থালা থেকে ভাত নিয়ে মুখের কাছে নিয়েও মেঝেতে ফেলে দিয়ে খিলখিল করে হাসে ১১ বছরের ছেলেটি। ধমক দিলে জানলা দিয়ে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। কখনও চিৎকার করে কাঁদে। কখনও আবার কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে গুনগুনিয়ে ওঠে। ১১ বছরের এই ‘অনাথ’ ছেলেটির নাম রাহুল কুমার। ‘অস্বাভাবিক আচরণের’ জন্য জলপাইগুড়ির সরকারি কোরক হোম থেকে গত ১৫ নভেম্বর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয় রাহুলকে। কিন্তু যার মানসিক চিকিৎসা প্রয়োজন তাকে ছদিন ধরে হাসপাতালের সাধারণ বিভাগে কাটাতে হয়। ছ’দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি থাকলেও যার চিকিৎসা শুরু হয়নি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, অনাথ ও ভবঘুরে শিশু কিশোরদের থাকার সরকারি আবাস তথা জলপাইগুড়ির কোরক হোমের পক্ষ থেকে ছেলেটিকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করে ‘দায়িত্ব’ সারা হয়েছে। সরকারি হাসপাতালের নিয়ম অনুযায়ী, রোগীর বাড়ির কেউ বা যে সংস্থা ভর্তি করাচ্ছে তাদের কেউ, অর্থাৎ কোনও অভিভাবক সারাক্ষণ রোগীর সঙ্গে না থাকলে তাকে মানসিক বিভাগে ভর্তি করা যায় না। ভর্তির পরে পাঁচদিন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চিঠি পাঠান কোরক হোমে। উত্তর মেলেনি বলে হাসপাতালের তরফে জানানো হয়েছে। শেষ পর্যন্ত সংবাদ মাধ্যমের তরফে খোঁজখবর নেওয়া শুরু হতেই এ দিন সকালে হোমের তরফে এক জন অস্থায়ী কর্মীকে পাঠানো হয়। পরে এ দিন সকালে মানসিক বিভাগে রাহুলকে নিয়ে যাওয়া হয়। কিছুক্ষণ পরেই ওই কর্মী চলে যান। হাসপাতালের সুপার ব্রজেশ্বর মজুমদার বলেন, “হোমকে বলে সাড়া পাওয়া যায়নি, তাই চিকিৎসা হচ্ছে না।” |
হাসপাতালের মানসিক চিকিৎসক আশিস সরকার বলেন, “ছেলেটি ছটি দিন সাধারণ বিভাগে পড়ে রইল। হোমের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও তারা কাউকে পাঠাননি। এমনকী, জামাকাপড়ও দেননি। আমি এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে দিয়ে জামা কাপড় আনিয়েছি। সোমবার সকালে তাকে মানসিক বিভাগে ভর্তি করা হয়েছে।” হাসপাতাল কতৃপক্ষ জানিয়েছে ছেলেটিকে যখন ভর্তি করা হয় তখন তার গায়ে কোনো জামা ছিল না। শুধু একটি দুর্গন্ধ যুক্ত প্যান্ট পরিয়ে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অস্বস্তির কারণেই ছেলেটি প্যান্টটি খুলে ফেলে দেয়। হোম সূত্রের খবর, গত ১৯ অক্টোবর নেপাল থেকে রাহুলকে জলপাইগুড়ির কোরক হোমে পাঠানো হয়। তার পরে কোনও রাতেই সে ঘুমোয়নি। কখনো রাতভর চিৎকার করেছে। কখনও বা অনান্য আবাসিকদের মশারি ছিঁড়ে দিয়েছে। জানলার কাচে ঘুষি মেরে ভেঙে গিয়ে রক্তারক্তি কান্ড ঘটিয়েছে। আবার কখনও নিজের মাথা বারবার দেওয়ালে ঠুকেছে। সরকারি কোরক হোমের সুপার অজয় বড়ুয়া বলেন, “এখানে মানসিক রোগীদের রাখা সমস্যা। তাই হাসপাতালে পাঠিয়ে ছিলাম। জামাকাপড়, তেল সাবান সবই পাঠানো হয়েছে। হোম থেকে দু জন আয়াও ঠিক করে দেওয়া হয়েছে।” সবই করা হয়েছে মোহনকে হাসপাতালে ভর্তি করার ছ’দিন পড়ে। হাসপাতালের তরফে চিঠি পাঠানোর পরেও এত দিন লাগল কেন? সুপার বলেন, “আমরা যথাসাধ্য করেছি।” |