আইনের পথে হেঁটে খুনে অভিযুক্ত দলীয় নেতাকে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করানোর ব্যাপারে উদ্যোগী হবে না তৃণমূল। বরং তিনটি খুন-সহ নানা অপরাধে অভিযুক্ত কেতুগ্রাম ১ ব্লক তৃণমূল সহ-সভাপতি সাউদ মিয়াঁকে প্রকাশ্যে না আসার পরামর্শ দেন দলীয় নেতারা।
রবিবার বর্ধমানের কেতুগ্রামে পুলিশি ‘সন্ত্রাসের’ প্রতিবাদে তৃণমূলের সভায় রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়নমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ, বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল ও দলের দুই বিধায়কের সঙ্গে আগাগোড়া মঞ্চে ছিলেন সাউদ মিয়া। এই খবর আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশের পরেই বিতর্ক শুরু হয়। সোমবার সন্ধ্যায় মহাকরণে গিয়ে এ ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন পঞ্চায়েতমন্ত্রী চন্দ্রনাথবাবু এবং কেতুগ্রামের তৃণমূল বিধায়ক শেখ সাহানেওয়াজ। ওই রাতেই চন্দ্রনাথবাবু দাবি করেন, “বাম জমানায় সিপিএম ও পুলিশ মিথ্যা অভিযোগে সাউদকে ফাঁসিয়েছিল। আমাদের নামেও গাদ-গাদা মামলা আছে। দিদিকে বলেছি, ও দুষ্কৃতী নয়। বরং ভাল কাজ করছে।” সাউদকে আত্মসমর্পণ করানো হবে কি না, সে প্রশ্নে সোমবার বিধায়ক শেখ সাহানেওয়াজ জানান, এ নিয়ে দলে আলোচনা হয়নি। মঙ্গলবার সকালে অবশ্য কলকাতা থেকে নানুর ফেরার পথে ফোনে বিধায়ক বলেন, “সাউদ-সহ যে সব তৃণমূল নেতার নামে সিপিএমের আমলে মিথ্যা অভিযোগ হয়েছিল, তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে দরখাস্ত করে জানাবেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণেই সিপিএম এবং পুলিশ মিথ্যা অভিযোগ করেছে। মুখ্যমন্ত্রী ওই চিঠি আইনমন্ত্রীকে খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেবেন। আইনমন্ত্রী পুলিশের সঙ্গে কথা বলে রিপোর্ট দেওয়ার পরে দল পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে।” তাঁর কথায়, “সাউদ রাজনৈতিক কারণে ফেঁসে গিয়েছে। যত দিন এ নিয়ে ফয়সালা না হচ্ছে, ওর প্রকাশ্যে না এসে লুকিয়ে থাকা উচিত।”
সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য, কাটোয়ার বাসিন্দা অচিন্ত্য মল্লিকের কটাক্ষ, “একটি গণতান্ত্রিক দল অভিযুক্তকে আত্মসমর্পণ করাবে, এটাই স্বাভাবিক। তার পরে আদালত ঠিক করবে, সে দুষ্কৃতী কি না। কিন্তু এ ক্ষেত্রে শাসক দলের মন্ত্রী-নেতারাই সব ঠিক করে দিচ্ছেন। প্রশাসনকে কোনও কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না। রাজ্যে তো আইন বলে আর কিছু থাকবে না।” তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি তথা কেতুগ্রামের দলীয় পর্যবেক্ষক অনুব্রত মণ্ডলের পাল্টা দাবি, “ওদের মুখে আইনের কথা মানায় না। সিপিএম নেতারা থানায় বসে থেকে পুলিশের সহযোগিতায় আমাদের নেতা-কর্মীদের নামে মিথ্যা অভিযোগ করত। খুন করে দেহ পাচারের পরে ওদের লোকজন প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াত।” |