ফের বিতর্কে বিষ্ণুপুর মহকুমা হাসপাতাল। এ বার এক প্রসূতিকে বিড়ালে আঁচড়ানো এবং এক রোগীর উধাও হয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠল সেখানে। দু’টিই সোমবারের ঘটনা।
শল্য চিকিৎসক ও অ্যানাস্থেটিস্ট ছুটিতে থাকায় রবিবারই দুর্ঘটনায় আহত এক যুবকের অস্ত্রোপচার করা যায়নি ওই হাসপাতালে। বাঁকুড়া মেডিক্যালে নিয়ে যাওয়ার পথে মারা যান ওই যুবক। তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই এমন দু’টি অভিযোগ ওঠায় ফের অস্বস্তিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এ দিন ক্ষোভে ফেটে পড়েন বিড়ালে আঁচড়ানো প্রসূতি আলিয়া বিবির স্বামী ইয়াসিন মির্জা এবং শ্বাসকষ্ট নিয়ে ভর্তি হয়ে উধাও হয়ে যাওয়া রোগী নারায়ণ গুঁইয়ের ভাইপো চন্দন গুঁই। নারায়ণবাবুকে অবশ্য পরে খুঁজে পেয়ে ওই হাসপাতালেই ভর্তি করানো হয়।
রোগী ও আত্মীয়দের দাবি, প্রয়োজনের তুলনায় এই হাসপাতালে চিকিৎসক ও কর্মী সংখ্যা কম। যার মাসুল গুনতে হচ্ছে রোগীদের। এ দিন প্রসূতি বিভাগে গিয়ে দেখা গেল, তিন দিনের বাচ্চাতেক নিয়ে শুয়ে আছেন আলিয়া বিবি। পায়ের পাতার উপরের লাল অংশ দেখিয়ে বললেন, “রবিবার মাঝরাতে হঠাৎই পায়ে আঁচড়ে দেয় একটা বিড়াল। বাচ্চা পাশে ছিল। ভাগ্যিস ওকে কামড়ায়নি! ডাক্তারকে বলায় উনি অ্যান্টি র্যাবিস ইঞ্জেকশন দেন। আরও কয়েকটা ইঞ্জেকশন নিতে হবে।” সরকারি হাসপাতালে কেন এ ভাবে কুকুর-বিড়াল ঢোকা ঠেকানো যাচ্ছে না, সে প্রশ্নও তুলেছেন তিনি। পাশের শয্যায় চার দিনের শিশুকে নিয়ে থাকা মড়ার গ্রামের বাসিন্দা সন্ধ্যারানি টিকাদার বলেন, “খুব ভয়ে থাকি। এই হয়তো বাচ্চাকে মুখে তুলে নিল কুকুর বা কামড় বসাল বিড়াল! বিড়াল-কুকুর ঢোকা বন্ধ করতে অবিলম্বে কিছু একটা ব্যবস্থা নিক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।”
এই হাসপাতালেরই নীচের তলায় পুরুষ সাধারণ বিভাগের ১ নম্বর শয্যার কাছে গিয়ে দেখা গেল, ৮০ বছরের নারায়ণ গুঁইকে হাত ধরে শোওয়াচ্ছেন ভাইপো চন্দনবাবু। তাঁর ক্ষোভ, “সারা রাত হাসপাতালের দরজা খোলা। নিরাপত্তারক্ষী বলে কিছু নেই। রাতে আমিই পাশে ছিলাম। ভোরে হঠাৎ দেখি জেঠা নেই। আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশীদের কাছে খোঁজ পাঠিয়ে বেলায় জেঠাকে ধরে আনি লালগড়ে যাওয়ার জঙ্গল রাস্তা থেকে। বড় বিপদ হয়ে গেলে কে দায় নিত?”
হাসপাতাল সুপার রবীন্দ্রনাথ প্রধান জানান, রোগী পালানোর খবর পাওয়া মাত্রই থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করা হয়। দু’টি শিফ্টে মাত্র দু’জন নিরাপত্তারক্ষী থাকায় এ ধরনের সমস্যা হচ্ছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে। কুকুর-বিড়ালের উপদ্রব প্রসঙ্গে বন দফতরের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে সুপার বলেন, “ও-সব ধরার দায়িত্ব বন দফতরের। বারবার ‘ক্যাচার’ পাঠাতে বলেও ফল হয়নি। সত্যিই এটা মারাত্মক সমস্যা। বিড়ালে আঁচড়ানো প্রসূতিকে প্রতিষেধক দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি।”
এ দিন হাসপাতালের স্টোররুমে গিয়ে দেখা গেল, ডাঁই করা ওষুধপত্রের বড় বড় প্যাকেটের তলায় দিব্যি বাচ্চা দিয়েছে একটা মাদি কুকুর। ধারে কাছে কাউকে ঘেঁষতে দিচ্ছে না মা কুকুর। বহির্বিভাগে বাচ্চাকে দেখাতে নিয়ে আসা বাঁকাদহের সুধারানি চক্রবর্তী বললেন, “কুকুর-বিড়াল কামড়ে দিলে আর এক বিপদ! হাসপাতালের কর্মীরা কি দেখেও দেখেন না?” হাসপাতাল সুপারের স্বীকারোক্তি, “২৩০ শয্যার হাসপাতালে রোগী ভর্তির সংখ্যা প্রায় ৪০০। সেই তুলনায় কর্মী অপ্রতুল। এই অবস্থায় রোগীদের চাপ ও ক্ষোভ সব সামলাতে হয় আমাদের।” |