পরিকাঠামোর অভাবে গত চার বছর ধরে বন্ধ হয়ে রয়েছে রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালের ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ)। হাসপাতালে নেই হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ। ফলে গত চার বছর ধরে হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা পরিষেবা দিতে পারছেন না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। অভিযোগ, বারবার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে সমস্যার কথা রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরকে জানানো হলেও পরিকাঠামোর উন্নয়ন করে আইসিইউ খোলার ব্যাপারে কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এমনকী হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ নিয়োগের ব্যাপারেও সবুজ সংকেত মেলেনি। সম্প্রতি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রাজ্যের জনশিক্ষা ও গ্রন্থাগারমন্ত্রী আবদুল করিম চৌধুরীর কাছে লিখিতভাবে সমস্যার কথা জানিয়ে আইসিইউ চালু করা সহ হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ নিয়োগের আর্জি জানিয়েছেন। এই বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, “পরিকাঠামোর উন্নয়ন করে খুব শীঘ্রই রাজ্য সরকার আইসিইউ চালু করার উদ্যোগ নিচ্ছে।” হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে মন্ত্রীর কাছে আইসিইউ চালু করার জন্য ৪ জন হৃদরোগ, ৬ জন নার্স ও ১০ জন স্বাস্থ্য কর্মী নিয়োগ করার আর্জি জানানো হয়েছে। পাশাপাশি চিকিৎসার আধুনিক যন্ত্রপাতি ও শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র বরাদ্দ করারও আর্জি জানানো হয়েছে। বস্তুত, দীর্ঘদিন ধরে আইইউসি চালু করার দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। |
হাসপাতাল সুপার অরবিন্দ তান্ত্রি বলেন, “পরিকাঠামোর অভাবে আইসিইউ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকে হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ না থাকায় হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীরা আউটডোরে গিয়ে চিকিৎসা পরিষেবা পাচ্ছেন না। তাদেরকে বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে রেফার করে দেওয়া হচ্ছে। বারবার রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরে সমস্যার কথা জানিয়েও কোনও লাভ না হওয়ায় আমরা মন্ত্রীর দ্বারস্থ হয়েছি।” হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৬ সালে হাসপাতালে ৮ শয্যার আইসিইউ চাল করে স্বাস্থ্য দফতর। কিন্তু গোড়া থেকেই হাসপাতালে কোনও হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ছিল না। হাসপাতালের সাধারণ চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্য কর্মীরাই আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রোগীদের চিকিৎসা পরিষেবা দিতেন। কিন্তু হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ, নার্স ও স্বাস্থ্য কর্মীর অভাব-সহ চিকিৎসার আধুনিক যন্ত্রপাতি এবং শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্রের অভাবে ২০০৭ সালে আইসিইউ বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তার আগে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন এক রোগীর মৃত্যুর পর চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ তুলে আইসিইউতে ভাঙচুর চালায় মৃতের পরিবারের লোকজন। উত্তর দিনাজপুর জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক পবিত্র চন্দ বলেন, “হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা পরিষেবার স্বার্থে আইসিইউ চালুর দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আমাদের আন্দোলন চলছে। মন্ত্রী এই বিষয়ে উদ্যোগী হওয়ায় আমরা খুশি।” জেলা তৃণমূল কংগ্রেস নেতা তিলক চৌধুরী বলেন, “পূর্বতন বামফ্রন্ট সরকারের ব্যর্থতা ও পরিচালনায় গলদ থাকায় চালু হওয়ার এক বছর পর আইসিইউ বন্ধ হয়ে যায়। বিষয়টি জানার পর মন্ত্রী উদ্যোগী হয়েছেন।” জেলা বামফ্রন্টের সচিব অপূর্ব পাল বলেন, “বামফ্রন্ট সরকারের ব্যর্থতার জেরেই যদি আইসিইউ বন্ধ হয়, তবে তখন বিরোধী জনপ্রতিনিধিরা ও রোগী কল্যাণ সমিতির সদস্যরা চুপ করে বসে থাকলেন কেন?” |