংহ মিনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে না পারলেও লিখিত বার্তায় জানিয়ে দেন, “তাপস পালের কৃতিত্বে গোটা জেলা গর্বিত।” এ দিন অনুষ্ঠানে মহকুমাশাসক সুমিতা বাগচি বলেন, “কাজকর্ম সেরেও যে নিজের শিল্পীসত্ত্বা হারিয়ে ফেলেননি, তা অন্য সরকারি কর্মীদের কাছে প্রেরণা হতে পারে।” |