জেলা জুড়ে সরকারি হাসপাতালগুলিতে এক্স রে প্লেটের আকালে বিপর্যস্ত রোগীরা। দু’একটি হাসপাতালে যদিও বা এক্স রে প্লেট রয়েছে, প্রয়োজনের তুলনায় এতই কম যে, তা দিয়ে খুব জরুরি কাজ ছাড়া কিছু করাই যায় না। কোনও হাসপাতালে এক্স রে যন্ত্রই নেই। আবার কোনও কোনও হাসপাতালে এক্স রে যন্ত্র থাকলেও তা চালাতে জানেন এমন কোনও লোক নেই। অনেক হাসপাতালে আবার অর্থোপেডিক সার্জেন নেই। তাই এই ধরনের বহু রোগীরই গন্তব্য হচ্ছে জেলা হাসপাতাল। সামান্য কারণে তাই রোগীদের দিনের পর দিন নাজেহাল হতে হচ্ছে।
জেলা হাসপাতালে নানা কারণেই দিনের পর দিন জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে রোগীদের ‘রেফার’ করার ফলে চাপ এমনিতেই বেশি। কিন্তু তার মধ্যে অস্থিরোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে সেই চাপ আরও বাড়ছে। তার মধ্যে খাস কৃষ্ণনগরের শক্তিনগর জেলা হাসপাতালের সুপার কাজল মণ্ডল বলেন, “দীর্ঘদিন জেলা হাসপাতালের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা কেন্দ্রে এক্স রে প্লেটের অভাবে আমরা এক্স রে করতে পারিনি। জরুরি প্রয়োজনে রোগীরা তখন বাইরে থেকে এক্স রে করে নিয়ে আসছিলেন। এখন রোগী কল্যাণ সমিতির টাকায় খোলা বাজার থেকে কিছু এক্স রে প্লেট কিনে কোনও মতে কাজ চালাচ্ছি। আশা করছি, দ্রুত সমাধান হবে।”
কাজলবাবুর বক্তব্য, “দিনের পর দিন নানা কারণে অন্য হাসপাতাল থেকে রোগীদের আমাদের হাসপাতালে ‘রেফার’ করে দেওয়া হচ্ছে। ফলে আমাদের উপরে বিরাট চাপ তৈরি হচ্ছে। আমাদের পরিকাঠামো আরও বাড়ানো দরকার।” তবে একই কথা বলেন ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও গ্রামীণ হাসপাতালগুলিও। তাদের কর্তাদেরও বক্তব্য, পরিকাঠামোর অভাবেই বাধ্য হয়ে রোগীদের ‘রেফার’ করে দিতে হচ্ছে। চাপড়া গ্রামীণ হাসপাতালে এক্স রে যন্ত্র থাকলেও বছর দু’য়েক ধরে কোনও প্রযুক্তিবিদ নেই, যিনি সেই যন্ত্র চালাতে পারবেন। আবার বেথুয়াডহরি গ্রামীণ হাসপাতালে যন্ত্র রয়েছে, তা চালানোর উপযুক্ত ব্যক্তিও রয়েছেন, কিন্তু ওই হাসপাতালে কোনও অস্থি বিশেষজ্ঞ নেই। তাই রোগীরা সেখানেও কোনও চিকিৎসা পান না। তাঁদের যেতে হয় জেলা হাসপাতালে। হাসপাতালের সুপার জীবেশ মাইতি বলেন, “আমরা কেবল এক্স রে করে দেখতে পারি যে, রোগীর ঠিক কী হয়েছে। কিন্তু যদি হাড়ে চোট থাকে, তা হলে জেলা হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা ছাড়া আমাদের আর কোনও উপায় নেই। তার উপরে প্লেটের অভাবও বাড়ছে।”
বগুলা গ্রামীণ হাসপাতালে এক্স রে যন্ত্রটি খারাপ হয়ে পড়ে রয়েছে। সুপার তুষার বিশ্বাস বলেন, “এক্স রে যন্ত্রটি খারাপ হয়ে পড়ে রয়েছে। তবে যখন তা ঠিকঠাক কাজ করছিল, তখনও কোনও লাভ হচ্ছিল না। কারণ আমাদের তো কোনও অস্থি বিশেষজ্ঞ নেই।” দীর্ঘদিন ধরে এক্স রে প্লেট নেই কৃষ্ণগঞ্জ গ্রামীণ হাসপাতালেও। ফলে সেখানেও রোগীরা বিপাকে পড়ছেন। রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালের মতো গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতালেও বড় এক্স রে প্লেট নেই। শান্তিপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতালের সুপার সমরজিৎ অধিকারী বলেন, “এক্স রে প্লেট প্রায়ই থাকে না। যখন তা থাকে, তখনও তা পরিমাণে খুবই কম।” করিমপুর গ্রামীণ হাসপাতালে সামান্য কিছু এক্স রে প্লেট থাকলেও তা চালানোর মতো কর্মী এই মুহূর্তে নেই। মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অমিত হালদার বলেন, “এক্স রে প্লেটের অভাব শুধু আমাদের জেলাতেই নয়। গোটা রাজ্যেই একই অবস্থা। যে দু’টো সংস্থা প্লেট সরবরাহ করত, তারা তা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। তাই সমস্যা তৈরি হয়েছে।” তিনি বলেন, “তবে আমাদের জেলায় কিছু কর্মী ও অস্থি বিশেষজ্ঞের অভাবে কোনও কোনও হাসপাতালে সমস্যা হয়েছে। আমরা এই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি।” |