খোদ রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা চিকিৎসকদের ‘দায়সারা’ মনোভাব পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। এই আশ্বাসের পরেও সাত দিন কেটে গিয়েছে। কেমন চলেছে শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতালের কাজকর্ম?
সোমবার সকাল ৯টা। দেখা গেল, বহির্বিভাগে একমাত্র দন্ত বিশেষজ্ঞ এসেছেন। প্রতিদিনের মতোই সুপারিন্টেন্ডেন্টও হাজির। আর বাকিরা? সকাল সওয়া ৯টা। সাধারণ বিভাগে এক জন চিকিৎসক এলেন। থাকার কথা দু’জনের। তখনও খোলেনি ব্লাডব্যাঙ্কের তালা।
চক্ষু, ফিজিওথেরাপি, ইসিজি বিভাগ খোলা হল সাড়ে ৯টারও পরে। কাছাকাছি সময়ে বহির্বিভাগে ঢুকলেন নাক, কান, গলা বিশেষজ্ঞ। শিশুবিভাগ, চর্মবিভাগে চিকিৎসক ঢুকতে ঢুকতে ঘড়ির কাটা ১০টা পেরিয়ে গেল। স্ত্রী-রোগ বিশেষজ্ঞ এলেন তারও প্রায় ৪৫ মিনিট পরে। বসার পর্যাপ্ত যায়গা নেই। অগত্যা দাঁড়িয়েই চিকিৎসকের অপেক্ষায় মহিলারা। যদিও, প্রত্যেকটি বিভাগেই সকাল ৯টায় রোগী দেখা আরম্ভ হওয়ার কথা।
ইতিমধ্যে জানা গেল রেডিওলজিস্ট ফোনে জানিয়েছেন, তিনি আসছেন না। ফলে, আলট্রাসনোগ্রাফি করাতে আসা অন্তত ২৫ জনকে (অধিকাংশই প্রসূতি) ফিরে যেতে হল। এঁদের কাউকে তিন মাস আগে, কাউকে চার মাস আগে ওই পরীক্ষা করানোর ‘ডেট’ দেওয়া হয়েছিল। হাসপাতাল সূত্রের খবর, রেডিওলজিস্ট কোনও দিনই সকাল সাড়ে ১০টার আগে ঢোকেন না। স্ত্রী-রোগ বিশেষজ্ঞ প্রসূতিদের বাইরে থেকে পরীক্ষা করানোর ‘পরামর্শ’ দিলেন।
জরুরি বিভাগে নার্সের অনুপস্থিতিতেই মহিলা রোগীদের দেখা হয়। এক সঙ্গে দু’জন চিকিৎসক উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও আদতে থাকেন মাত্র এক জন। অভিযোগ, এক শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ বকলমে হাসপাতালের যাবতীয় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেন। চিকিৎসকদের ডিউটির তালিকা তাঁর ‘নির্দেশে’ তৈরি হয়। যে মুষ্টিমেয় কিছু কর্মী নিয়ম মেনে কাজ করেন, তাঁরা বলেন, “এই হাসপাতাল ঘুঘুর বাসা।”
গত ১৪ নভেম্বর ঘণ্টা পাঁচেক ধরে বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে দেখেন স্বাস্থ্য অধিকর্তা। দেখা যায়, সুপারিন্টেন্ডেন্ট অফিস থেকে চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ, রেডিওলজিস্ট থেকে শুরু করে স্ত্রী-রোগ বিশেষজ্ঞ সরকারি বিধিনিষেধ আদৌ নিয়মে বাঁধতে পারেনি অনেককেই। অনেকের নামের পাশে নিজেই ‘অনুপস্থিত’ লিখে দেন শ্যামাপদবাবু।
অভিযোগ, চিকিৎসকেরা নিয়মিত নির্দিষ্ট সময়ে ওয়ার্ডে রোগী দেখেন না। দেখলেও ‘বুড়ি ছুঁয়ে’ চলে যান। রোগীর বাড়ির লোকের সঙ্গে কথা বলেন না তাঁরা। সেই দায়িত্ব বর্তায় নার্সদের উপরে। নার্সদের দাবি, চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণ বা পরামর্শ সব সময় তাঁদের পক্ষে ভাল ভাবে বোঝানো সম্ভব হয় না। এতে তাঁদের সঙ্গেই ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হয় বাড়ির লোকের। অভিযোগ সব থেকে বেশি স্ত্রী-রোগ বিশেষজ্ঞদের বিরুদ্ধে। এক স্ত্রী-রোগ বিশেষজ্ঞ এখনও হাসপাতালে মজুদ ওষুধ বাইরে থেকে কিনে আনতে বলছেন বলে অভিযোগ। বাইরে থেকে রোগ নির্ণয় পরীক্ষা করানো এবং রোগীকে চেম্বারে দেখানোর ‘পরামর্শ’ দেওয়ার মতো পুরনো ‘অভ্যাস’ও বন্ধ হয়নি। কয়েক দিন আগে সুপারের কাছে স্মারকলিপি দেন নার্সরা। পরিকাঠামোর পাশাপাশি চিকিৎসক-সহ অন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের কাজের পদ্ধতি নিয়ে তাঁরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বিভিন্ন ওয়ার্ডে ‘অন্যায় ভাবে রোগীদের থেকে টাকা আদায় করা হয়’ বলে তাঁদের অভিযোগ। সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে হাসপাতাল সুপার জয়ন্ত সান্যাল বলেন, “কিছু সমস্যা আছে। সব সমস্যা কাটানোর চেষ্টা করছি। পরিকাঠামোগত অসুবিধার কথাও নিয়মিত ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়।”
গত ১১ নভেম্বরের ঘটনার ক্ষেত্রেও আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পুলিশ তাকিয়ে আছে স্বাস্থ্য দফতরের রিপোর্টের উপর। ঘটনার পরে সাত দিন কেটে গিয়েছে। অথচ, সেই রিপোর্ট এখনও পাঠায়নি স্বাস্থ্য দফতর। |