অভাবে অর্ধাহারে আদিবাসীরা
ঢোবে সোরেন: বয়স পঞ্চাশ ছাড়িয়েছে। অস্থিচর্ম সার শরীর। উঠে দাঁড়াবেন এমন ক্ষমতাও নেই। স্ত্রী বুদিন ঘাস বিক্রি করে যে রোজগার করেন তা দিয়ে তিন ছেলেমেয়ে সহ পাঁচ জনের ভাত জোটে। সপ্তাহের অর্ধেক দিন উপোসে কাটানো ওদের অভ্যাস। ভিটের জমিটুকু সম্বল। দরমার বেড়া দেওয়া ভাঙাচোরা ঘর।

বনি খেড়িয়া: বিধবা। এক ছেলে শুকরাকে নিয়ে অভাবের সংসার। নদী থেকে পাথর তুলে যে রোজগার হয় তা দিয়ে মা-ছেলের এক বেলা খাবার জুটলেও অন্য বেলা উপোসে কাটে।

সাবিত্রী তির্কি: বয়স ৬০ ছুঁয়েছে। স্বামী মানসিক ভারসাম্যহীন। শরীর না চললেও দিন মজুরি খেটে রোজগারের চষ্টা করেন বৃদ্ধা। কিন্তু পারছেন কোথায়! ভাঙাচোরা ঘরের দাওয়ায় বসে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

এঁরা সকলেই ডুয়ার্সের শামুকতলা গ্রাম পঞ্চায়েতের আদিবাসী মহল্লা গারোখুটার বাসিন্দা। অভাব নিত্যসঙ্গী। অথচ গ্রাম পঞ্চায়েতের বিপিএল তালিকায় কারও নাম নেই। সরকারি কোনও সুযোগ বরাতে মেলেনি। ওঁরা নিজেরাও জানেন না ইন্দিরা আবাস যোজনার কথা। কেউ খোঁজ রাখেন না বার্ধক্য ভাতা অথবা কৃষি ভাতার। অভিযোগ, পঞ্চায়েত-প্রশাসনের কাছে বহুবার আর্জি জানালেও আশ্বাস ছাড়া কিছুই জোটেনি ওঁদের কারও। শুধু ঢোবে, বনি বা সাবিত্রী নয়। গোটা গারোখুটা গ্রাম জুড়ে একই ছবি। অভাবের অন্ধকারে তলিয়ে থাকা মানুষেরা কেউ বিপিএল নয়। গ্রাম পঞ্চায়েত কর্তারা ওঁদের এপিএল অর্থাৎ স্বচ্ছল পরিবারের তালিকা ভুক্ত করে রেখেছেন। সরকারি তালিকায় এমন গরমিলের কারণে গ্রাম ও বস্তির অতি সারধারণ মানুষেরা রকমারি প্রকল্পের সুবিধা থেকে বঞ্চিত থেকেছেন। শামুকতলা গ্রাম পঞ্চায়েত সূত্রে জানা গিয়েছে, গারোখুটা গ্রামে ২৬৪টি পরিবারের বসবাস। তাঁদের মধ্যে মাত্র ৮১টি পরিবার বিপিএল তালিকাভূক্ত। অথচ এখানে ৮০ শতাংশ পরিবার ওই তালিকায় ঠাই পাওয়ার যোগ্য। গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান সুকুমার ঘোষ বলেন, “বিপিএল তালিকা নিয়ে প্রতিদিন সমস্যা হচ্ছে। এলাকার প্রচুর গরিব মানুষকে সরকারি প্রকল্পে সাহায্য করা সম্ভব হচ্ছে না। দ্রুত তালিকার সংশোধন করা প্রয়োজন।” এই সমস্যার কথা অস্বীকার করেননি প্রশাসনের কর্তারাও। আলিপুরদুয়ার ২ বিডিও সৌমেন মাইতি বলেন, “শামুকতলা এলাকার বিপিএল তালিকা নিয়ে অনেক অভিযোগ জমা পড়েছে। ওই সমস্যার সমাধানের জন্য ফের সমীক্ষা করা হবে।’’ যদিও গ্রাম পঞ্চায়েত ও প্রশাসনের কর্তাদের ওই বক্তব্য শুনে ভুক্তভোগী বাসিন্দারা প্রশ্ন তুলেছেন সমস্ত বিষয় জানার পরে এতদিনেও কেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি এবং এলাকার রাজনৈতিক দলের নেতারা কী করছিলেন? স্থানীয় অনেকেই অভিযোগ করেন, গারোখুটার মতো বস্তির বাসিন্দারা সরকারি প্রকল্পের বিষয়ে কোনও খোঁজ রাখেন না। ওই সুযোগ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলিও বিপিএল তালিকা তৈরির সময় প্রকৃত গরিবের নাম কেটে স্বচ্ছল পরিবারের লোকজনের নাম ঢুকিয়ে ‘দলবাজি’ করে চলেছে। ফলাফল যা হওয়ার সেটাই হয়েছে। স্থানীয় সিপিএম নেতৃত্ব রাজ্যে ক্ষমতাসীন থাকাকালীন ওই ইস্যুতে আন্দোলনের কথা ভাবতে না পারলেও সামনে পঞ্চায়েত ভোটের কথা মাথায় রেখে এখন রাস্তায় নামার হুমকি দিয়েছেন। দলের নেতা অসীম সরকার বলেন, “ত্রুটিমুক্ত বিপিএল তালিকা তৈরির দাবিতে আন্দোলনে নামব।” একই ভাবে আন্দোলনের কথা ভাবছে কংগ্রেস ও তৃণমূল কংগ্রেস। তৃণমূলের ব্লক সভাপতি অরুণ দাস বলেন, “ফ্রন্টের নেতারা সচেতনভাবে ভুলে ভরা বিপিএল তালিকা করেছেন। নতুন তালিকা তৈরির দাবি জানানো হয়েছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.